আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

মব, গণআদালত থেকে পোস্ট-শাহবাগ

শাহীদ কামরুল

মব, গণআদালত থেকে পোস্ট-শাহবাগ

মব বা জনতার উন্মত্ত সমাবেশকে যদি হঠাৎ ঘটে যাওয়া সহিংসতা হিসেবে দেখা হয়, তবে আমরা সমস্যার গভীরে পৌঁছাতে পারি না। মব আসলে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও নৈতিকতার সম্পর্ক ভেঙে পড়ে। এখানে মানুষ আইন মানে না—কিন্তু সবসময় আইন অস্বীকারও করে না; বরং তারা মনে করে, আইন ব্যর্থ হয়েছে বলেই তারা আইন হয়ে উঠছে। এ জায়গাটিই মবকে সবচেয়ে বিপজ্জনক করে তোলে। মব বা জনতার উন্মত্ত সমাবেশ বলতে সাধারণত এমন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক, আবেগতাড়িত ও সাময়িক গোষ্ঠীকে বোঝায়, যেখানে ব্যক্তির চিন্তা এবং নৈতিক দায়বোধ গলে গিয়ে একটি সমষ্টিগত আচরণ তৈরি হয়।

এখানে মানুষ আর ‘ব্যক্তি’ হিসেবে কাজ করে না; সে কাজ করে ‘ভিড়ের অংশ’ হিসেবে। সমাজতত্ত্বে একে বলা হয় ডি-ইনডিভিজুয়েশন (de-individuation)—যেখানে ব্যক্তি নিজের পরিচয়, যুক্তি ও দায়িত্ববোধ সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলে। মব সবসময় সহিংস হবে এমন নয়; কিন্তু ইতিহাস দেখায়, মব যখন রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা নৈতিক ন্যায্যতার দাবি নিয়ে হাজির হয়, তখন সহিংসতা তার সবচেয়ে সম্ভাব্য রূপ হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

ইতিহাসে মবকে প্রায়ই ‘গণরোষ’ বা ‘জনতার ন্যায়বিচার’ বলে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দার্শনিক দৃষ্টিতে এটি একটি গভীর বিভ্রম। প্লেটো তার রিপাবলিকে (Republic) সতর্ক করেছিলেন—যখন জনতার আবেগ যুক্তির জায়গা দখল করে, তখন ন্যায় আর সত্য আলাদা থাকে না; শক্তিই সত্য হয়ে ওঠে। এই চিন্তা থেকেই পরে ‘মব রুল’ (mob rule) বা অক্লোক্রেসি (ochlocracy) ধারণার জন্ম, যেখানে জনতার শাসন গণতন্ত্রের বিকৃত রূপ হিসেবে চিহ্নিত। আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনে বিখ্যাত দার্শনিক থমাস হবস মবের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রের ব্যর্থতার মাধ্যমে। হবসের মতে, মানুষ স্বাভাবিকভাবে সহিংস নয়; কিন্তু যখন সে দেখে যে রাষ্ট্র তাকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তখন সে আবার ‘প্রাকৃতিক অবস্থায়’ ফিরে যায়, যেখানে জীবন হয়ে ওঠে অনিশ্চিত, নিষ্ঠুর ও সংক্ষিপ্ত। মব সেই প্রাকৃতিক অবস্থার সামাজিক বিস্ফোরণ।

অর্থাৎ, মব যতটা না মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের ফল, তার চেয়েও বেশি রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার প্রতিফলন। উনিশ শতকে সমাজবিজ্ঞানী গুসতাভ ল্য বঁ ভিড়ের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে দেখান, মবের ভেতরে ব্যক্তি তার নিজস্ব বিবেক হারায়। সে এমন কাজ করতে পারে, যা একা কখনো করত না। কিন্তু ল্য বঁ-এর বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা হলো—তিনি মবকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে দেখেছিলেন। আধুনিক সমাজতত্ত্ব এই ধারণাকে আংশিকভাবে সংশোধন করেছে। আজ আমরা বুঝি, মব অনেক সময় নৈতিক ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয়, কিন্তু সেই ক্ষোভ যখন কাঠামোগত পথে নিষ্কাশিত হতে পারে না, তখন তা সহিংস রূপ নেয়। এখানে ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরখেইমের অ্যানোমি (anomie) ধারণা গুরুত্বপূর্ণ। দুরখেইম বলেছিলেন, যখন সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ ও প্রত্যাশার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না, তখন মানুষ দিশাহীন হয়ে পড়ে। এই দিশাহীনতাই মব মানসিকতার উর্বর ভূমি। বাংলাদেশে যখন মানুষ দেখে অপরাধী ধরা পড়ে না, বিচার হয় না, ক্ষমতাবানরা দায়মুক্ত থাকে, তখন ন্যায়ের ধারণা ভেঙে পড়ে। সেই শূন্যস্থানে মব নিজেকে ‘ন্যায়ের বাহক’ হিসেবে হাজির করে। নৈতিক দর্শনের দিক থেকে মব একটি গভীর দ্বন্দ্ব।

এ কারণেই প্রশ্ন ওঠে, মব কি আসলেই সহিংসতা? উত্তরটা জটিল। মব নিজে সহিংসতা নয়; কিন্তু মবের গঠনপ্রক্রিয়া সহিংসতার জন্য অত্যন্ত অনুকূল। কারণ এখানে তিনটি জিনিস একসঙ্গে কাজ করে : আবেগ, গুজব ও দায়হীনতা। ব্যক্তিগতভাবে ‘আমি একা নই’, ‘সবাই করছে’, ‘দায় কারো একার নয়’। এই নৈতিক শিথিলতাই সহিংসতাকে সহজ করে তোলে। তাই লিঞ্চিং, গণপিটুনি বা ভাঙচুর—এসব প্রায়ই মবের হাত ধরেই আসে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মবের ইতিহাস ঔপনিবেশিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশ শাসনামলে নীলচাষবিরোধী আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ কিংবা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তান আমলেও মব ও সচেতন গণআন্দোলনের সীমারেখা সবসময় স্পষ্ট ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মব কখনো গণআন্দোলনের শক্তি হয়েছে, আবার কখনো ন্যায়বিচারের বিকল্প হয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে—বিশেষ করে গণপিটুনি, ধর্মীয় গুজবভিত্তিক হামলা বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়। আর বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় মবকে বুঝতে গেলে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারও বিবেচনায় নিতে হয়।

ঔপনিবেশিক শাসন বিচারব্যবস্থাকে মানুষের নাগালের বাইরে রেখে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পরও সেই দূরত্ব পুরোপুরি ঘোচেনি। ফলে ন্যায়বিচার অনেকের কাছে এখনো একটি বিমূর্ত ধারণা। এই প্রেক্ষাপটে মব এক ধরনের ‘তাৎক্ষণিক সমাধান’ হিসেবে আবির্ভূত হয়—যদিও তার পরিণতি দীর্ঘ মেয়াদে আরো সহিংস ও অমানবিক। সমসাময়িক দার্শনিক হান্না আরেন্টের চিন্তা এখানে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি সহিংসতাকে ক্ষমতার ব্যর্থতার লক্ষণ হিসেবে দেখেছিলেন। তার মতে, যেখানে বৈধ ক্ষমতা কাজ করে, সেখানে সহিংসতার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে মবের পুনরাবৃত্তি এই কথাই প্রমাণ করে—ক্ষমতা ও ন্যায়ের মধ্যে ফাঁক যত বাড়ে, মব তত শক্তিশালী হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে মবের শক্তি বেড়ে ওঠার পেছনে কয়েকটি সামাজিক কারণ স্পষ্ট। প্রথমত, বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও আস্থাহীনতা—মানুষ বিশ্বাস করে না যে রাষ্ট্র দ্রুত ও ন্যায়সংগত বিচার দেবে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বঞ্চনা, যা ক্ষোভকে জমিয়ে তোলে। তৃতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—যেখানে যাচাইহীন তথ্য মুহূর্তে জনতাকে উসকে দিতে পারে। এই তিনটি উপাদান মিলেই বাংলাদেশে মবকে একটি নিয়মিত সামাজিক ঝুঁকিতে পরিণত করেছে।

নৈতিক দর্শনের দৃষ্টিতে মব একটি গভীর সংকেত, এটি দেখায় যে সমাজে ন্যায়বোধ এখনো জীবিত, কিন্তু সেই ন্যায়বোধ প্রাতিষ্ঠানিক পথে প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই মব একদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া, অন্যদিকে নিজেই অন্যায়ের জন্মদাতা। হান্না আরেন্টের ভাষায়, এটি ‘নৈতিক ক্রোধ’ ও ‘নৈতিক বিপর্যয়’—দুটোরই সহাবস্থান।

ডিজিটাল যুগে মব নতুন রূপ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুজবকে মুহূর্তে সত্যে রূপান্তর করে। মার্শাল ম্যাকলুহানের ভাষায়, মিডিয়াম ইজ দ্য মেসেজ (medium is the message)—মাধ্যম নিজেই বার্তার প্রকৃতি নির্ধারণ করে। যখন মাধ্যম দ্রুত, আবেগপ্রবণ ও যাচাইহীন, তখন মবের জন্ম আরো সহজ হয়। বাংলাদেশে মবের সাম্প্রতিক প্রবণতা এই প্রযুক্তিগত বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাছাড়া, ইউরোপে মধ্যযুগীয় গণপিটুনি থেকে শুরু করে উনিশ শতকের আমেরিকায় লিঞ্চিং সব ক্ষেত্রেই একই ধারা দেখা যায়Ñআইন ও প্রতিষ্ঠান দুর্বল হলে বা অবিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠলে, ভিড় নিজেকে বিচারক ভাবতে শুরু করে।

বাংলাদেশে মব আচরণের ইতিহাস নতুন নয়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর ১৯৭২-৭৫ সময়কালে প্রতিশোধমূলক হামলা, ঘরবাড়ি দখল, প্রকাশ্য অপমান—এসব অনেক ক্ষেত্রেই মবসুলভ আচরণে রূপ নিয়েছিল, যদিও পেছনে ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী ক্ষোভ ও বিচারহীনতার বাস্তবতা। আশির দশকের শেষভাগে এবং নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময়েও রাজনৈতিক প্রতিবাদের পাশাপাশি মব সহিংসতা দেখা গেছে, যা আন্দোলনের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে গণআদালত অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে, সেটি কোনো রাষ্ট্রীয় আদালত ছিল না, একটি রাজনৈতিক চাপ তৈরির উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রেশার সৃষ্টি করা। তবে এটাও সত্য, এ ধরনের গণআদালত আইনি প্রক্রিয়ার বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল, মব আচরণকে উৎসাহিত করেছিল এবং এটিও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্পষ্টত মব ছিল। পরে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্ডিয়াপন্থি বাংলাদেশ নামধারী বামপন্থি শাহবাগিদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি ভিন্নমতকে ‘রাজাকার’ বা ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে, ব্যক্তির কাজ নয়; বরং পরিচয়কেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এবং আইনি প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে তাৎক্ষণিক ফাঁসির দাবি করে, যা আদালতের বিচার প্রক্রিয়াকে অপ্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করে। এই ভয়ংকর মবের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফ্যাসিজম কায়েম ও দায়েম থাকে গুজারা ১৭ বছর।

বস্তুত. ৫৩ বছর পরে এসে আজ আমাদের আর দ্বিধা রাখার ফুরসত নেই, বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ছিল না। আদতে, আজাদির নামে ছিল এক দীর্ঘ প্রতারণা। শাসক বদলেছে, পতাকা উড়েছে, সংবিধানের ভাষা বদলেছে; কিন্তু আধিপত্য বদলায়নি। স্বাধীনতার নামে আমরা পেয়েছি একটি দীর্ঘ প্রতারণার হিস্টোরিওগ্রাপি, যেখানে তাকাত দেশীয় ছিল, কিন্তু দাসত্ব ছিল বিদেশি স্বার্থের কাছে।

এই প্রতারণার ইতিহাসে মেসিফিকেশন কখনো : নিরপেক্ষ ছিল না। তারা সচেতনভাবেই জনগণের কণ্ঠস্বর না হয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের পক্ষে সক্রিয় দালাল ও ক্লাউনের ভূমিকা পালন করেছে। সত্যকে পোশিদা করা, ইতিহাসকে বিকৃত করা আর প্রতিরোধের ভাষাকে ‘সন্ত্রাস’ আখ্যা দেওয়াই ছিল তাদের গুজারা দিনের সিনক্রোনিক সম্পাদকীয় নীতি।

আজ ডেইলি স্টার, প্রথম আলোসহ তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছে। যখন বেগম জিয়া কারাগারে অসুস্থ শরীর নিয়ে বন্দি ছিলেন, তখন এই মিডিয়া হাউসগুলো পাশে দাঁড়ায়নি। নির্যাতনের সময় তারা নীরব ছিল, অবিচারের সময় তারা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থেকেছে। এই নীরবতাই তাদের আসল পরিচয়। আমার দেশ পত্রিকার সংগ্রামী ও নিরেট দেশপ্রেমিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শাহবাগি ও বাকশালীরা দিবালোকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। পরে আমার দেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যার ভিডিও ধারণ করার সময় দিগন্ত টিভির সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ লীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, ভিডিও টেপ কেড়ে নেয় এবং দিগন্ত টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়, নয়া দিগন্তের অফিস হাসিনাৎসির বাকশালীরা পুড়িয়ে দেয়। দৈনিক সংগ্রাম অফিস ভাঙচুর করে প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে দাড়ি ধরে টেনে বের করে রক্তাক্ত করা হয়, পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। হেফাজতে ইসলামের ওপর গণহত্যার রিপোর্ট প্রকাশ করার অপরাধে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার সম্পাদক গ্রেপ্তার করা হয়। তখন কোনো তথাকথিত সুশীল শাহবাগির মনে হয়নি মুক্তিযুদ্ধ ভুলপথে যাচ্ছে। তখন কোনো বামপন্থি ও বাওয়ামির বিবেকের মনে হয়নি এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ হতে পারে না। তখন নীরবতাই ছিল তাদের রাজনীতি।

আজ তাই প্রশ্ন একটাই—যদি তখন নীরব থাকা বৈধ হয়ে থাকে, আজ প্রতিবাদ কেন অবৈধ হবে?

আজ একটি নতুন প্রজন্ম দাঁড়িয়ে গেছে—গণতন্ত্র ও আগ্রাসনবিরোধী প্রজন্ম। তারা ভয় পায় না। কারণ তারা জানে—গণতন্ত্র ভিক্ষা নয়, অধিকার। মিথ্যা দিয়ে আর তাদের থামানো যাবে না, দালালি দিয়ে আর তাদের বিভ্রান্ত করা যাবে না, বাংলাদেশ আর ঘুমিয়ে নেই। এটা কোনো ‘পুরোনো পাপের অনুশোচনা’ নয়—এটা হিসাবের দিন। বাংলাদেশে ভারতীয় দালালদের আর মাথা উঁচু করে দেশবিরোধী রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। যে রাজনৈতিক দলই হোক—যদি তার রাজনীতি দেশের পক্ষে না হয়, জনগণের পক্ষে না হয়, তাহলে তারাও নিঃসন্দেহে পতিত হবে এবং কালের গহ্বরে বিলীন হয়ে যাবে, কারণ সময় বদলেছে, ভয়ের মানচিত্র বদলেছে আর জনগণ জেগে উঠেছে।

সবশেষে বলা যায়, মব কোনো বিচ্ছিন্ন অসভ্যতা নয়; এটি রাষ্ট্র, সমাজ ও নৈতিক কাঠামোর ভেতরের ফাটলের প্রতিফলন। মব দমন শুধু পুলিশি শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার বিশ্বাসযোগ্য বিচারব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায় এবং নাগরিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে আবার ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্বশীল করে তোলা। না হলে ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেবে—যেখানে রাষ্ট্র নীরব, সেখানে জনতা কথা বলে; আর সেই কথা প্রায়ই রক্তে লেখা হয়।

মব কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়; এটি একটি নৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। মব আমাদের জানিয়ে দেয়—সমাজে ন্যায়বোধ এখনো বেঁচে আছে, কিন্তু সেই ন্যায়বোধ বিপথগামী। রাষ্ট্র যদি সেই ন্যায়বোধকে আইনের কাঠামোর ভেতরে ফিরিয়ে আনতে না পারে, তবে মব শুধু সহিংসতা বাড়াবে না; ধীরে ধীরে সমাজকে নৈতিকভাবে শূন্য করে দেবে। আর এ সরকার হলো এক ভাঙা কম্পাস, যেটা দিক দেখায়, কিন্তু কোথাও নিয়ে যায় না। তাই মবের বিরুদ্ধে বায়োগল বাজাতে থাকে কিন্তু মব কেন হয় সেটা খতিয়ে দেখে না, শুধু পারঙ্গমতা দেখাতে পারে দূষিত রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করতে, আসন ভাগাভাগির আলাপ করতে, যার নতিজা দেশবাসী হরহামেশাই টের পাচ্ছে অথচ যখন আওয়ামদের পুরো সমর্থন ছিল সরকারের সঙ্গে, তখন একটু দৃঢ়সংকল্প হলেই দেশটা অন্য ধরনের হতে পারত; কিন্তু বিধিবাম শুধু আওয়াজ আওরঙ্গজেব। মশাই ভুলে যাবেন না, এটা কোনো ক্লাসরুম বা এনজিও প্রতিষ্ঠান নয়, এটি রাষ্ট্র মোটিভেশনাল কথা দিয়ে চলে না, গণমানুষের কনসার্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে কবর দিয়ে কোনো কিছু করলে আওয়ামরা আপনাদের টেনেহিঁচড়ে নামাবে। সাবধান!!

লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক, ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি

sahidkamrul25@gmail.com

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন