ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ
ইসলামোফোবিয়া এমন একটি ধারণা, যা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অনৈতিক-অযৌক্তিক ভয়, ঘৃণা এবং বৈষম্যের সামাজিক-রাজনৈতিক রূপ, যা আজ বৈশ্বিক বাস্তবতা। এর শিকড় যেমন ইতিহাসে, তেমনি সমকালীন নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া আখ্যান ও নিরাপত্তা-রাজনীতিতেও। এই ধারণাটির প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনায় আনার পথিকৃৎ যুক্তরাজ্যের র্যানিমিড ট্রাস্ট। ১৯৯৭ সালের এক রিপোর্টে ইসলামোফোবিয়াকে ইসলাম ও অধিকাংশ মুসলিমের প্রতি ভয় এবং ঘৃণার শর্টহ্যান্ড বলে আখ্যায়িত করেন। ২০১৭ সালের ২০ বছর পূর্তির রিপোর্টে এটিকে ‘অ্যান্টি-মুসলিম রেসিজম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
ইসলামোফোবিয়ার শিকড় অনেক পুরোনো। মধ্যযুগে ক্রুসেড যুদ্ধের সময় ইউরোপীয় শক্তিগুলো ইসলামকে ‘শত্রু ধর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। উপনিবেশ যুগে মুসলিম সমাজকে দুর্বল করার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়। আধুনিক যুগে ৯/১১-এর ঘটনা কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং সেটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে দুটি রূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১. ইসলামের প্রচার-প্রসার বৃদ্ধি ও মুসলিম ক্ষমতায়নের ভীতি থেকে ইসলামিক অনুশাসন, বিধিবিধান, ও শা’আয়ের পালনে বাধা সৃষ্টি করা এবং ২. এর বিপরীতের নানা উসকানিমূলক আচরণ-কর্মে ইসলাম ও মুসলিমদের বিদ্রুপ করা। ফলে, মুসলিমরা যেন তাদের ঈমানি কারণে প্রতিবাদী হয় এবং তাদের জঙ্গি, উগ্রবাদী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে, তাদের বিরুদ্ধে নানা অপকৌশল বাস্তবায়ন করে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডেনিশ পত্রিকা জিল্যান্ড-পোস্টেনে ইসলামকে বিদ্রুপ করে কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে ১২টি কার্টুন ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়ানো হয়, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈ কিছুই নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মীয় প্রতীক (শি’আর) ‘হিজাব’ নিষিদ্ধের আইনও পাস করে কিছু দেশ। এমনকি অবাধ ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে খ্যাত দেশ স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে একই ভীতিতে বহু মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসবের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ কানাডার কুইবেক সিটির একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ছয়জন মুসল্লি নিহত হওয়া লক্ষ করি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৫ মার্চ ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের এক মসজিদে। সে হামলায় নিহত হন ৫১ জন মুসল্লি।
দুঃখজনক হলো—পাশ্চাত্যে আত্মপ্রকাশ হওয়া এ ধারণার প্রকোপ প্রাচ্যেও আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও এই ভীতি বিস্তার লাভ করেছে খুব সহজেই। পাশ্চাত্যের মতো ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়াকে ছড়িয়ে দিতে না পারলেও তাদের জ্ঞান-সংস্কৃতি ধারণ করা একটা গোষ্ঠী জেনে না জেনে তা সহজেই প্রমোট করছে আমাদের সংস্কৃতিতেও; অথচ আমরা মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে বাস করি।
সংবিধানের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হলেও ধর্মীয় অনুশাসন শুধু নয়, বরং ধর্মীয় শি’আরকে (চিহ্ন) কটাক্ষ করা এমনকি তা পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে-অবলীলায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনা, ঢাবিতে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর হিজাবে কালি লেপন এবং দাড়ি রাখায় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তত আমাদের তাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামোফোবিক একটা শ্রেনি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
যদিও স্কুলের ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে; কিন্তু এটুকুই কি যথেষ্ট? এটি তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ার কথা। এই দেশে কেউ কারো ধর্ম এবং তার রীতিনীতি পালনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না, এটিই তো আইন-বিধান। তাহলে, বারবার এ ধরনের উদাহরণ যারা সৃষ্টি করছে, তাদের শিকড় কোথায়? গত ২১ আগস্ট ২০২৫ হবিগঞ্জ জেলায় তিন কনস্টেবলকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দাড়ি রাখার অপরাধে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়ার আদেশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রশ্ন হলো, ব্লাসফেমি আইনের ব্যবহার কি তাহলে অন্য ধর্মের জন্য? সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলিম কি তাহলে সংখ্যালঘু হিসেবে সাব্যস্ত হবে?
ইসলাম ধর্মে শরয়ি আবশ্যকীয় বিধান পালনের পাশাপাশি তার শি’আরগুলো (চিহ্ন) পালন করাও অপরিহার্য। বাহ্যিক এই রূপ ইসলামের মৌলিকত্ব ও অনন্যতা প্রকাশ করছে যুগ যুগ ধরে। অথচ বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশেও এগুলো পালন আজ বড়ই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখুন, আমরা নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করি বটে কিন্তু আমরা কি সত্যিকারের মুসলিম হয়ে উঠতে পারছি? যুক্তির খাতিরে এটা হয়তো বলা যায়, সব মুসলিমরা কি ইসলামের মৌলিক বিধান, শি’আর পালন করে? তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ির অর্থ কী?
অর্থ আছে। কেউ ইসলামের মৌলিক বিধান যথাযথভাবে পালন না করার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অবশ্যই এ ব্যাপারে ওই ব্যক্তি জিজ্ঞাসিত হবে; শাস্তি পাবে। গুরুতর অপরাধের শাস্তি। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি ওইসব বিধানকে, শরয়ি চিহ্নকে অস্বীকার করে, তাহলে সে ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ফলে, কোনো বিধান পালন না করার চেয়ে তা অস্বীকার করা যেমন বেশি গুরুতর অপরাধ, তেমনি তা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ব্যঙ্গ করাও একই ধরনের অপরাধ। আল্লাহ বলছেন, যারা রাসুলের আদেশের বিরোধিতা করে—তারা সতর্ক থাকুক, কোনো বিপর্যয় বা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদের ওপর না এসে পড়ে।’ (সুরা নুর : ৬৩) এই আয়াতের মাধ্যমে ফিকহে একটি সাধারণ বিধেয় স্থাপন করা হয়েছে। তা হলো স্বীকৃত ইসলামি বিধান অস্বীকার, উপহাস, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, লঙ্ঘন করা কুফরির শামিল।
ইসলামোফোবিয়া শুধু ব্যক্তিগত কুসংস্কার নয়; এটি কাঠামোগত বৈষম্যের ভাষা, যা আইন, নীতি, মিডিয়া ও জন-আলোচনায় প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সম্পর্কিত ঘটনাগুলো কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। শরিয়তের দৃষ্টিতে শা’আইর রক্ষা ঈমানি দায়িত্ব। নাগরিক-আইনের দৃষ্টিতে তা মৌলিক অধিকার। নীতিগত পথ দুটি—ক. বৈধ সীমার মধ্যে ব্যক্তির ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং খ. উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, হিংসা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ও শাস্তি নিশ্চিত করা। এই ভারসাম্যই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একমাত্র টেকসই উপায়।
লেখক : গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ইসলামোফোবিয়া এমন একটি ধারণা, যা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অনৈতিক-অযৌক্তিক ভয়, ঘৃণা এবং বৈষম্যের সামাজিক-রাজনৈতিক রূপ, যা আজ বৈশ্বিক বাস্তবতা। এর শিকড় যেমন ইতিহাসে, তেমনি সমকালীন নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া আখ্যান ও নিরাপত্তা-রাজনীতিতেও। এই ধারণাটির প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনায় আনার পথিকৃৎ যুক্তরাজ্যের র্যানিমিড ট্রাস্ট। ১৯৯৭ সালের এক রিপোর্টে ইসলামোফোবিয়াকে ইসলাম ও অধিকাংশ মুসলিমের প্রতি ভয় এবং ঘৃণার শর্টহ্যান্ড বলে আখ্যায়িত করেন। ২০১৭ সালের ২০ বছর পূর্তির রিপোর্টে এটিকে ‘অ্যান্টি-মুসলিম রেসিজম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
ইসলামোফোবিয়ার শিকড় অনেক পুরোনো। মধ্যযুগে ক্রুসেড যুদ্ধের সময় ইউরোপীয় শক্তিগুলো ইসলামকে ‘শত্রু ধর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। উপনিবেশ যুগে মুসলিম সমাজকে দুর্বল করার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়। আধুনিক যুগে ৯/১১-এর ঘটনা কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং সেটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে দুটি রূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১. ইসলামের প্রচার-প্রসার বৃদ্ধি ও মুসলিম ক্ষমতায়নের ভীতি থেকে ইসলামিক অনুশাসন, বিধিবিধান, ও শা’আয়ের পালনে বাধা সৃষ্টি করা এবং ২. এর বিপরীতের নানা উসকানিমূলক আচরণ-কর্মে ইসলাম ও মুসলিমদের বিদ্রুপ করা। ফলে, মুসলিমরা যেন তাদের ঈমানি কারণে প্রতিবাদী হয় এবং তাদের জঙ্গি, উগ্রবাদী ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে, তাদের বিরুদ্ধে নানা অপকৌশল বাস্তবায়ন করে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডেনিশ পত্রিকা জিল্যান্ড-পোস্টেনে ইসলামকে বিদ্রুপ করে কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ করে ১২টি কার্টুন ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়ানো হয়, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈ কিছুই নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মীয় প্রতীক (শি’আর) ‘হিজাব’ নিষিদ্ধের আইনও পাস করে কিছু দেশ। এমনকি অবাধ ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে খ্যাত দেশ স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে একই ভীতিতে বহু মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসবের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ কানাডার কুইবেক সিটির একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ছয়জন মুসল্লি নিহত হওয়া লক্ষ করি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৫ মার্চ ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের এক মসজিদে। সে হামলায় নিহত হন ৫১ জন মুসল্লি।
দুঃখজনক হলো—পাশ্চাত্যে আত্মপ্রকাশ হওয়া এ ধারণার প্রকোপ প্রাচ্যেও আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও এই ভীতি বিস্তার লাভ করেছে খুব সহজেই। পাশ্চাত্যের মতো ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়াকে ছড়িয়ে দিতে না পারলেও তাদের জ্ঞান-সংস্কৃতি ধারণ করা একটা গোষ্ঠী জেনে না জেনে তা সহজেই প্রমোট করছে আমাদের সংস্কৃতিতেও; অথচ আমরা মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে বাস করি।
সংবিধানের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হলেও ধর্মীয় অনুশাসন শুধু নয়, বরং ধর্মীয় শি’আরকে (চিহ্ন) কটাক্ষ করা এমনকি তা পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে-অবলীলায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনা, ঢাবিতে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর হিজাবে কালি লেপন এবং দাড়ি রাখায় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তত আমাদের তাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামোফোবিক একটা শ্রেনি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
যদিও স্কুলের ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে; কিন্তু এটুকুই কি যথেষ্ট? এটি তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ার কথা। এই দেশে কেউ কারো ধর্ম এবং তার রীতিনীতি পালনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না, এটিই তো আইন-বিধান। তাহলে, বারবার এ ধরনের উদাহরণ যারা সৃষ্টি করছে, তাদের শিকড় কোথায়? গত ২১ আগস্ট ২০২৫ হবিগঞ্জ জেলায় তিন কনস্টেবলকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দাড়ি রাখার অপরাধে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়ার আদেশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রশ্ন হলো, ব্লাসফেমি আইনের ব্যবহার কি তাহলে অন্য ধর্মের জন্য? সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলিম কি তাহলে সংখ্যালঘু হিসেবে সাব্যস্ত হবে?
ইসলাম ধর্মে শরয়ি আবশ্যকীয় বিধান পালনের পাশাপাশি তার শি’আরগুলো (চিহ্ন) পালন করাও অপরিহার্য। বাহ্যিক এই রূপ ইসলামের মৌলিকত্ব ও অনন্যতা প্রকাশ করছে যুগ যুগ ধরে। অথচ বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশেও এগুলো পালন আজ বড়ই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখুন, আমরা নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করি বটে কিন্তু আমরা কি সত্যিকারের মুসলিম হয়ে উঠতে পারছি? যুক্তির খাতিরে এটা হয়তো বলা যায়, সব মুসলিমরা কি ইসলামের মৌলিক বিধান, শি’আর পালন করে? তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ির অর্থ কী?
অর্থ আছে। কেউ ইসলামের মৌলিক বিধান যথাযথভাবে পালন না করার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অবশ্যই এ ব্যাপারে ওই ব্যক্তি জিজ্ঞাসিত হবে; শাস্তি পাবে। গুরুতর অপরাধের শাস্তি। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি ওইসব বিধানকে, শরয়ি চিহ্নকে অস্বীকার করে, তাহলে সে ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ফলে, কোনো বিধান পালন না করার চেয়ে তা অস্বীকার করা যেমন বেশি গুরুতর অপরাধ, তেমনি তা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ব্যঙ্গ করাও একই ধরনের অপরাধ। আল্লাহ বলছেন, যারা রাসুলের আদেশের বিরোধিতা করে—তারা সতর্ক থাকুক, কোনো বিপর্যয় বা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদের ওপর না এসে পড়ে।’ (সুরা নুর : ৬৩) এই আয়াতের মাধ্যমে ফিকহে একটি সাধারণ বিধেয় স্থাপন করা হয়েছে। তা হলো স্বীকৃত ইসলামি বিধান অস্বীকার, উপহাস, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, লঙ্ঘন করা কুফরির শামিল।
ইসলামোফোবিয়া শুধু ব্যক্তিগত কুসংস্কার নয়; এটি কাঠামোগত বৈষম্যের ভাষা, যা আইন, নীতি, মিডিয়া ও জন-আলোচনায় প্রতিফলিত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সম্পর্কিত ঘটনাগুলো কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। শরিয়তের দৃষ্টিতে শা’আইর রক্ষা ঈমানি দায়িত্ব। নাগরিক-আইনের দৃষ্টিতে তা মৌলিক অধিকার। নীতিগত পথ দুটি—ক. বৈধ সীমার মধ্যে ব্যক্তির ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং খ. উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, হিংসা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ও শাস্তি নিশ্চিত করা। এই ভারসাম্যই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একমাত্র টেকসই উপায়।
লেখক : গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৬ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৬ দিন আগে