আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ইনকিলাব মঞ্চ ও ইতিহাসের দায়

মিনার রশীদ

ইনকিলাব মঞ্চ ও ইতিহাসের দায়
মিনার রশীদ

দেশে বেকারের সংখ্যা আর রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা কাছাকাছি বলেই অনুমিত হচ্ছে। একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য লাখ লাখ নেতাকর্মীর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কিছু নীতিবান, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতিক। রাজনীতি এখানে সেবার ক্ষেত্র না হয়ে অনেকের জন্য বিকল্প পেশায় পরিণত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্র দুর্বল হচ্ছে আর শক্তিশালী হচ্ছে দলীয় বলয়ের ভেতরে থাকা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী।

বিশ্বের যে দেশগুলোয় গণতন্ত্র টেকসই হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দল যতটা শক্তিশালী, তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, গবেষক ও পেশাজীবীরা দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকেও রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারা ক্ষমতায় নেই, কিন্তু ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেন প্রশ্নের মাধ্যমে, জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবেই সিভিল সোসাইটিকে দুর্বল করা হয়েছে। যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের ‘দেশদ্রোহী’ কিংবা ‘অমুক-তমুক দলের এজেন্ট’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ প্রশ্নহীন সমাজে ক্ষমতা থাকে বেপরোয়া। ফলে পেশাদার কর্মীরা রাজনীতির মাঠ দখল করে নেয়। যাদের দাপট ও পরিচয় আদর্শে নয়, আনুগত্যে। এ দেশে এখন আদর্শের রাজনীতি কমে গেছে, বেড়ে গেছে ‘অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের’ রাজনীতি! আর এসব ভাইয়ের মূল রাজনৈতিক এসেট বিপুলসংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠী! এদের কেউ কেউ ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে পড়ছে স্বয়ং দলটির জন্য।

আজ প্রশাসন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবখানেই দলীয় প্রভাব দৃশ্যমান। এর দায় শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, একটি স্বাধীন সিভিল সোসাইটির অনুপস্থিতিও এর জন্য দায়ী।। রাজনীতি রাষ্ট্র চালাবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্রের নৈতিক দিকনির্দেশনা দেবে সিভিল সোসাইটি—এই ভারসাম্যের অভাবেই আমাদের গণতন্ত্র ও রাষ্ট্র শুকিয়ে মরছে।

বাংলাদেশকে সামনে এগোতে হলে আরো রাজনৈতিক কর্মী নয়, প্রয়োজন আরো অনেক সচেতন নাগরিকের, যারা কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলবে। তার জন্য প্রয়োজন এমন এক সিভিল সোসাইটি, যারা রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি করবে না, বরং ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে। এভাবে রাজনীতির পরিসর সীমিত না হলে রাষ্ট্রচিন্তা কখনোই সর্বজনীন হবে না।

গত ৫০ বছরে এখানে কোনো সত্যিকার সিভিল সোসাইটি সৃষ্টি হতে দেওয়া হয়নি! এর পরিবর্তে সিভিল সোসাইটি নাম দিয়ে অদ্ভুত এক ‘জোকার-সোসাইটি’ সৃষ্টি করা হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে এক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গোলামির শৃঙ্খলে আটকে ফেলে! আর বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ভাষায়, দেশটিকে তুলে দিয়েছে বাজিকরদের হাতে!

৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর মনে হয়েছিল আমরা বোধহয় এই অদৃশ্য বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে গেছি। এখন মনে হচ্ছে, যেন নতুনভাবে এই বাঁধনে আটকা পড়ে যাচ্ছি! দেশ ও জাতির শত্রুরা আমাদের নতুনভাবে আটকে ফেলছে!

৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক বিন্যাশে আবার ইসলামপন্থি এবং জাতীয়তাবাদী এ রকম দুটি রাজনৈতিক মেরূকরণ ঘটে গেছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এই মেরূকরণ অত্যন্ত স্বাভাবিক!

তবে নতুন রাজনৈতিক বিন্যাশে বিএনপি এবং জামায়াতকে ঠিকপথে রাখার জন্য যে সিভিল সোসাইটি (নাগরিক সমাজ) দরকার, সেটি তৈরি হতে দেওয়া হচ্ছে না! এখানেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে সুশীলসমাজ নামের সেই চিহ্নিত জোকার-সোসাইটি! যারাই নির্মোহ সত্য কথা বলতে চাচ্ছেন, তাদেরই একটি বিশেষ দলের গুপ্ত-কর্মী বলে বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে! ফলে পরম আকাঙ্ক্ষিত সিভিল সোসাইটির এই পিচ্ছিল প্ল্যাটফর্মটিতে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না!

ইংরেজি সিভিল সোসাইটি শব্দটির একটি মতলবি অনুবাদ করা হয়েছে ‘সুশীল সমাজ’ নামে, যার মধ্যে এলিটিজম বা ব্রাহ্মণ্যবাদের গন্ধ পাওয়া যায়। ফলে সুশীল সমাজ নাম দিয়ে জাতির সামনে গুটিকয় কুমির-ছানাকে প্রত্যেকবার হাজির করা হয়! কাজেই সিভিল সোসাইটির এই ত্রুটিপূর্ণ অনুবাদের পরিবর্তে ‘নাগরিক সমাজ’ করলে মূল শব্দটির ব্যাপ্তি অনেকটা ধারণ করতে পারবে!

Hadi

সংজ্ঞার দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখি, সিভিল সোসাইটি বলতে রাষ্ট্র, বাজার ও ব্যক্তিগত পারিবারিক পরিসরের বাইরে থাকা সেসব স্বেচ্ছাসেবী এবং সংগঠিত সামাজিক শক্তিকে বোঝায়, যেখানে নাগরিকরা একত্র হয়ে তাদের স্বার্থ, মূল্যবোধ তুলে ধরে ও উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং জনজীবনে প্রভাব বিস্তার করে। এতে সাধারণত অলাভজনক ও স্বতন্ত্র সংগঠন যেমন এনজিও, কমিউনিটি সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন, মানবাধিকার এবং ধর্মভিত্তিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকে, যারা জনস্বার্থ রক্ষা, সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখা এবং ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সমষ্টিগতভাবে কাজ করে।

৫ আগস্টের পরে আমাদের ভাবনার জগতেও একটি বিশেষ পরিবর্তন হয়। আমাদের মনোজগতের কুঠরিগুলোয় সিভিল সোসাইটির সঠিক ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেইথ বেইজড অর্গানাইজেশন হিসেবে চার্চের ফাদারদের মতো মসজিদের ইমামরাও সিভিল সোসাইটির সদস্য হতে পারেন—এটি আমাদের এলিট সুশীলদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানার মতো মনে হয়। এর মধ্যে শরীফ ওসমান হাদির নেতৃত্বাধীন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে রীতিমতো ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে!

ইনকিলাব মঞ্চ কোনো আকস্মিক আবেগের ফল নয়। এটি সময়ের প্রয়োজন থেকে জন্ম নেওয়া একটি সচেতন সিভিল সোসাইটি, যা সরাসরি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর বৈধতা ও আধিপত্যকে প্রশ্ন করেছে। এই প্রশ্নই ছিল তাদের কাছে হাদির সবচেয়ে বড় অপরাধ।

আমাদের অনেক বন্ধু ও সম্ভাব্য মিত্র তখনো ইনকিলাব মঞ্চ বা হাদির রাজনৈতিক তাৎপর্য পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেনি। কিন্তু শত্রুপক্ষ বুঝেছিল—এটি নিছক কোনো ব্যক্তি বা ঘটনা নয়, বরং একটি সংগঠিত চ্যালেঞ্জ। তাই তারা আঘাত হানে। কিন্তু এখানেই তারা তাদের মৌলিক ভুলটি করে বসে।

তারা ধরে নেয়, আন্দোলনের শক্তি কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ভুল ধারণা থেকেই তারা আবরারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফল ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

শহীদ আবরারের আত্মত্যাগ একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হয়ে থাকেনি—তা রূপ নেয় সামষ্টিক চেতনায়। জুলাই বিপ্লব ও জুলাই অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তি, সাহস ও বৈধতা এই আবরারের নামেই কেন্দ্রীভূত হয়ে ওঠে।

হাদির ক্ষেত্রেও একই ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে। হাদিকে শারীরিকভাবে অপসারণের মাধ্যমে তারা ইনকিলাব মঞ্চকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। বাস্তবে তারা ইনকিলাব মঞ্চের শক্তিকে শত থেকে হাজার গুণ বিস্তৃত করে দেয়। কারণ এই আন্দোলনের শক্তি কোনো ব্যক্তির শরীরে নয়—তা নিহিত রয়েছে আদর্শ, স্মৃতি ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়।

ইনকিলাব মঞ্চ ব্যক্তি তৈরি করে না—ইনকিলাব মঞ্চ চেতনা সৃষ্টি করে।

পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অসীম কুদরতে যদি হাদি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে, তবে তিনি আর শুধু একজন মানুষ হিসেবে ফিরে আসবেন না। তিনি ফিরে আসবেন একটি বহুস্তরীয় ইনকিলাবি বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব নিয়ে—যা শত্রুপক্ষের জন্য আগের চেয়েও অধিক সুসংগঠিত, অধিক বৈধ এবং অধিক অপ্রতিরোধ্য হবে।

আর যদি পরম করুণাময়ের কোনো বিশাল পরিকল্পনায় হাদি ফিরে না-ও আসেন, তাতেও এই চেতনা দুর্বল হবে না—বরং আরো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ এই সংগ্রাম ব্যক্তিনির্ভর নয়; এটি ন্যায়, স্মৃতি ও দায়বদ্ধতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা।

আল্লাহর পরিকল্পনার সম্মুখে শয়তানের সব পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পড়ে।

অর্ধসত্য, মিথ এবং ‘বিশেষ চেতনা’ : স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের সংখ্যার প্রশ্ন

স্বাধীনতা কোনো দলের একচেটিয়া সম্পত্তি নয় আর শহীদদের রক্ত কোনো রাজনৈতিক ন্যারেটিভের জ্বালানি হতে পারে না। অথচ দুঃখজনক সত্য হলো—স্বাধীনতার চেতনার তথাকথিত ধ্বজাধারীরা অর্ধসত্য ও মিথ্যার মিশেলে কিছু বিশেষ ‘চেতনা’ নির্মাণ করেছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস নয়, বরং বিশ্বাসের শরবতে পরিণত হয়েছে। এই শরবত জাতিকে পান করিয়ে জন্ম দেওয়া হয়েছে ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং প্রশ্নহীন আনুগত্যের সংস্কৃতি।

এসব নির্মিত মিথের অন্যতম বড় উদাহরণ হলো—১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৭১ সালে অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। গণহত্যা হয়েছে, নিপীড়ন হয়েছে—এই বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো—৩০ লাখ সংখ্যাটি কীভাবে নির্ধারিত হলো? কোথায় সেই তালিকা? কোথায় সেই সার্ভে? কোথায় সেই আর্কাইভ?

প্রশ্নহীনতার সংস্কৃতি ও একাডেমিক সংকট

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—যারা শহীদদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আবেগ প্রকাশ করেন, তাদের কাছেই শহীদদের সংখ্যা নিয়ে জেনুইন, বৈজ্ঞানিক, স্বচ্ছ কোনো জরিপ বা গবেষণার প্রস্তাব দিলেই নেমে আসে অদ্ভুত নীরবতা, প্রশ্নকারীর কপালে গালি থেকে শুরু জেল-জুলুমও জোটে!!

একটি উল্লেখযোগ্য বৈপরীত্য হলো—শহীদদের প্রতি গভীর আবেগ প্রকাশ করা হলেও তাদের সংখ্যা নিয়ে জেনুইন কোনো সার্ভে, নামভিত্তিক তালিকা বা ডেটাবেস তৈরির উদ্যোগ চেতনার সর্বোচ্চ মার্গে আরোহণ করা সরকার, সংস্থা বা ব্যক্তি গ্রহণ করেনি। ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান কিংবা ডেমোগ্রাফিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর শূন্যতা। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই সংখ্যাকে প্রশ্ন করার প্রচেষ্টা রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহীদদের সংখ্যার অতিরঞ্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।

একইভাবে তারেক রহমান যখন আওয়ামী লীগ প্রণীত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন দলের ভেতরে এবং বাইরে অস্বস্তি দেখা গেলেও জনপরিসরে সেই প্রশ্নগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এটি নির্দেশ করে যে, সমাজের ভেতরে একটি নীরব একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে অবদমিত ছিল।

শহীদদের সংখ্যা নির্ধারণ : একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়া কেন জরুরি?

ভাবতে এটা কষ্ট হয়—আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য কয়েকটা লাইন লিখে রাখতে পারলাম না। তাদের একটা সংখ্যার আড়ালে বন্দি করে রেখেছি, অনেকটা গরু-ছাগলের মতো। অথচ এই শহীদদের প্রত্যেকের একটা নাম ছিল, একটা পরিচিত ছিল, প্রত্যেকের একটা পরিবার ও একটি স্বপ্ন ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রজন্ম ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউবের সঙ্গে সাক্ষাৎ পেয়েছে! আমরা অতি সহজেই সেই প্রজন্মের স্বপ্নের কথাগুলো রেকর্ড করে রাখতে পারতাম!

কিন্তু সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে পাঁচ বা দশ বছর পর আর সেই সুযোগটি থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের সর্বশেষ প্রজন্মটি এ সময়ের মধ্যে দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারে!

একাডেমিকভাবে শহীদদের সংখ্যা নির্ধারণের উদ্দেশ্য কখনোই শহীদদের গুরুত্ব কমানো নয়। সংখ্যার অতিরঞ্জন শহীদদের সম্মান বাড়ায় না; বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করে।

আমরা পুরো জাতি যেন সেই হাবারাম সন্তানের মতো আচরণ করছি। তার বাবাকে খুন করা হয়েছে। থানার দারোগা সাহেবের কাছ থেকে আরো বেশি সহানুভূতি আদায়ের লোভে সে বলে বসে—‘দারোগা সাহেব, আমার দু-দুটি বাপকে এরা খুন করে ফেলেছে!’

এই কথা শুনে যদি পারত, লাশ হয়ে পড়ে থাকা বাপটিও ছেলের গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিত । পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার মা আর সহ্য করতে পারে না। সে ছেলের গলা চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে—‘হারামজাদা, মুখ বন্ধ কর!’

তবে বাংলা মায়ের এই হাবারামরাই বিশাল বড় বুদ্ধিজীবী সেজে বসে আছেন। এদের বুদ্ধিছাড়া নাকি আমরা অচল!

কাজেই এই সার্ভেটি করতে পারলে শহীদদের অতৃপ্ত আত্মাই শুধু তৃপ্তি পাবে না, জাতির অনেক জটিল রোগের চিকিৎসাও সম্পন্ন হয়ে যাবে! একটি আশাব্যঞ্জক সংবাদ হলো, দেশের প্রতি নিবেদিত একটি গ্রুপ এ রকম একটি সার্ভে করার পরিকল্পনা নিয়েছেন! এই টিমে রয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, আর্কাইভ ও ডেটা বিশেষজ্ঞ।

এই টিমের টার্গেট হলো আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা ড্রাফট তালিকা তৈরি করে ফেলা! এরপর পরবর্তী তিন বছর পুরো তালিকাটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে ডাউনলোড করা হবে! তখন যে কেউ এটি দেখতে পারবেন। জনগণের কাছ থেকে ফিডব্যাক আহ্বান করা হবে। কোথাও কোনো অসংগতি দেখা দিলে তা আবার অনুসন্ধান করে সংশোধন করা হবে।

এই উদ্যোগের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, মূল কপিতে সবার নামপরিচয় লেখা থাকবে! ধর্মীয় গ্রন্থ সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কারণে রৌরব নামক নরকের ভয় দেখানো হয়েছিল। আর এই কাজটি সম্পন্ন করলে এ দেশের এলিট-সুশীল সমাজও এ রকম কোনো নরকে উদ্যোক্তাদের নিক্ষেপ করতে চাইবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কাজেই ইতিহাসের অংশ হতে এই উদ্যোগটির সঙ্গে থাকুন!

লেখক : কলামিস্ট

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর

খুঁজুন