ড. মো. ফরিদ তালুকদার
১৯৭১ সালে শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে জিয়াউর রহমান বললেন, ‘উই রিভল্ট’। যুদ্ধ করলেন, দেশ স্বাধীন করে ফিরে গেলেন ব্যারাকে। পরে, যখন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো একনায়কতান্ত্রিক বাকশাল, দেশ যখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন, বাংলাদেশপন্থি রাজনীতিকে কবরস্থ করে দিল্লিপন্থি, মস্কোপন্থি ও বেইজিংপন্থি আদর্শের চরম দ্বন্দ্ব ও লড়াই চলমান, তখন জিয়া রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের প্রতি আনুগত্য, বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাষ্ট্রচিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ করে গড়ে তুললেন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শন।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ—এই শব্দটি বিশেষভাবে বোঝা দরকার। এটি কিন্তু কলকাতার ব্রাহ্মণ-জমিদারদের তৈরি করা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নয়।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ—এই দুটির মধ্যে আদর্শগত ও পরিচয়গত পার্থক্য ব্যাপক। জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দ্বারা এই ভূখণ্ডে বসবাসরত সব মানুষের ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে তাদের সম্মিলিত পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন আর তা হলো—তারা সবাই বাংলাদেশি।
এই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের কারণেই একদলীয় বাকশাল তথা মুজিববাদী দর্শনকে পরাজিত করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা এবং একজন সেনা অফিসারের গড়া দলকে অল্প সময়ে প্রবল জনপ্রিয় করে তোলা ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল। আর এই কাজটিই করেছেন রাষ্ট্রপতি জিয়া।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের প্রবর্তক ও ধারক বিএনপির ওপরের এবং মধ্যমসারির বেশ কিছু নেতার মধ্যে, একদলীয় বাকশাল তথা মুজিববাদী দর্শনের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা বাড়ছে। তবে যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খবর রাখেন, তারা মনে করেন—ওপরের এবং মধ্যমসারির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আগেও ছিল; কিন্তু তথ্যের সহজলভ্যের কারণে বিষয়টি এখন মানুষের কাছে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করে মুজিববাদের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে—এর দৃশ্যমান বহু উদাহরণ রয়েছে।
আমাদের মনে থাকার কথা, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় শাহজাহান ওমর প্রকাশ্যে মুজিববাদের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি পুরোনো জয় বাংলার লোক, নাথিং নিউ।’ এই শাহজাহান ওমর ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বেগম জিয়া তাকে তিনবার প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু এত বছর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও, তার আচরণে এটাই মনে হয় যে, তিনি কখনো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ ধারণ করেননি; বরং ধারণ করেছেন শুধু মুজিববাদ।
সম্প্রতি আলোচিত ও সমালোচিত বিএনপির আরেক নেতা ফজলুর রহমান। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে বিএনপিতে ভেড়েন। ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশও নেন। সেন্ট্রিস্ট নেশন টিভির ২৮ আগস্টের খবরে দেখা গেল, তিনি বলছেন—তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন না।
একসময় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ার পরও কীভাবে ফজলুর রহমান বেগম জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হলেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। মানুষের প্রশ্ন যিনি আলোচনায় কিংবা টকশোতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শন এবং জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও ৭৫-পরবর্তী সময়ের অবদানের প্রশংসা না করে নিরবচ্ছিন্নভাবে মুজিববাদের প্রশংসা করেন, তিনি কীভাবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হতে পারেন? যেই ২৪-এর অভ্যুত্থানে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, সেই বিপ্লব এবং ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণে বিএনপি তাকে শোকজ দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এই প্রত্যাহারকে ঘিরে রয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ তো প্রশ্নও তুলছেন—তাহলে কি বিএনপিতে মুজিববাদ এখন শক্তিশালী দর্শন?
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা সম্প্রতি বিএনপির সমালোচনাকারীদের জিহ্বা কেটে কুকুরকে খাওয়ানোর হুমকি দিয়েছেন। তার এই মন্তব্যের কারণে দল সাংগঠনিকভাবে তাকে সতর্ক করেছে কি না বা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—তিনিও আওয়ামী রাজনীতি থেকে বিএনপিতে ভেড়েন। এখানেও মানুষের প্রশ্ন আছে—তিনি কীভাবে বেগম জিয়ার মতো সবার প্রিয় ও পরিচ্ছন্ন নেত্রীর উপদেষ্টা হলেন? এই উপদেষ্টা পদের নিয়োগ কীভাবে হয়? উপদেষ্টা নিয়োগের আগে কি বেগম জিয়াকে জানানো হয়, নাকি এটি এমন একটি পদ, যা মূলত তাদের জন্য রাখা হয়, যারা অন্য কোনো পদের যোগ্য নন? শাহজাহান ওমর এবং ফজলুর রহমানের ঘটনার পর এই আশঙ্কা তো করাই যায়—একদিন হয়তো এই উপদেষ্টাও বলবেন, ‘স্যরি, আমি বিএনপি করি না, আমি জয় বাংলার লোক।’
বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক পালিয়ে গেলে কিংবা স্বৈরশাসকের পতন হলে দেশের মানুষ ওই স্বৈরশাসনের স্থাপনা, প্রতিকৃতি ও ম্যুরাল মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। উন্নত বা অনুন্নত—পশ্চিমা বিশ্বসহ সব দেশেই এটাই হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। একই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশেও। জনগণ স্বৈরশাসনের স্থাপনাগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। যারা এ কাজ করেছে, তারা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে রক্ত দিয়েছে, চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়েছে এবং বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু দেশবাসী অবাক হয়ে দেখল—বিএনপির ওপরের ও মধ্যমসারির কিছু নেতা এই বিপ্লবীদের সমালোচনা করে স্বৈরশাসনের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়াকে ‘মব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওপরের ও মধ্যমসারির এই নেতারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর আন্দোলন করেছেন এবং হালকা নিপীড়নের শিকারও হয়েছেন। তারপরও মুজিববাদের প্রতি তাদের এই স্পষ্ট অবস্থান ও ভালোবাসা দেখে মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন—তাহলে কি এরা ওপরে ওপরে বিএনপি করলেও মনে মনে মুজিববাদকেই ধারণ করেন? তাদের মুজিববাদী আদর্শ কি আরো স্পষ্ট হবে? তাদের ওপর চালানো স্বৈরশাসকের সহনীয় নিপীড়ন তাহলে কি শুধু আইওয়াশ ছিল?
ফ্যাসিস্ট শাসক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে বছরের পর বছর জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের চরিত্রহনন করেছে। এই মিথ্যার প্রভাব এখনো সমাজে রয়ে গেছে; অনেক মানুষ আজও সেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু এই মিথ্যা ও বানোয়াট চরিত্রহননমূলক অভিযোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক বয়ান তৈরি না করে, ওপরের ও মধ্যম সারির এই নেতারা মুজিববাদ এবং মুজিববাদী রাজনীতির পক্ষে নানাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এতে মানুষ আশঙ্কা করছেন—তাহলে এই নেতারাও কি একদিন বিএনপি থেকে শাজাহান ওমর হয়ে বেরিয়ে আসবেন? দলে কি তাদের মতো অনেকেই আছেন, যারা সময় এলে সক্রিয় হবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আরো স্পষ্ট হবে—মুজিববাদ বিএনপিতে আরো শক্তিশালী হবে কি না—তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিপ্লবীরা, যারা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে গুম হয়েছেন, বিনাবিচারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন, ২৪-এর অভ্যুত্থানে জীবন ও রক্ত দিয়েছেন, তাদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী নমিনেশন না পান। আর ৩২ নম্বরের প্রতি, মুজিববাদ ও মুজিববাদী রাজনীতির প্রতি যাদের সফট কর্নার আছে, তারা বিপ্লবীদের চেয়ে যদি বেশি নমিনেশন পান, তাহলে বেগম জিয়া জীবিত থাকতে থাকতেই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী, জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে এমন নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মুজিববাদে সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আগেই বিএনপিকে উদ্ধার করতে হবে। আর এ কাজ তারেক রহমানকেই করতে হবে। তা না হলে এ রাষ্ট্র আবার দিল্লির দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান শাসনের অধীনে চলে যাবে বহু বছরের জন্য।
লেখক : গবেষক
১৯৭১ সালে শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে জিয়াউর রহমান বললেন, ‘উই রিভল্ট’। যুদ্ধ করলেন, দেশ স্বাধীন করে ফিরে গেলেন ব্যারাকে। পরে, যখন দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো একনায়কতান্ত্রিক বাকশাল, দেশ যখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন, বাংলাদেশপন্থি রাজনীতিকে কবরস্থ করে দিল্লিপন্থি, মস্কোপন্থি ও বেইজিংপন্থি আদর্শের চরম দ্বন্দ্ব ও লড়াই চলমান, তখন জিয়া রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের প্রতি আনুগত্য, বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাষ্ট্রচিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ করে গড়ে তুললেন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শন।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ—এই শব্দটি বিশেষভাবে বোঝা দরকার। এটি কিন্তু কলকাতার ব্রাহ্মণ-জমিদারদের তৈরি করা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নয়।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ—এই দুটির মধ্যে আদর্শগত ও পরিচয়গত পার্থক্য ব্যাপক। জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দ্বারা এই ভূখণ্ডে বসবাসরত সব মানুষের ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে তাদের সম্মিলিত পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন আর তা হলো—তারা সবাই বাংলাদেশি।
এই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের কারণেই একদলীয় বাকশাল তথা মুজিববাদী দর্শনকে পরাজিত করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা এবং একজন সেনা অফিসারের গড়া দলকে অল্প সময়ে প্রবল জনপ্রিয় করে তোলা ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল। আর এই কাজটিই করেছেন রাষ্ট্রপতি জিয়া।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের প্রবর্তক ও ধারক বিএনপির ওপরের এবং মধ্যমসারির বেশ কিছু নেতার মধ্যে, একদলীয় বাকশাল তথা মুজিববাদী দর্শনের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা বাড়ছে। তবে যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খবর রাখেন, তারা মনে করেন—ওপরের এবং মধ্যমসারির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আগেও ছিল; কিন্তু তথ্যের সহজলভ্যের কারণে বিষয়টি এখন মানুষের কাছে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করে মুজিববাদের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে—এর দৃশ্যমান বহু উদাহরণ রয়েছে।
আমাদের মনে থাকার কথা, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় শাহজাহান ওমর প্রকাশ্যে মুজিববাদের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি পুরোনো জয় বাংলার লোক, নাথিং নিউ।’ এই শাহজাহান ওমর ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বেগম জিয়া তাকে তিনবার প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু এত বছর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও, তার আচরণে এটাই মনে হয় যে, তিনি কখনো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আদর্শ ধারণ করেননি; বরং ধারণ করেছেন শুধু মুজিববাদ।
সম্প্রতি আলোচিত ও সমালোচিত বিএনপির আরেক নেতা ফজলুর রহমান। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে বিএনপিতে ভেড়েন। ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশও নেন। সেন্ট্রিস্ট নেশন টিভির ২৮ আগস্টের খবরে দেখা গেল, তিনি বলছেন—তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন না।
একসময় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ার পরও কীভাবে ফজলুর রহমান বেগম জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হলেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। মানুষের প্রশ্ন যিনি আলোচনায় কিংবা টকশোতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শন এবং জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও ৭৫-পরবর্তী সময়ের অবদানের প্রশংসা না করে নিরবচ্ছিন্নভাবে মুজিববাদের প্রশংসা করেন, তিনি কীভাবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হতে পারেন? যেই ২৪-এর অভ্যুত্থানে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, সেই বিপ্লব এবং ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণে বিএনপি তাকে শোকজ দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এই প্রত্যাহারকে ঘিরে রয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ তো প্রশ্নও তুলছেন—তাহলে কি বিএনপিতে মুজিববাদ এখন শক্তিশালী দর্শন?
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা সম্প্রতি বিএনপির সমালোচনাকারীদের জিহ্বা কেটে কুকুরকে খাওয়ানোর হুমকি দিয়েছেন। তার এই মন্তব্যের কারণে দল সাংগঠনিকভাবে তাকে সতর্ক করেছে কি না বা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—তিনিও আওয়ামী রাজনীতি থেকে বিএনপিতে ভেড়েন। এখানেও মানুষের প্রশ্ন আছে—তিনি কীভাবে বেগম জিয়ার মতো সবার প্রিয় ও পরিচ্ছন্ন নেত্রীর উপদেষ্টা হলেন? এই উপদেষ্টা পদের নিয়োগ কীভাবে হয়? উপদেষ্টা নিয়োগের আগে কি বেগম জিয়াকে জানানো হয়, নাকি এটি এমন একটি পদ, যা মূলত তাদের জন্য রাখা হয়, যারা অন্য কোনো পদের যোগ্য নন? শাহজাহান ওমর এবং ফজলুর রহমানের ঘটনার পর এই আশঙ্কা তো করাই যায়—একদিন হয়তো এই উপদেষ্টাও বলবেন, ‘স্যরি, আমি বিএনপি করি না, আমি জয় বাংলার লোক।’
বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক পালিয়ে গেলে কিংবা স্বৈরশাসকের পতন হলে দেশের মানুষ ওই স্বৈরশাসনের স্থাপনা, প্রতিকৃতি ও ম্যুরাল মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। উন্নত বা অনুন্নত—পশ্চিমা বিশ্বসহ সব দেশেই এটাই হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। একই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশেও। জনগণ স্বৈরশাসনের স্থাপনাগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। যারা এ কাজ করেছে, তারা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে রক্ত দিয়েছে, চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়েছে এবং বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু দেশবাসী অবাক হয়ে দেখল—বিএনপির ওপরের ও মধ্যমসারির কিছু নেতা এই বিপ্লবীদের সমালোচনা করে স্বৈরশাসনের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়াকে ‘মব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওপরের ও মধ্যমসারির এই নেতারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর আন্দোলন করেছেন এবং হালকা নিপীড়নের শিকারও হয়েছেন। তারপরও মুজিববাদের প্রতি তাদের এই স্পষ্ট অবস্থান ও ভালোবাসা দেখে মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন—তাহলে কি এরা ওপরে ওপরে বিএনপি করলেও মনে মনে মুজিববাদকেই ধারণ করেন? তাদের মুজিববাদী আদর্শ কি আরো স্পষ্ট হবে? তাদের ওপর চালানো স্বৈরশাসকের সহনীয় নিপীড়ন তাহলে কি শুধু আইওয়াশ ছিল?
ফ্যাসিস্ট শাসক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে বছরের পর বছর জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের চরিত্রহনন করেছে। এই মিথ্যার প্রভাব এখনো সমাজে রয়ে গেছে; অনেক মানুষ আজও সেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু এই মিথ্যা ও বানোয়াট চরিত্রহননমূলক অভিযোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক বয়ান তৈরি না করে, ওপরের ও মধ্যম সারির এই নেতারা মুজিববাদ এবং মুজিববাদী রাজনীতির পক্ষে নানাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এতে মানুষ আশঙ্কা করছেন—তাহলে এই নেতারাও কি একদিন বিএনপি থেকে শাজাহান ওমর হয়ে বেরিয়ে আসবেন? দলে কি তাদের মতো অনেকেই আছেন, যারা সময় এলে সক্রিয় হবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আরো স্পষ্ট হবে—মুজিববাদ বিএনপিতে আরো শক্তিশালী হবে কি না—তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিপ্লবীরা, যারা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে গুম হয়েছেন, বিনাবিচারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন, ২৪-এর অভ্যুত্থানে জীবন ও রক্ত দিয়েছেন, তাদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী নমিনেশন না পান। আর ৩২ নম্বরের প্রতি, মুজিববাদ ও মুজিববাদী রাজনীতির প্রতি যাদের সফট কর্নার আছে, তারা বিপ্লবীদের চেয়ে যদি বেশি নমিনেশন পান, তাহলে বেগম জিয়া জীবিত থাকতে থাকতেই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী, জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে এমন নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মুজিববাদে সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আগেই বিএনপিকে উদ্ধার করতে হবে। আর এ কাজ তারেক রহমানকেই করতে হবে। তা না হলে এ রাষ্ট্র আবার দিল্লির দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান শাসনের অধীনে চলে যাবে বহু বছরের জন্য।
লেখক : গবেষক
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১১ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১১ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১২ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে