
আবুল কাসেম হায়দার

দেশের রপ্তানি-বাণিজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ওপর দেশের উন্নতি নির্ভর করে। আমাদের রপ্তানি খাত খুবই কম। প্রধানতম রপ্তানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প খাত। দ্বিতীয় রপ্তানি খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। একসময় পাট ও পাটজাত পণ্য ছিল আমাদের একমাত্র রপ্তানি খাত। বর্তমানে আইটি খাত রপ্তানিতে এগিয়ে এসেছে। আগামীতে আইটি খাত রপ্তানিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
২০২৪ সালের শেষ চার মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভালো ভূমিকা রেখেছে। অত্র সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে রপ্তানিতে বড় অর্জন এসেছে প্রবৃদ্ধিতে। ২০২৪ সালে ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের তুলনায় ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। যদিও গত নভেম্বর ২০২৪ সালের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ।
এমনিভাবে তৈরি পোশাকশিল্পের বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, এটি ইতিবাচক। আমাদের জন্য সুখবর। কিন্তু সার্বিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধি তেমন উল্লেখযোগ্য হয়নি। তবে ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭৩৪ কোটি ডলার, যা বিগত ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আমাদের এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলার।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা গেছে। ওই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত সেপ্টেম্বর ১৮ শতাংশ, অক্টোবরে ২৬ দশমিক ৭ ও নভেম্বর ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোন দেশের কত পোশাক রপ্তানি
দেশ ২০২৩ ২০২৪ প্রবৃদ্ধি
চীন ১,৬৩৮ ১,৬৫১ ০.৭৯
ভিয়েতনাম ১,৪১৮ ১,৪৯৮ ৫.৬১
বাংলাদেশ ৭২৯ ৭৩৪ ০.৭৫
ইন্দোনেশিয়া ৪১৯ ৪২৫ ১.৪০
বছরের শেষ দুই মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি
মাস রপ্তানি প্রবৃদ্ধি
নভেম্বর ’২৪ ৬১ ৪১
ডিসেম্বর ’২৪ ৫৮ ১৮
হিসাব কোটি ডলারে, প্রবৃদ্ধি শতাংশে (%)
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহের মধ্যে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। ওই শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। পণ্যের মূল্য কম রাখার জন্য আমদানিকারকরা ওই দেশ থেকে ক্রয়াদেশ কমিয়ে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে আমাদের দেশে অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। চীনা পণ্যের ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে তৈরি পোশাকের কারখানা সরিয়ে অন্য দেশে নেওয়ার আগ্রহী হতে পারেন। আর সেই বিনিয়োগ হতে পারে বাংলাদেশে।
একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান শুল্ক আরোপের আগে থেকে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করেছে। নতুন নতুন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন এবং অনেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। এমনকি চীন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, তারাও বাংলাদেশের বায়িং হাউস এবং তৈরি পোশাক কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সোর তথ্য অনুযায়ী গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কোম্পানি বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৭১ শতাংশের বেশি। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আমদানি করেছিল ৭ হাজার ৭৯৩ কোটি ডলার। চীন সব সময় যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিতে শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে। চীন ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৬৫১ কোটি ডলার। এই ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। পৃথিবীর সব দেশ থেকে অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ নেওয়ার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের রয়েছে।
আমাদের সমস্যা
১. বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিদেশি ক্রয়াদেশ পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন। সরকারকে এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
২. দ্বিতীয় যে বিষয়টি হচ্ছে আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুতের স্বল্পতা। শিল্প খাতে নিয়মিত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে অতিরিক্ত রপ্তানি আদেশ নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা রপ্তানিও করতে পারবে। সরকারকে দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ মানতে হবে। দেশের পেট্রোবাংলাকে গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের বাজেট বাড়াতে হবে। জনশক্তি বাড়াতে হবে। বিদেশি সহযোগিতাও নিতে হবে।
৩. তৈরি পোশাকশিল্প তথা শিল্প খাতের উন্নতির জন্য ব্যাংকের সুদের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকগুলোয় সুদের হার বিনিয়োগবান্ধবে নিয়ে আসতে হবে। অধিক সুদহারে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থা দেশের জন্য কোনো মঙ্গল বহন করে আনবে না।
৪. বিগত সরকার ১৬ বছরে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে ফেলেছে। সব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংক বিনিয়োগের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা চাহিদা মোতাবেক অর্থ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বস্ত্র খাতের অনেক মালিক ব্যাংকের সহযোগিতার অভাবে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। বিগত রাজনৈতিক আন্দোলন ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রুগ্ণশিল্পে রূপ নিয়েছে। এসব রুগ্ণশিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকার এগিয়ে আসতে হবে। স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা দিয়ে শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নতুবা এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যেটি হওয়ার জন্য বিগত স্বৈর সরকার ব্যাংক খাত লুট করে পঙ্গু করে ফেলেছে।
বর্তমান সরকার বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে দেশের শিল্প খাত তথা তৈরি পোশাকশিল্পের পশ্চাৎপদ শিল্প স্পিনিং ও ডাউং ফিনিসিং খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বল্পসুদ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে এ অবস্থার সমাধান হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশে তৈরি পোশাকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ব্যবসায়ী সমাজকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। এফবিসিসিআইসহ সব ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে স্বৈরাচারদের দূর করে দেশপ্রেমিক ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নেতৃত্ব আনতে হবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের রপ্তানি-বাণিজ্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ওপর দেশের উন্নতি নির্ভর করে। আমাদের রপ্তানি খাত খুবই কম। প্রধানতম রপ্তানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প খাত। দ্বিতীয় রপ্তানি খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। একসময় পাট ও পাটজাত পণ্য ছিল আমাদের একমাত্র রপ্তানি খাত। বর্তমানে আইটি খাত রপ্তানিতে এগিয়ে এসেছে। আগামীতে আইটি খাত রপ্তানিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
২০২৪ সালের শেষ চার মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভালো ভূমিকা রেখেছে। অত্র সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে রপ্তানিতে বড় অর্জন এসেছে প্রবৃদ্ধিতে। ২০২৪ সালে ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের তুলনায় ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। যদিও গত নভেম্বর ২০২৪ সালের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ।
এমনিভাবে তৈরি পোশাকশিল্পের বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, এটি ইতিবাচক। আমাদের জন্য সুখবর। কিন্তু সার্বিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধি তেমন উল্লেখযোগ্য হয়নি। তবে ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭৩৪ কোটি ডলার, যা বিগত ২০২৩ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আমাদের এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলার।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা গেছে। ওই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত সেপ্টেম্বর ১৮ শতাংশ, অক্টোবরে ২৬ দশমিক ৭ ও নভেম্বর ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোন দেশের কত পোশাক রপ্তানি
দেশ ২০২৩ ২০২৪ প্রবৃদ্ধি
চীন ১,৬৩৮ ১,৬৫১ ০.৭৯
ভিয়েতনাম ১,৪১৮ ১,৪৯৮ ৫.৬১
বাংলাদেশ ৭২৯ ৭৩৪ ০.৭৫
ইন্দোনেশিয়া ৪১৯ ৪২৫ ১.৪০
বছরের শেষ দুই মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি
মাস রপ্তানি প্রবৃদ্ধি
নভেম্বর ’২৪ ৬১ ৪১
ডিসেম্বর ’২৪ ৫৮ ১৮
হিসাব কোটি ডলারে, প্রবৃদ্ধি শতাংশে (%)
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহের মধ্যে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। ওই শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। পণ্যের মূল্য কম রাখার জন্য আমদানিকারকরা ওই দেশ থেকে ক্রয়াদেশ কমিয়ে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে আমাদের দেশে অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। চীনা পণ্যের ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে তৈরি পোশাকের কারখানা সরিয়ে অন্য দেশে নেওয়ার আগ্রহী হতে পারেন। আর সেই বিনিয়োগ হতে পারে বাংলাদেশে।
একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান শুল্ক আরোপের আগে থেকে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করেছে। নতুন নতুন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন এবং অনেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। এমনকি চীন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, তারাও বাংলাদেশের বায়িং হাউস এবং তৈরি পোশাক কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সোর তথ্য অনুযায়ী গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কোম্পানি বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৭১ শতাংশের বেশি। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো আমদানি করেছিল ৭ হাজার ৭৯৩ কোটি ডলার। চীন সব সময় যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিতে শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে। চীন ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৬৫১ কোটি ডলার। এই ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। পৃথিবীর সব দেশ থেকে অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ নেওয়ার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের রয়েছে।
আমাদের সমস্যা
১. বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিদেশি ক্রয়াদেশ পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন। সরকারকে এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
২. দ্বিতীয় যে বিষয়টি হচ্ছে আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুতের স্বল্পতা। শিল্প খাতে নিয়মিত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে অতিরিক্ত রপ্তানি আদেশ নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা রপ্তানিও করতে পারবে। সরকারকে দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ মানতে হবে। দেশের পেট্রোবাংলাকে গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের বাজেট বাড়াতে হবে। জনশক্তি বাড়াতে হবে। বিদেশি সহযোগিতাও নিতে হবে।
৩. তৈরি পোশাকশিল্প তথা শিল্প খাতের উন্নতির জন্য ব্যাংকের সুদের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের ব্যাংকগুলোয় সুদের হার বিনিয়োগবান্ধবে নিয়ে আসতে হবে। অধিক সুদহারে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থা দেশের জন্য কোনো মঙ্গল বহন করে আনবে না।
৪. বিগত সরকার ১৬ বছরে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে ফেলেছে। সব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংক বিনিয়োগের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা চাহিদা মোতাবেক অর্থ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বস্ত্র খাতের অনেক মালিক ব্যাংকের সহযোগিতার অভাবে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। বিগত রাজনৈতিক আন্দোলন ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রুগ্ণশিল্পে রূপ নিয়েছে। এসব রুগ্ণশিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকার এগিয়ে আসতে হবে। স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা দিয়ে শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নতুবা এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যেটি হওয়ার জন্য বিগত স্বৈর সরকার ব্যাংক খাত লুট করে পঙ্গু করে ফেলেছে।
বর্তমান সরকার বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে দেশের শিল্প খাত তথা তৈরি পোশাকশিল্পের পশ্চাৎপদ শিল্প স্পিনিং ও ডাউং ফিনিসিং খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্বল্পসুদ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে এ অবস্থার সমাধান হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশে তৈরি পোশাকের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য ব্যবসায়ী সমাজকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। এফবিসিসিআইসহ সব ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে স্বৈরাচারদের দূর করে দেশপ্রেমিক ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নেতৃত্ব আনতে হবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৪ ঘণ্টা আগে
‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৫ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৫ ঘণ্টা আগে
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে