অধ্যাপক ড. হাসনান আহমেদ
‘দেশে চোরাগোপ্তা হামলার নীলনকশা’ শিরোনামে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস তার কয়েকজন উপদেষ্টা, ভিকটিম ও সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করে বিষয়টিকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন।
আয়নাঘরে বছরের পর বছর ধরে আটকে রেখে নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যার ঘটনাগুলো দীর্ঘদিন পরে হলেও জনসম্মুখে আসছে। এই নরপিশাচদের দুঃশাসনের অবসান হলেও গত কয়েক মাসে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও তার এদেশীয় গোলামেরা মিলেমিশে এসব অপকর্ম করেছে এবং ভবিষ্যতেও যে তারা এদেশকে সহজে নিষ্কৃতি দেবে না, তা তাদের নীলনকশা থেকেই বোঝা যায়।
মনে রাখতে হবে, ভারত একেবারে উদার মনে ’৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তাদের মনে ছিল দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা দুরভিসন্ধি। একটু একটু করে তা তাদের তাঁবেদারদের মাধ্যমে আদায় করে নিতে চায় এবং দিনে দিনে তা প্রকাশ পাচ্ছে।
সামনে দিন আরো বাকি। এখনই আমাদের বোধোদয় হওয়ার উপযুক্ত সময়। আমরা যারা শুধু আগামী গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে সব সমস্যার সমাধান খুঁজে ফিরছি, তাদের এটা বোঝা উচিত যে, বিষয়টা আসলে সে-রকম নয়, এত সহজ-সরলও নয়। সে আশা বালির বাঁধ হতে বেশি সময় লাগবে না।
জুলাই, চব্বিশের অর্ধ-সমাপ্ত বিপ্লব পার্শ্ববর্তী দেশের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে নিশ্চিত। ’৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা; কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে দেখেছিল তাদের একটা অঙ্গরাজ্য হিসেবে। আর আওয়ামী লীগকে বেছে নিয়েছিল তাদের সেবাদাস হিসেবে।
সে কারণেই আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ করে দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে দীর্ঘবছর ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে এবং লুটপাট করে পালিয়ে দলবলসহ নিরাপদে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের পোষা গোলামরা সেদেশে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা তৈরি করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যক্রম ও সংস্কারের দফাগুলোকে আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। রোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপত্র হওয়া উচিত। ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দলের দুর্নীতির মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংস্কার কীভাবে করে এটা রোধ করা যাবে, তার উপায় বের করতে হবে। আমরা বিষয়টাকে কতটুকু বিবেচনায় রাখছি, তা ভাবার বিষয়।
আমাদের সামাজিক অবস্থা, বসবাসরত মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে সংস্কার করা হচ্ছে না বলে আমার বিশ্বাস। সেজন্য অধিকাংশ সংস্কার উদ্যোগ কতটুকু কাজে আসবে, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দল, সাংবিধানিক সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর বাস্তবায়ন করার সুপারিশ এমন হওয়া উচিত, যা নতুন বাংলাদেশে গড়তে সহায়ক হবে। শিক্ষা-সংক্রান্ত সংস্কার কমিটির সুপারিশে নতুন কিছু নেই।
শেখ মুজিবের পতনের পর কাদের সিদ্দিকী ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। কিন্তু তার সেই অপতৎপরতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এবারো ভারতে আশ্রয় নিয়ে দেশটির প্রশ্রয়ে যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সেই স্বপ্ন কোনোদিন বাস্তবে রূপ নেবে না। তাদেরও কাদের সিদ্দিকীর মতো নাকে খত দিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে হবে একসময়।
আমরা ভারত দখল করতে চাই না, চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করতে। এজন্য ভারতকে আধিপত্যবাদী মানসিকতা পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মতো খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে ক্ষতি করতে গেলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়।
ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ভালো নয়। যেসব দল ভারতের গোলামি করার বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা করে কেবল সেসব দলের নেতাদের সঙ্গেই ভারতের ভালো সম্পর্ক থাকবে। সম্প্রসারণবাদী ও হিন্দত্ববাদী চিন্তার ধারক-বাহক নরেন্দ্র মোদি সরকার তাদের বর্তমান নীতি থেকে বের হয়ে না এলে প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো থাকার সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে কংগ্রেসসহ ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও হুঁশ ফেরা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীন ঠেকাও’ নীতির কারণে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত জোট গড়ে তুলেছে ওয়াশিংটন। এ কারণেই তারা ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে আসছে। আমাদের দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতারা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ভারত-তোষণ নীতি অনুসরণ করে। ভারত এদেশকে ‘জঙ্গিদের আস্তানা’, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ প্রভৃতি বিষয়ে অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পশ্চিমা কান ভারী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রভাবের কারণে ভারত সুবিধা করতে পারছে না। এ বিষয়টি আমাদের দেশের ভারতপ্রেমী লোকজনের বুঝতে পারা উচিত। ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে এদেশের সব রাজনৈতিক দলেরও রুখে দাঁড়ানো উচিত দেশপ্রেমের চিন্তা-চেতনা থেকে।
জাতীয়তাবাদী চিন্তা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও উন্নয়নের দফাভিত্তিক আত্মমর্যাদাশীল রাজনীতি শুরু হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। সে অবস্থান থেকে দলটি সরে যেতে চাইলে দেশ ও দলের নিঃসন্দেহে ক্ষতি হবে। এ বোধোদয় দলটির হওয়া জরুরি। এজন্য দলটিকে তথাকথিত প্রগতিবাদের ধারণার লালন ও চর্চা থেকে ফিরে আসতে হবে। এ সংকটময় মুহূর্তে এ বড় দলটিই পারে সব ভেদাভেদ ভুলে অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে জনগণের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় যুক্ত হতে।
আমরা জানি, এদেশের রাজনীতির উর্বর মাঠে হরিলুটের ব্যবসা, প্রতিটা পদে দুর্নীতি, সীমাহীন ঘুষ-চাঁদাবাজি, প্রতিহিংসা-দ্বন্দ্ব ও মিথ্যাচারের উম্মুক্ত চাষ হয়। দেশ বাঁচাতে গেলে দেশ সংস্কারকদের যেমন এ বিষয়টা বিবেচনায় রেখে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, আবার প্রতিটা দলকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকা নেতা-কর্মী থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে। তাদের উজ্জীবিত করতে হবে দেশপ্রেমের চেতনায়। এজন্য প্রতিটা দলের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। সেটা না করতে পারলে হাজারো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।
লেখক : সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ
‘দেশে চোরাগোপ্তা হামলার নীলনকশা’ শিরোনামে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস তার কয়েকজন উপদেষ্টা, ভিকটিম ও সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করে বিষয়টিকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন।
আয়নাঘরে বছরের পর বছর ধরে আটকে রেখে নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যার ঘটনাগুলো দীর্ঘদিন পরে হলেও জনসম্মুখে আসছে। এই নরপিশাচদের দুঃশাসনের অবসান হলেও গত কয়েক মাসে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও তার এদেশীয় গোলামেরা মিলেমিশে এসব অপকর্ম করেছে এবং ভবিষ্যতেও যে তারা এদেশকে সহজে নিষ্কৃতি দেবে না, তা তাদের নীলনকশা থেকেই বোঝা যায়।
মনে রাখতে হবে, ভারত একেবারে উদার মনে ’৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। তাদের মনে ছিল দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা দুরভিসন্ধি। একটু একটু করে তা তাদের তাঁবেদারদের মাধ্যমে আদায় করে নিতে চায় এবং দিনে দিনে তা প্রকাশ পাচ্ছে।
সামনে দিন আরো বাকি। এখনই আমাদের বোধোদয় হওয়ার উপযুক্ত সময়। আমরা যারা শুধু আগামী গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে সব সমস্যার সমাধান খুঁজে ফিরছি, তাদের এটা বোঝা উচিত যে, বিষয়টা আসলে সে-রকম নয়, এত সহজ-সরলও নয়। সে আশা বালির বাঁধ হতে বেশি সময় লাগবে না।
জুলাই, চব্বিশের অর্ধ-সমাপ্ত বিপ্লব পার্শ্ববর্তী দেশের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে নিশ্চিত। ’৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা; কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে দেখেছিল তাদের একটা অঙ্গরাজ্য হিসেবে। আর আওয়ামী লীগকে বেছে নিয়েছিল তাদের সেবাদাস হিসেবে।
সে কারণেই আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ করে দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে দীর্ঘবছর ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে এবং লুটপাট করে পালিয়ে দলবলসহ নিরাপদে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের পোষা গোলামরা সেদেশে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা তৈরি করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যক্রম ও সংস্কারের দফাগুলোকে আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। রোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপত্র হওয়া উচিত। ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দলের দুর্নীতির মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সংস্কার কীভাবে করে এটা রোধ করা যাবে, তার উপায় বের করতে হবে। আমরা বিষয়টাকে কতটুকু বিবেচনায় রাখছি, তা ভাবার বিষয়।
আমাদের সামাজিক অবস্থা, বসবাসরত মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে সংস্কার করা হচ্ছে না বলে আমার বিশ্বাস। সেজন্য অধিকাংশ সংস্কার উদ্যোগ কতটুকু কাজে আসবে, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দল, সাংবিধানিক সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর বাস্তবায়ন করার সুপারিশ এমন হওয়া উচিত, যা নতুন বাংলাদেশে গড়তে সহায়ক হবে। শিক্ষা-সংক্রান্ত সংস্কার কমিটির সুপারিশে নতুন কিছু নেই।
শেখ মুজিবের পতনের পর কাদের সিদ্দিকী ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। কিন্তু তার সেই অপতৎপরতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এবারো ভারতে আশ্রয় নিয়ে দেশটির প্রশ্রয়ে যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সেই স্বপ্ন কোনোদিন বাস্তবে রূপ নেবে না। তাদেরও কাদের সিদ্দিকীর মতো নাকে খত দিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে হবে একসময়।
আমরা ভারত দখল করতে চাই না, চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করতে। এজন্য ভারতকে আধিপত্যবাদী মানসিকতা পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মতো খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে ক্ষতি করতে গেলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়।
ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ভালো নয়। যেসব দল ভারতের গোলামি করার বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা করে কেবল সেসব দলের নেতাদের সঙ্গেই ভারতের ভালো সম্পর্ক থাকবে। সম্প্রসারণবাদী ও হিন্দত্ববাদী চিন্তার ধারক-বাহক নরেন্দ্র মোদি সরকার তাদের বর্তমান নীতি থেকে বের হয়ে না এলে প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো থাকার সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে কংগ্রেসসহ ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও হুঁশ ফেরা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীন ঠেকাও’ নীতির কারণে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত জোট গড়ে তুলেছে ওয়াশিংটন। এ কারণেই তারা ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখে আসছে। আমাদের দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতারা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ভারত-তোষণ নীতি অনুসরণ করে। ভারত এদেশকে ‘জঙ্গিদের আস্তানা’, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ প্রভৃতি বিষয়ে অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পশ্চিমা কান ভারী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রভাবের কারণে ভারত সুবিধা করতে পারছে না। এ বিষয়টি আমাদের দেশের ভারতপ্রেমী লোকজনের বুঝতে পারা উচিত। ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে এদেশের সব রাজনৈতিক দলেরও রুখে দাঁড়ানো উচিত দেশপ্রেমের চিন্তা-চেতনা থেকে।
জাতীয়তাবাদী চিন্তা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও উন্নয়নের দফাভিত্তিক আত্মমর্যাদাশীল রাজনীতি শুরু হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। সে অবস্থান থেকে দলটি সরে যেতে চাইলে দেশ ও দলের নিঃসন্দেহে ক্ষতি হবে। এ বোধোদয় দলটির হওয়া জরুরি। এজন্য দলটিকে তথাকথিত প্রগতিবাদের ধারণার লালন ও চর্চা থেকে ফিরে আসতে হবে। এ সংকটময় মুহূর্তে এ বড় দলটিই পারে সব ভেদাভেদ ভুলে অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে জনগণের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় যুক্ত হতে।
আমরা জানি, এদেশের রাজনীতির উর্বর মাঠে হরিলুটের ব্যবসা, প্রতিটা পদে দুর্নীতি, সীমাহীন ঘুষ-চাঁদাবাজি, প্রতিহিংসা-দ্বন্দ্ব ও মিথ্যাচারের উম্মুক্ত চাষ হয়। দেশ বাঁচাতে গেলে দেশ সংস্কারকদের যেমন এ বিষয়টা বিবেচনায় রেখে বেশি প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, আবার প্রতিটা দলকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকা নেতা-কর্মী থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে। তাদের উজ্জীবিত করতে হবে দেশপ্রেমের চেতনায়। এজন্য প্রতিটা দলের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। সেটা না করতে পারলে হাজারো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।
লেখক : সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে