ইসলামে বইপাঠের গুরুত্ব

আব্দুল্লাহ আল-মামুন আশরাফী
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৩৫

বইপাঠ ও জ্ঞানচর্চা আত্মার প্রশান্তি বয়ে আনে। ইসলাম বইপাঠ ও জ্ঞানচর্চার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। মুসলিমমাত্রই জ্ঞানমনস্ক হবে। বইয়ের উষ্ণ সান্নিধ্যে তার প্রাণ জুড়াবে। থরে থরে সাজানো লাইব্রেরির বইগুলো দেখলেই তার মনে আনন্দের হিল্লোল বইবে। কারণ, বইপাঠের মাধ্যমে সে অজ্ঞতা আঁধার থেকে জ্ঞানের আলোকিত রাজপথে এগিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

কোরআনের প্রথম বাণী ‘পড়ো’

আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার কোরআন মাজিদের প্রথম নির্দেশনাই হচ্ছে ‘পড়ো’। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক : ০১)

আয়াতের বার্তা দ্ব্যর্থহীন-ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়াশোনা এবং জ্ঞানচর্চা। আর সেই পড়াশোনা হতে হবে আল্লাহর নামে। আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ইসলামকে সুগভীরভাবে জানার এবং দ্বীনের চাহিদানুযায়ী জীবন গড়ার পবিত্র লক্ষ্যেই জ্ঞানচর্চার সুবিস্তৃত ময়দানে পদার্পণ করতে হবে।

কোন ধরনের বই পাঠ করবো?

কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত ইলম বা জ্ঞানের সন্ধান পেতে আমাদের সর্বপ্রথম কোরআন মাজিদ পাঠ করতে হবে। কারণ, কোরআন মাজিদ আমাদের স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী দলিলের মাধ্যমে। কোরআন মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখায়। ইরশাদ হয়েছে‘রমজান মাস সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যে কোরআন মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)

এরপর কোরআন মাজিদের বিশদ ব্যাখ্যামালা হাদিস শরিফের পাঠে আত্মনিয়োগ করতে হবে। কারণ, হাদিস শরিফের পাঠ ছাড়া কোরআন মাজিদ বোঝা অসম্ভব। অতঃপর কোরআন ও সুন্নাহর সারনির্যাস ফিকহ তথা যাপিত জীবনে পালনীয় ইসলামি বিধিবিধান বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এভাবে কোরআন সুন্নাহ রিলেটেড বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর বান্দাদের উপকার বয়ে আনে এমন বিষয়ে লিখিত বইপত্র পাঠের বিষয়েও কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যেসব বইপত্র মানুষকে আল্লাহ ও রাসুলের স্মরণকে ভুলিয়ে দেয়, চিন্তাচেতনা ও আখলাক চরিত্র নষ্ট করে, সেসব বইপত্র এড়িয়ে যেতে হবে। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা এ জাতীয় আয়োজন (গান-বাজনা বা অশ্লীল সাহিত্যচর্চা ও নিরর্থক বিনোদন) করে আল্লাহ তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ধমকিবাণী দিয়ে বলেন, ‘কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য খরিদ করে, এমন সব কথা, যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (সুরা লুকমান : ৬)

কাদের লেখা বই পড়ব?

কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে যারা পরিপক্ব, তাদের লেখা বইপত্র অধ্যয়ন করতে হবে। যারা জ্ঞানার্জনের ট্রাডিশনাল ধারা তথা দক্ষ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে একটা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত একাডেমিক পড়াশোনার স্তরগুলো পার করেছেন এবং সালাফে সালেহিন ও আকাবিরে দ্বীন অর্থাৎ পূর্বসূরি উলামায়ে কেরামের চিন্তাচেতনা ও কর্মপন্থা অনুসরণ করে জ্ঞান-গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন, তাদের লেখা বইপত্র অধ্যয়ন করা উচিত। কোরআন মাজিদে এমন পরিপক্ব জ্ঞানের অধিকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে।

বই নির্বাচনে সতর্কতা কাম্য

বই মানেই পাঠের উপযুক্ত না। পাঠ বা অধ্যয়ন হচ্ছে দোধারী তরবারির মতো। এর ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে। তাই বই নির্বাচনে সতর্কতা কাম্য। আপনি যদি সাধারণ মানের পাঠক হন, তাহলে অবশ্যই একজন দক্ষ সচেতন বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হোন। তার নির্দেশনায় বই নির্বাচন করে পাঠ করুন। এ ক্ষেত্রে কোরআনের নির্দেশনাটা মনে রাখুনÑ‘সুতরাং যদি তোমরা না জানো তাহলে আহলুজু জিকরকে (কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন ব্যক্তিকে) জিজ্ঞেস করে নাও।’ (সুরা আম্বিয়া : ৭)

জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া করুন

কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা নবীজি (সা.)-কে জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এখান থেকেও ইসলামে জ্ঞানচর্চা ও পড়াশোনার গুরুত্ব কত বেশি, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জ্ঞানে আরো উন্নতি দান করুন।’ (সুরা তোয়াহা : ১১৪)

ইবাদতের চেয়েও জ্ঞানচর্চা প্রিয়

নবীজি (সা.)-এর পুরো জীবনই ছিল আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত। তিনি আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। এত কিছুর পরও তিনি হৃদয়ে আনন্দিত বোধ করতেন ইলম তথা জ্ঞানচর্চায়। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘অধিক ইবাদতের চেয়ে অধিক ইলম আমার কাছে বেশি প্রিয়।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৯২)

জ্ঞানচর্চা ও বইপাঠ ইসলামের অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে চলছে আন্তর্জাতিক ইসলামি বইমেলা। সুযোগ করে সপরিবারে চলে আসুন মেলায়। বই দেখুন, কিনুন, উপহার দিন এবং সর্বোপরি বই পড়ুন এবং চারপাশে পড়ার অভ্যাস ছড়িয়ে দিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখজানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত