রক্তের ঋণ বনাম ক্ষমতার উৎসব

মিনার রশীদ
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১১
মিনার রশীদ

আয়নাঘরে আট বছর কাটিয়ে মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন ভাগ্যবান আরমান। একইভাবে, একই সময়, আয়নাঘরে কাটিয়ে ঘরে ফিরলেও, রেখে যাওয়া মাকে জীবিত পাননি ব্রিগেডিয়ার আমান আজমী। যতদিন জীবিত থাকবেন, এই কষ্ট তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। কষ্টের অনেক পরত বা স্তর রয়েছে। পরের পরত থেকে আগের পরতকে তাই ভাগ্যবান মনে হয়।

বিজ্ঞাপন

ওনারা কয়েকজন জীবিত ফিরতে পারলেও এখনো হদিস মিলেনি শ-তিনেকের ওপরে ভিক্টিমের! অর্থাৎ তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল বা কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল—সেই অন্তিমদৃশ্য স্বজনদের কাছে উন্মুক্ত হয়নি। এটি সত্যিই এক কঠিন পরিস্থিতি, স্বজনদের জন্য—যারা প্রিয় মানুষটির লাশটি দেখেনি, জানে না কোথায় সমাহিত হয়েছে! এই হতভাগাদেরই একজন বিএনপি নেতা সুমন!

আরমানের হাত চেপে ধরে সেই সুমনের মা জিজ্ঞেস করছেন, ‘বাবা, আমার সুমনরে দেখছেন? আমার সুমনরে দেখছেন? আমার সুমনরে আইন্যা দিবেন নি বাবা? আপনারা আমার সুমনরে আইন্যা দিবেন নি, আব্বা?’ ব্যারিস্টার আরমান শুধু ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন—এই অভাগা মাকে কোনো জবাব দিতে পারেননি।

সুমনের মায়ের বুকফাটা কান্নায় আমার নিজের বাবার আকুতিটি মনে পড়ে যাচ্ছে! ছেলের কাছে নিজের বেশি দুর্বলতা দেখালে আমি চলে আসব, সেই ভয়ে নিজের কষ্ট আড়াল করে রাখতেন। তারপরও মাঝে মাঝে বলে ফেলতেন, বাবারে তুই আয়না, তোকে একটু ছুঁইয়ে দেখি! আবার পরমুহূর্তেই বলতেন, থাক বাবা, ওখানেই থাক!

নিজের এই কষ্টটুকু বলতে চাই না। কারণ আমার চেয়েও শতগুণ কষ্টে কাটিয়েছেন এ রকম হাজার হাজার বাবা-মা। কিন্তু সুমনের মা কোথাও স্পর্শ করে ফেলেছেন। মনে হচ্ছে, কোথাও গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে একা একা কাঁদতে পারলে এই কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।

সন্দেহ নেই, এক-এগারোর পর থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সবচেয়ে নির্যাতিত পরিবারটি হলো জিয়া পরিবার। ম্যাডাম খালেদা জিয়া চরম নির্যাতনে পঙ্গু হওয়া বড় ছেলেকে সামনে দেখে যে বুকফাটা আর্তনাদ করেছিলেন, তা ভুলে যাওয়া সত্যিই কঠিন ঠেকছে! তারপর স্বামী-সন্তানের চল্লিশ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকেও এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়! অকালে বিধবা হওয়া একজন নারীর জন্য এর চেয়ে কষ্টের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এরপর সরকারের চরম মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে বিদেশ বিভুঁইয়ে চিরতরে চলে গেলেন নিজের ছোট সন্তান! এরপর শুরু হলো নিজের বন্দি জীবন! যেখানে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।

একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর টপ পাঁচজন এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়, যা ছিল স্রেফ জুডিশিয়াল কিলিং! জামায়াতের আরো দুজন বর্ষীয়ান নেতা কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে শহীদ হয়েছেন।

কয়েক দিন ধরে সুমনের মায়ের আর্তনাদের সঙ্গে আমার বাবার আকুতিটি যেন মন থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরাতে পারছি না! এর মধ্যেই দৃষ্টিতে পড়ল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীর একটি মন্তব্য! তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া এই নির্বাচন ইতিহাসের সর্ব নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে গণ্য হবে।

ফ্যাসিবাদের জঘন্যতম দোসর এই ভদ্রলোকের স্পর্ধা দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি! মাঝে মাঝে মনে হয়, এরা দুই পা-বিশিষ্ট জানোয়ার ছাড়া অন্য কিছু নয়। ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এ এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত নির্বাচন করেছে, তখন এই অমানুষটির কাছে খারাপ নির্বাচন মনে হয়নি! ২০১৪ সালে সুজাতা সিং এসে যখন এরশাদকে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে চাপ দিয়েছিলেন, তখন এটিকে এই পাটোয়ারীর কাছে অস্বাভাবিক লাগেনি, কারণ তারা দুটি দেশকে একটি দেশ হিসেবেই গণ্য করেন।

তখন ১৫৩ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন, গণতন্ত্রের ইতিহাসে তখন তা কলঙ্ক বলে গণ্য হয়নি! আবার ২০১৮ সালে যখন দিনের ভোট রাতে কাটা হলো, তখন তা কলঙ্কজনক ঠেকেনি। ২০২৪ সালে যখন আমি আর ডামির নির্বাচন করা হলো, তখন তা এই পাটোয়ারীর কাছে কলঙ্ক বলে ঠেকেনি। তখন এসব নির্বাচন নিয়ে এই পাটোয়ারী কোনো কথা বলেনি!

হিটলারের পতনের আশি বছর পার হলেও এখনো হিটলারের পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা কেউ তুলতে সাহস করে না। আর ৫ আগস্টের পর এক বছর পার না হতেও হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধীদের দলকে নির্বাচনে নেওয়ার ওকালতি করে এই অমানুষের দল। এই সাহসটি তারা কেন পাচ্ছে—সেই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। সব রক্তের ঋণ এবং সুমনদের মায়েদের চোখের পানি ভুলে যাওয়াতেই আমরা ক্ষমতার উৎসবে মেতে পড়েছি।

জুলাইয়ের যে সূর্যোদয় এদেশের ইতিহাসকে নতুন করে লিখেছিল, আজ সেটি যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে কিছু সুবিধাভোগীর ছায়ায় অথবা আমাদের সামষ্টিক গাফিলতি বা ভুলের কারণে! যে বিপ্লব ছিল সাধারণ মানুষের রক্ত, অশ্রু ও আত্মত্যাগের ফসল—তা আজ অনেকের কাছে পরিণত হয়েছে ‘গনিমতের মাল’।

আমার মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে ইসলামের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি মনে করছি। কারণ আংশিক বিজয়কে পূর্ণ বিজয় হিসেবে ধরে নেওয়ার বিপদটি সম্পর্কে একটি অতি জরুরি লেসন রয়েছে।

মুসলমানদের প্রথম পরাজয় ঘটে উহুদের যুদ্ধে (গাজওয়াতুল উহুদ)। এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয় হিজরি তৃতীয় সনে (৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে) মদিনার উত্তরদিকে উহুদ পর্বতের পাদদেশে।

যুদ্ধের পটভূমি : বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের প্রতিশোধ নিতে মক্কার কুরাইশরা প্রায় ৩,০০০ সৈন্য নিয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় ৭০০ সাহাবিকে নিয়ে তাদের মোকাবিলায় বের হন।

পরাজয়ের মূল কারণ : প্রথমদিকে মুসলমানরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু এক গুরুত্বপূর্ণ কারণে যুদ্ধের ভাগ্য বদলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৫০ জন তিরন্দাজকে ‘উহুদের পাহাড়ে’ অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন এবং বলেন, ‘যতক্ষণ না আমি তোমাদের ফিরতে বলি, তোমরা স্থান ছাড়বে না—বিজয় বা পরাজয় যাই ঘটুক।’

কিন্তু যখন মুসলমানরা বিজয় লাভ করছে, দেখে কিছু তিরন্দাজ মনে করলেন যুদ্ধ শেষ এবং তারা গনিমতের মাল সংগ্রহ করতে নিচে নেমে আসেন। ফলে পাহাড়ি পথ ফাঁকা হয়ে যায়। হালকা অশ্বারোহী বাহিনীর নেতা খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি) সেই ফাঁকা পথ দিয়ে পিছন দিক থেকে মুসলমানদের আক্রমণ করেন। এতে মুসলমানদের বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

গুজব ও বিভ্রান্তি : যুদ্ধ চলাকালে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) শহীদ হয়েছেন। এতে অনেক সাহাবি হতাশ হয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দেন।

ফল : মুসলমানরা এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবিকে হারান, যাদের মধ্যে ছিলেন রাসুল (সা.)-এর চাচা হজরত হামজা (রা.)। কুরাইশরা পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে পারেনি, তবে মুসলমানদের মনোবলে আঘাত লাগে।

ইসলামের এই ইতিহাসটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে! শয়তানে বুজুর্গের শারীরিক প্রস্থানকে চূড়ান্ত বিজয় ভেবে আমরা তৃপ্তির ঢেউ তুলছি! ফ্যাসিবাদ-উত্তর প্রতিবিপ্লবকে ঠেকানোর জন্য যে বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তার কিছুই দৃষ্টিগোচর হয়নি।

ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির এই ঐক্যের কথা আমি গোড়া থেকেই বলে আসছি! গত বছরের অক্টোবর- নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো দেশে ফিরে সব সমন্বয়ককে নিয়ে একসঙ্গে বসার পরিকল্পনাটির সঙ্গে আমিই জড়িত ছিলাম। অতিথিদের মধ্যে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, কবি ফরহাদ মজহার এবং আমি ছিলাম। তিন ছাত্র উপদেষ্টাসহ প্রায় ৬০-৭০ জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর ওটাই সম্ভবত সমন্বয়কদের প্রথম একসঙ্গে বসা। সেখানে সবাইকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলাম।

বলেছিলাম, আমাদের দেশে রাজনীতি দর্শনে (Political philosophy) কোনো জায়গা খালি নেই! অর্থাৎ ডান থেকে মধ্য ডান, বাম থেকে মধ্য বাম, সেন্ট্রিস্ট—সব বিন্দুতে একাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু যে জিনিসটি নেই, তাহলো—শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি গ্রুপ কিংবা সব রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক ট্র্যাকে রাখার মতো প্রেশার গ্রুপ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সমন্বয়করা যে অবস্থান সৃষ্টি করেছেন, তাকে আপাতত রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত না করে আরো কয়েক বছর প্রেশার গ্রুপ হিসেবে রাখলে বিপ্লবের স্পিরিটটি দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব হতো।

তবে যারা এখনই রাজনীতি করতে চান, তারা যেকোনো বড় দলে মানে বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলে যোগ দিতে পারেন। এক-দুই টার্ম পরে দেশের রাজনীতি স্থিতিশীল হলে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন! তখন এটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম, নতুন রাজনৈতিক দল খুললে বর্তমানে যারা রাজনীতির মাঠের অগ্রভাগে রয়েছেন, তারা আপনাদের চ্যালেঞ্জার হিসেবে গণ্য করবেন এবং যেকোনো উপায়ে আপনাদের উত্থান থামাতে চেষ্টা করবেন! এর ফলে যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তা সুস্থ থাকবে না। খুব দ্রুতই তা অসুস্থ হয়ে পড়বে। পরাজিত ফ্যাসিবাদ তখন এই অনৈক্যকে নিজের প্রত্যাগমনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করবে। বর্তমানে সেই সিম্পটমগুলো হুবহু দেখতে পাচ্ছি!

আপনাদের হয়তোবা স্মরণে আছে যে ১৯৯৬ সালে কীভাবে জাতির কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে এবং জামায়াতে ইসলামীর বদান্যতায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী বলয়। বলতে গেলে, তারা একটা নতুন জীবন ফিরে পায়। সেই নতুন জীবন নিয়ে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ভয়ংকর ষড়যন্ত্র করে ২০০৮ সালে আসল চেহারায় ফিরে আসে!

এসব দেখে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু আওয়ামী লীগকে নয়।

এবার মিলিয়ে দেখুন, পরেরবার ক্ষমতায় এসে প্রথমেই ৭৫-এর বীরদের ফাঁসিতে ঝোলায়। এরপর যুদ্ধাপরাধের বিচারে প্রথম ফাঁসিতে ঝোলায় কাদের মোল্লাকে, যিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক যোগাযোগে জামায়াতের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ছিলেন!

একই সুযোগ সেই কাউয়া কাদের এবং শামীম পাটোয়ারীরা আরেকবার পেলে ফল ভিন্ন হবে না। তখন হয়তোবা হাসনাত আবদুল্লাহ কিংবা সারজিসের মতো নেতাকে মিস পুতুল বা অন্য কেউ জেলখানায় ঢুকে মেজর বজলুল হুদার মতো নিজ হাতে জবাই করবেন। পুলিশ হত্যার দায়ে বিএনপি-জামায়াতের কয়েক শ নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।

আর সেই বিভীষিকাময় আওয়ামী জাহিলিয়াতকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই শামীম পাটোয়ারীরা। অথচ আওয়ামী লীগের পতনের পর পাঁচ লাখ মানুষ মারা যাবে বলে এই পাটোয়ারী-কাউয়ারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। এদেশের মানুষের রক্তে বা বিশ্বাসের গভীরে কিছু জিনিস প্রোথিত রয়েছে! কিছু কাহিনি তাদের জানানো হয়েছে। সে রকম এক কাহিনি হজরত আলী (রা.)কে নিয়ে। হজরত আলী (রা.) এক শত্রুসেনাকে দৌড়ে গিয়ে হত্যার উদ্যোগ নেন। তখন ওই লোকটি হজরত আলী (রা.)-এর চোখে-মুখে থুতু নিক্ষেপ করেন। সেই ক্রুশিয়াল মুহূর্তে আলী (রা.)-এর মনে এই ভাবনার উদয় হলো—এই মুহূর্তে আমি যদি একে হত্যা করি , সেটা হবে আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে, আদর্শিক কারণে নয়। হাতের নাগালে পেয়েও তখন চরম সেই শত্রুকে ছেড়ে দিলেন।

কাজেই জাতীয় মানসে আমাদের প্রতিশোধস্পৃহার মেকানিজমটি একটা নৈতিক বাঁধনে আটকা রয়েছে। রাসুল (সা.) সতর্ক করে দিয়েছেন, তার উম্মতের কেউ যদি কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করে, তবে তিনি হাশরের ময়দানে সেই মজলুমের পক্ষে দাঁড়াবেন।

তাই এদেশের ধর্মীয় দলগুলোও তাদের কাউন্টারপার্ট বিজেপির মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লাথি মেরে ইন্ডিয়ায় তাড়ানোর কথা কখনোই উচ্চারণ করে না। কোনো অপরাধী যত বড় অপরাধ করুক না কেন—তার প্রতি সুবিচার করার হুঁশটি চরম ক্রোধের মুহূর্তেও স্মরণ রাখাই ইসলামের নির্দেশ । হিউম্যান ডিগনিটির অকৃত্রিম ধারণাটি বাই-ডিফল্ট, তাই আমাদের ডিএনএতে লেপ্টে রয়েছে! যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে এটাকেই আরো শানিত ও পরিস্ফুটিত করতে হবে। কুকুর মানুষের পায়ে কামড়িয়েছে বলে কুকুরকে একই কায়দায় কামড়ানো মানুষের পক্ষে শোভা পায় না।

এই স্পিরিটে উজ্জীবিত হয়ে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী জাহিলিয়াতকে প্রতিহত করতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল ক্ষমতার উৎসবে গা ভাসালেও একটা জাতীয় কনসেনসাস অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থাকবে। সেই বল মনে ধারণ করেই ড. মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা আর কোনো দিন ফিরতে পারবে না। রাজনৈতিক শক্তিটি ব্যর্থ হলেও উপরোক্ত বোধ-বিশ্বাসে প্রোথিত সামাজিক এই শক্তিটি জেগে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।

লেখক : কলামিস্ট

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত