কমডোর জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া (অব.)
জাপানে ২০২২ সালে পাঁচজন যাত্রীর একটি দল বাসে ওঠে। বাসচালক তাদের ভাড়ার ১১৫০ ইয়েনের মধ্যে দলটিকে ১৫০ ইয়েন মূল্যের কয়েন ভাড়া সংগ্রহের বাক্সে ফেলতে বলেন এবং বাকি ১,০০০ ইয়েনের (৭ মার্কিন ডলার) বিল নিজে নেন।
এই ৭ ডলার আত্মসাতের সময় বাসের নিরাপত্তা ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর কিয়োটো সিটি কর্তৃপক্ষ ওই চালককে বরখাস্ত করে এবং তার অবসরকালীন ৮৪,০০০ ডলার জরিমানা হিসেবে কেটে নেয়। বাসচালক এর বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালতের রায় তার পক্ষে যায়। রায়ে বলা হয়, অপরাধের তুলনায় শাস্তি বেশি হয়েছে। কিন্তু পরে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গেলে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে কিয়োটো শহর কর্তৃপক্ষের ৮৪,০০০ ডলার জরিমানার সিদ্ধান্তই বহাল রাখে উচ্চ আদালত।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল : ‘একজন বাসচালক জনসাধারণের অর্থের আমানতদার। তার এই আচরণ জন-আস্থাকে নষ্ট করেছে এবং এটি ক্ষমার অযোগ্য।’ কিয়োটোর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যুরোর কর্মকর্তা শিনিচি হিরাই বলেন, ‘যদি আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে আমাদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট হতে পারে। এখানে দুর্নীতির বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।’ এই দৃষ্টান্ত পুরো জাপানে এই কড়া বার্তা দেয়, জনস্বার্থের ক্ষতি করা মানেই নিজের সম্মান ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা। অনেকেই হয়তো ভাবছেন ‘লঘু পাপে গুরু শাস্তি’। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এই গুরু শাস্তির জন্য পরে কেউ আর এ কাজ করার সাহস পাবেন না।
আমাদের সমাজ বর্তমানে এতটাই দূষিত, আনুমানিক ৯০% কর্মজীবী মানুষই ছোট-বড় দুর্নীতিতে জড়িত। কিন্তু এ জন্য তারা কঠোর কোনো শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন না। ফলে দুর্নীতি এখন একটা প্রথায় পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বে বিরল। পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘আমার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক এবং সে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে।’ তার এ কথায় দেশে নীতিনৈতিকতার অবস্থা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, তা স্পষ্ট। বাংলাদেশে দুর্নীতির মূল কারণগুলো হলোÑআইনের শাসনের অনুপস্থিতি, নীতিহীন নেতৃত্ব, দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া এবং দ্রুত শাস্তি না হওয়া।
কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া ছাড়া দুর্নীতির রাশ টানা অসম্ভব
বাংলাদেশ আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, যেখানে প্রায় ৯০% সরকারি কর্মচারী (আনুমানিক ১৫ লাখ) কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির অংশীদার। বিগত বছরগুলোয় দেখা গেছে, সরকারে আসা প্রায় প্রতিটি দলের এমপি-মন্ত্রীদের পিএস, এপিএস ও ব্যক্তিগত অফিসাররা (পিও) দুর্নীতির প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি দুজন উপদেষ্টার এপিএস ও পিওর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রিকায়। দুর্নীতির অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান চালানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
যেহেতু ‘কাকের গোশত কাকে খায় না’ অর্থাৎ স্বজাতির ক্ষতি কেউ করে না, তাই প্রচলিত বিভাগীয় তদন্ত ও দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এখানে ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। ২০০৪ সালে গোয়েন্দা সংস্থায় থাকার সময় বিভিন্ন সেক্টরের ছোট, মাঝারি ও বড় প্রায় ১০০ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা তৈরি করে বিশেষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের দ্রুত কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে তা কার্যকর করা যায়নি।
দুর্নীতি দমন করতে হলে প্রতিটি সেক্টর থেকে কমপক্ষে দু-একজন দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে বিশেষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে জাপান, চীন, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সমাজেও একটি কড়া বার্তা যায়। এই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠিত হতে পারে সৎ হিসেবে পরীক্ষিত সরকারি চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ছাত্র এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে।
নারী নির্যাতন আইনের মতো বিশেষ দ্রুত বিচারব্যবস্থা চালু করে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে উপদেষ্টা আসিফের আলোচিত এপিএসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এতে দেশবাসীর মনে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরবে আর দুর্নীতিবাজদের মনে ভয় ঢুকে যাবে। মাহাথির বা লি কুয়ান ইউর মতো সাহসী সিদ্ধান্ত ছাড়া বাংলাদেশকে দুর্নীতির সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে জাপানের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সামনে রেখে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিতে নিজস্ব অভিজ্ঞতা : একটি প্রবাদ আছেÑ‘উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত শ্রেয়’। দেশের এই জরুরি পর্যায়ে সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাজে লাগানো অন্তর্বর্তী সরকারের কেন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ হবে, তা বোঝাতে আমার চাকরি জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
২০০৮ সালের প্রথমদিকে এমএস রডের টনপ্রতি মূল্য ৪০ হাজার টাকা ছিল এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৭২ হাজার টাকা হয়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে অস্থিরতা শুরু হয়। ফলে ২১ এপ্রিল ২০০৮ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব রাশিদুল হাইকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সে সময় আমার কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়া সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমাকে ওই কমিটিতে মনোনীত করা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের একজন সদস্যসহ আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হুসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ফলে বাজারে রডের মূল্য কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশে দুর্নীতির যে বিস্তার ঘটেছে, তা শুধু দুদকের ওপর নির্ভর করে রোধ করা সম্ভব নয়। প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে কয়েকটি অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। প্রস্তাবিত বিশেষ ব্যবস্থাগুলো হতে পারে-
১. প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টর থেকে ১০০ জন দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে এতে পুরো সমাজে একটি শক্ত বার্তা যাবে, দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না
২. সাময়িক ভিত্তিতে সামরিক মডেলে দ্রুত বিচার পদ্ধতির প্রয়োগ : প্রয়োজনে সামরিক কাঠামোতে, পৃথক তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বিচার প্রক্রিয়ার গতি আসবে, অন্যদিকে অপরাধীদের মধ্যে ভয়ও তৈরি হবে।
৩. তদন্ত কমিটিতে সামরিক ও বেসামরিক গুণিজনদের অন্তর্ভুক্তি; যেকোনো তদন্ত কমিটিতে সামরিক এবং বেসামরিক—এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যাতে তদন্তে বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষতা দুই-ই নিশ্চিত হয়।
৪. দুদককে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা; দুদককে প্রকৃত অর্থেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা নির্ভয়ে ও কার্যকরভাবে দুর্নীতি দমন করতে পারে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনীপ্রধান ও প্রো-ভিসি, বিইউপি
জাপানে ২০২২ সালে পাঁচজন যাত্রীর একটি দল বাসে ওঠে। বাসচালক তাদের ভাড়ার ১১৫০ ইয়েনের মধ্যে দলটিকে ১৫০ ইয়েন মূল্যের কয়েন ভাড়া সংগ্রহের বাক্সে ফেলতে বলেন এবং বাকি ১,০০০ ইয়েনের (৭ মার্কিন ডলার) বিল নিজে নেন।
এই ৭ ডলার আত্মসাতের সময় বাসের নিরাপত্তা ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর কিয়োটো সিটি কর্তৃপক্ষ ওই চালককে বরখাস্ত করে এবং তার অবসরকালীন ৮৪,০০০ ডলার জরিমানা হিসেবে কেটে নেয়। বাসচালক এর বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালতের রায় তার পক্ষে যায়। রায়ে বলা হয়, অপরাধের তুলনায় শাস্তি বেশি হয়েছে। কিন্তু পরে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গেলে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে কিয়োটো শহর কর্তৃপক্ষের ৮৪,০০০ ডলার জরিমানার সিদ্ধান্তই বহাল রাখে উচ্চ আদালত।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল : ‘একজন বাসচালক জনসাধারণের অর্থের আমানতদার। তার এই আচরণ জন-আস্থাকে নষ্ট করেছে এবং এটি ক্ষমার অযোগ্য।’ কিয়োটোর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যুরোর কর্মকর্তা শিনিচি হিরাই বলেন, ‘যদি আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে আমাদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট হতে পারে। এখানে দুর্নীতির বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।’ এই দৃষ্টান্ত পুরো জাপানে এই কড়া বার্তা দেয়, জনস্বার্থের ক্ষতি করা মানেই নিজের সম্মান ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা। অনেকেই হয়তো ভাবছেন ‘লঘু পাপে গুরু শাস্তি’। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এই গুরু শাস্তির জন্য পরে কেউ আর এ কাজ করার সাহস পাবেন না।
আমাদের সমাজ বর্তমানে এতটাই দূষিত, আনুমানিক ৯০% কর্মজীবী মানুষই ছোট-বড় দুর্নীতিতে জড়িত। কিন্তু এ জন্য তারা কঠোর কোনো শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন না। ফলে দুর্নীতি এখন একটা প্রথায় পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বে বিরল। পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘আমার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক এবং সে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে।’ তার এ কথায় দেশে নীতিনৈতিকতার অবস্থা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, তা স্পষ্ট। বাংলাদেশে দুর্নীতির মূল কারণগুলো হলোÑআইনের শাসনের অনুপস্থিতি, নীতিহীন নেতৃত্ব, দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া এবং দ্রুত শাস্তি না হওয়া।
কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া ছাড়া দুর্নীতির রাশ টানা অসম্ভব
বাংলাদেশ আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, যেখানে প্রায় ৯০% সরকারি কর্মচারী (আনুমানিক ১৫ লাখ) কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির অংশীদার। বিগত বছরগুলোয় দেখা গেছে, সরকারে আসা প্রায় প্রতিটি দলের এমপি-মন্ত্রীদের পিএস, এপিএস ও ব্যক্তিগত অফিসাররা (পিও) দুর্নীতির প্রধান এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি দুজন উপদেষ্টার এপিএস ও পিওর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রিকায়। দুর্নীতির অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান চালানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
যেহেতু ‘কাকের গোশত কাকে খায় না’ অর্থাৎ স্বজাতির ক্ষতি কেউ করে না, তাই প্রচলিত বিভাগীয় তদন্ত ও দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এখানে ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। ২০০৪ সালে গোয়েন্দা সংস্থায় থাকার সময় বিভিন্ন সেক্টরের ছোট, মাঝারি ও বড় প্রায় ১০০ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা তৈরি করে বিশেষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের দ্রুত কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে তা কার্যকর করা যায়নি।
দুর্নীতি দমন করতে হলে প্রতিটি সেক্টর থেকে কমপক্ষে দু-একজন দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে বিশেষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে জাপান, চীন, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সমাজেও একটি কড়া বার্তা যায়। এই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠিত হতে পারে সৎ হিসেবে পরীক্ষিত সরকারি চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ছাত্র এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে।
নারী নির্যাতন আইনের মতো বিশেষ দ্রুত বিচারব্যবস্থা চালু করে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে উপদেষ্টা আসিফের আলোচিত এপিএসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এতে দেশবাসীর মনে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরবে আর দুর্নীতিবাজদের মনে ভয় ঢুকে যাবে। মাহাথির বা লি কুয়ান ইউর মতো সাহসী সিদ্ধান্ত ছাড়া বাংলাদেশকে দুর্নীতির সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে জাপানের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সামনে রেখে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিতে নিজস্ব অভিজ্ঞতা : একটি প্রবাদ আছেÑ‘উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত শ্রেয়’। দেশের এই জরুরি পর্যায়ে সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাজে লাগানো অন্তর্বর্তী সরকারের কেন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ হবে, তা বোঝাতে আমার চাকরি জীবনের একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
২০০৮ সালের প্রথমদিকে এমএস রডের টনপ্রতি মূল্য ৪০ হাজার টাকা ছিল এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৭২ হাজার টাকা হয়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে অস্থিরতা শুরু হয়। ফলে ২১ এপ্রিল ২০০৮ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব রাশিদুল হাইকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সে সময় আমার কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়া সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমাকে ওই কমিটিতে মনোনীত করা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের একজন সদস্যসহ আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হুসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ফলে বাজারে রডের মূল্য কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশে দুর্নীতির যে বিস্তার ঘটেছে, তা শুধু দুদকের ওপর নির্ভর করে রোধ করা সম্ভব নয়। প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে কয়েকটি অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। প্রস্তাবিত বিশেষ ব্যবস্থাগুলো হতে পারে-
১. প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টর থেকে ১০০ জন দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে এতে পুরো সমাজে একটি শক্ত বার্তা যাবে, দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না
২. সাময়িক ভিত্তিতে সামরিক মডেলে দ্রুত বিচার পদ্ধতির প্রয়োগ : প্রয়োজনে সামরিক কাঠামোতে, পৃথক তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বিচার প্রক্রিয়ার গতি আসবে, অন্যদিকে অপরাধীদের মধ্যে ভয়ও তৈরি হবে।
৩. তদন্ত কমিটিতে সামরিক ও বেসামরিক গুণিজনদের অন্তর্ভুক্তি; যেকোনো তদন্ত কমিটিতে সামরিক এবং বেসামরিক—এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যাতে তদন্তে বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষতা দুই-ই নিশ্চিত হয়।
৪. দুদককে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা; দুদককে প্রকৃত অর্থেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা নির্ভয়ে ও কার্যকরভাবে দুর্নীতি দমন করতে পারে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনীপ্রধান ও প্রো-ভিসি, বিইউপি
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৬ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৭ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৭ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে