বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ কেবল একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি নয়; এটি একটি নৈতিক ভাষা, একটি শাসন-যুক্তি এবং এক ধরনের সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব। এই চেতনার পক্ষে অবস্থান নেওয়া রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা নিজেদেরকে প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধির ধারক ও মানবতাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু বাস্তবে একই গোষ্ঠীর ভেতর থেকেই ভিন্নমতাবলম্বী মানুষদের (বিশেষত যারা রাষ্ট্রের ইতিহাস, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিচারপ্রক্রিয়া বা ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলে) ‘প্রতিক্রিয়াশীল’, ‘মৌলবাদী’, এমনকি ‘মানবতাবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা দেখা যায়। এই চিহ্নিতকরণ অনেক সময় নৈতিক বর্জন, সামাজিক বয়কট এবং রাজনৈতিক দমনকে ন্যায্যতা দেয়। এই দ্বিমুখিতা তথা নিজেদের মানবতাবাদী দাবি করে ভিন্নমত নির্মূলের ভাষা, বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির একটি গভীর স্ববিরোধ।
এই লেখায় আমি এই স্ববিরোধকে তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করব, সংবাদমাধ্যমের ফ্রেমিং ও নীরবতার রাজনীতি আলোচনা করব এবং সাম্প্রতিক ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রেক্ষিতে তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের নীরবতা কীভাবে এই স্ববিরোধকে উন্মোচন করে তা দেখাবো।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : নৈতিক ভাষা থেকে ক্ষমতার যন্ত্র
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাধারণত স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এই ধারণা যখন একটি একচেটিয়া নৈতিক মানদণ্ডে রূপ নেয়, তখন তা ভিন্নমতকে সহ্য করার বদলে দমন করার ভাষা তৈরি করে। এখানে ‘চেতনা’ আর বহুত্ববাদী আলোচনার ক্ষেত্র নয়; বরং একটি পরীক্ষার মানদণ্ড, যেখানে উত্তীর্ণ হলেই আপনি দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল; আর অকৃতকার্য হলেই আপনি সন্দেহভাজন।
এই রূপান্তরটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নৈতিকতা ও ক্ষমতার মধ্যে সীমারেখা মুছে দেয়। নৈতিক অবস্থান রাজনৈতিক কর্তৃত্বে পরিণত হলে, বিরোধী মতকে শুধু ভুল নয়, অনৈতিক ও বিপজ্জনক হিসেবে চিত্রিত করা সহজ হয়।
এই স্ববিরোধ বোঝার জন্য Feldman (2003, 2020)-এর কর্তৃত্ববাদ (authoritarianism) তত্ত্ব বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। Feldman কর্তৃত্ববাদকে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে সামাজিক সামঞ্জস্য (conformity), কঠোর নৈতিক শৃঙ্খলা এবং কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য। এর বিপরীতে উদারপন্থি বা লিবারাল মূল্যবোধের কেন্দ্রে রয়েছে স্বায়ত্তশাসন (autonomy), ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বৈচিত্র্য ও প্রগতিশীল চিন্তার প্রতি অঙ্গীকার।
Feldman দেখান, যারা সামঞ্জস্যকে উচ্চ মূল্য দেয় তারা সামাজিক বিঘ্ন, মতভিন্নতা বা বিদ্যমান নৈতিক কাঠামোর প্রতি হুমকিতে তীব্রভাবে উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজনা থেকে জন্ম নেয় অসহিষ্ণুতা এবং কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল। Stenner (2005) এই প্রবণতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে বলেন যে, কর্তৃত্ববাদীরা যখন হুমকি অনুভব করে, তখন তারা ভিন্নমতকে সহ্য করার বদলে নির্মূলের দিকে ঝোঁকে।
বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীল বয়ানে এই তত্ত্বের একটি বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়। বাহ্যিকভাবে তারা লিবারাল মূল্যবোধের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’কে একটি কঠোর নৈতিক শৃঙ্খলা হিসেবে স্থাপন করে, যার বাইরে গেলেই সবাই শাস্তিযোগ্য। অর্থাৎ, লিবারাল ভাষার ভেতরেই একটি কর্তৃত্ববাদী মনোভাব কাজ করে। এটিকে বলা যেতে পারে liberal authoritarianism, যেখানে মুক্তির ভাষা ব্যবহার করে ভিন্নমতের দমনকে ন্যায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ‘অপর’ (other) নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যারা রাষ্ট্রের ইতিহাস, ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক বা বিচারব্যবস্থার প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করে, তাদেরকে একত্রে ‘মৌলবাদী’, ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’ বা ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে ফ্রেম করা হয়। এই লেবেলিং যুক্তিতর্কের জায়গা সংকুচিত করে এবং নৈতিক বর্জনকে স্বাভাবিক করে তোলে। নৈতিক বর্জনের এই প্রক্রিয়া Feldman-এর তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ; সামাজিক সামঞ্জস্যে বিশ্বাসী গোষ্ঠী ভিন্নমতকে সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে এবং কঠোর প্রতিক্রিয়াকে ন্যায্য মনে করে।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা : ফ্রেমিং, নীরবতা ও স্বাভাবিকীকরণ
এই নৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে স্বাভাবিক করে তুলতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো নিজেদেরকে উদার, মানবতাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে এই পত্রিকাগুলোর ফ্রেমিং সমান নয়।
একই ধরনের সহিংসতা যখন ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা ঘটে, তখন তা প্রায়ই ‘সংঘর্ষ’, ‘পাল্টাপাল্টি ধাওয়া’ বা ‘অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হামলা’ হিসেবে বর্ণিত হয়, যেখানে হামলাকারী বা সংঘর্ষে অংশ নেওয়া সহিংস গোষ্ঠীর পরিচয় গোপন করা হয়। অপরদিকে বিরোধীদল বা ইসলামপন্থিদের ঘটনায় শিরোনামেই দলীয় পরিচয়, আদর্শিক লেবেল ও হুমকির ভাষা জোরালোভাবে উপস্থিত থাকে। এই পার্থক্য পাঠকের মনে সহিংসতার নৈতিক মানচিত্র তৈরি করেÑকে ‘স্বাভাবিক’, কে ‘বিপজ্জনক’।
এর পাশাপাশি রয়েছে নীরবতার রাজনীতি। কিছু ঘটনা সংবাদযোগ্য হলেও সম্পাদকীয় গুরুত্ব পায় না, মতামত কলামে আলোচিত হয় না বা সুশীল সমাজের বিবৃতিতে অনুপস্থিত থাকে। এই নীরবতাও একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলা এই নীরবতার রাজনীতিকে স্পষ্ট করে। একজন লেখক/বুদ্ধিজীবী হিসেবে তার রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্য কারো কারো কাছে বিতর্কিত হতে পারে, কিন্তু সেটি কোনোভাবেই সহিংস হামলার ন্যায্যতা দেয় না। গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী নীতিতে বিশ্বাসী সমাজে এমন হামলার বিরুদ্ধে সর্বজনীন নিন্দা প্রত্যাশিত।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ ছোটখাটো সামাজিক ঘটনায়, এমনকি রাস্তায় একটি কুকুরের মৃত্যুতেও ‘বিবেকের তাড়না’ থেকে বিবৃতি দেয়, তারা এ ঘটনায় প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। এই নীরবতা কাকতালীয় নয়; এটি নৈতিক বর্জনেরই আরেক রূপ।
ওসমান হাদিকে ‘অগ্রহণযোগ্য মতের ধারক’ হিসেবে ফ্রেম করার ফলে তার ওপর সহিংসতা যেন নৈতিক জরুরি অবস্থায় পরিণত হয় না। Feldman-এর তত্ত্ব অনুযায়ী, এখানে সামাজিক সামঞ্জস্যের ধারণা হুমকির মুখে পড়েছে বলে ‘প্রগতিশীল গোষ্ঠী’ মনে করেছে এবং তাদের কাছে সেই হুমকির জন্য দায়ী ব্যক্তি মানবিক মর্যাদা হারিয়ে হত্যাযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এই নীরবতা সুশীল সমাজের একটি দ্বৈত মানদণ্ড প্রকাশ করে। মানবতাবাদ এখানে সর্বজনীন নয়; এটি শর্তসাপেক্ষ। যিনি নির্দিষ্ট নৈতিক-রাজনৈতিক বৃত্তের ভেতরে, তার জন্য সহমর্মিতা; বাইরে থাকলে নীরবতা বা ন্যায্যতার অজুহাত।
এই দ্বৈত মানদণ্ড দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কারণ সহিংসতার নিন্দা যদি আদর্শগত পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে, তবে মানবাধিকার একটি রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়।
এই পরিস্থিতির সাংস্কৃতিক প্রভাব গভীর। লেখক, গবেষক ও শিল্পীরা ক্রমে আত্মনিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলা নিরাপদ মনে হয়। মুক্তবুদ্ধির জায়গা সংকুচিত হয়, যদিও প্রকাশ্যে সবাই মুক্তচিন্তার কথা বলে।
এটি একটি নীরব কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে শাস্তি সবসময় দৃশ্যমান নয়, কিন্তু ভয় সর্বত্র উপস্থিত।
সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন, ভাষা ও ফ্রেমিং : নাম, নীরবতা এবং দায় বণ্টন
সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাত কেবল কী লেখা হলো তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; কীভাবে লেখা হলো সেই প্রশ্নটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বহু প্রতিবেদনে একটি পুনরাবৃত্ত কাঠামো লক্ষ করা যায় : ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট সহিংসতায় ‘অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত’, ‘সংঘর্ষ’, ‘পাল্টাপাল্টি ধাওয়া’ এ ধরনের ভাষা ব্যবহৃত হয়; কিন্তু বিরোধীদল বা ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর ঘটনায় শিরোনামেই দলীয় পরিচয়, আদর্শিক লেবেল ও হুমকির ভাষা যুক্ত থাকে। এই হেডলাইন-রাজনীতি পাঠকের মনে সহিংসতার দায় বণ্টনের একটি নৈতিক মানচিত্র তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের জড়িত ঘটনায় প্রায়ই দেখা যায় ‘সংঘর্ষে নিহত’, ‘সহিংসতায় আহত’ যেখানে কর্তা অস্পষ্ট। বিপরীতে বিরোধীদলের ক্ষেত্রে ‘বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা’, ‘ইসলামপন্থিদের তাণ্ডব’ এ ধরনের সক্রিয় ও ব্যক্তিকৃত দায় আরোপ করা হয়। এই পার্থক্য ঘটনাকে নয়, বরং ঘটনাকারীর পরিচয়কে সংবাদমূল্য দেয়। ফলে পাঠক অচেতনভাবেই শিখে নেয় যে কার সহিংসতা ব্যতিক্রম, আর কার সহিংসতা স্বভাব।
এই ফ্রেমিং Feldman-এর কর্তৃত্ববাদ তত্ত্বের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সামাজিক সামঞ্জস্যের নৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ‘নিজেদের’ সহিংসতা নরম ভাষায় ঢেকে রাখা হয়, আর ‘অন্যদের’ সহিংসতা কঠোরভাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি কেবল সংবাদ নয়; এটি সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার এক ধরনের ভাষিক প্রযুক্তি।
নীরবতার রাজনীতি পুনর্বিবেচনা : কোন সহিংসতা সংবাদযোগ্য
নীরবতা নিজেই একটি সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত।
কোন ঘটনার পর সম্পাদকীয় লেখা হবে, কোন ঘটনার পর বিবৃতি আসবে, কোনটি কেবল সংক্ষিপ্ত খবরে সীমাবদ্ধ থাকবেÑএসব সিদ্ধান্ত একটি নৈতিক অগ্রাধিকার প্রকাশ করে। ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর যে নীরবতা দেখা গেছে, তা এই অগ্রাধিকারের রাজনৈতিক চরিত্র উন্মোচন করে।
এই নীরবতা বোঝাতে আমরা ‘selective moral panic’ ধারণাটি ব্যবহার করতে পারি। যখন কোনো ঘটনা প্রগতিশীল নৈতিক কাঠামোর ভেতরে ফিট করে, তখন তা বিবেকের তাড়নায় পরিণত হয়; আর যখন ফিট করে না, তখন তা গুরুত্ব হারায়। ফলে মানবতাবাদ এখানে সর্বজনীন নীতি নয়, বরং গোষ্ঠীগত আনুগত্যের ফাংশন।
Feldman-এর তত্ত্বের সঙ্গে Gramsci-র hegemony ধারণা যুক্ত করলে চিত্রটি আরো স্পষ্ট হয়। সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজ মিলিতভাবে একটি নৈতিক হেজেমনি তৈরি করে, যেখানে নির্দিষ্ট বয়ান ‘স্বাভাবিক’ ও ‘সাধারণ বোধ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হেজেমনির ভেতরে সম্মতি উৎপাদিত হয় (manufacturing consent), আর ভিন্নমত অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক বলে প্রতীয়মান হয়।
এই প্রক্রিয়ায় কনফর্মিটি একটি নাগরিক গুণে পরিণত হয়। যে যত বেশি প্রভাবশালী নৈতিক ভাষার সঙ্গে সাযুজ্য রাখে, সে তত বেশি নিরাপদ। ফলে কর্তৃত্ববাদ এখানে সরাসরি রাষ্ট্রীয় দমন নয়; এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরে কাজ করা একটি নীরব শক্তি।
এই নৈতিক হেজেমনি জনপরিসরকে সংকুচিত করে। লেখক ও চিন্তকরা জানেন—কোন বিষয় তুললে নীরবতা বা আক্রমণ আসতে পারে। ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ে, সাহস কমে। দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক মরূকরণ ঘটায়, যেখানে বিতর্ক নেই, আছে শুধু অনুমোদিত পুনরুক্তি।
উপসংহার
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি সত্যিই মানবতাবাদ ও মুক্তবুদ্ধির উত্তরাধিকার হয়, তবে তার প্রথম শর্ত হওয়া উচিত সহিংসতার সর্বজনীন নিন্দা, আক্রান্তের পরিচয় নির্বিশেষে। Feldman-এর কর্তৃত্ববাদ তত্ত্ব আমাদের সতর্ক করে দেয় : শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্যের নামে, এমনকি লিবারাল ভাষা ব্যবহার করেও দমনকে ন্যায্য করা যায়।
ওসমান হাদির ওপর হামলা এবং সে ঘটনায় প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের নীরবতা দেখায় যে, সমস্যাটি ব্যক্তিবিশেষ নয়, একটি কাঠামো। এই কাঠামো ভাঙতে হলে সংবাদমাধ্যমের ফ্রেমিং, সুশীল সমাজের নৈতিক অগ্রাধিকার এবং আমাদের নিজেদের কনফর্মিটির আরাম সবকিছুকেই প্রশ্ন করতে হবে। সংলাপ, বহুত্ববাদ ও নৈতিক সাহস ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল একটি শাসন-ভাষায় পরিণত হবে, মুক্তির নয়।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

