সন্ত্রাস নির্মূলে মহানবীর নির্দেশনা

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ১৩

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার বিস্ময়কর নববি সমাধান এনেছেন। সমাজে যে সমাধান প্রয়োগ করা হয়েছে প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দয়া-ভালোবাসার মিশেলে পরিপূর্ণ ইসলামি আদর্শের আলোকে। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে তার সাহাবিদের অন্তরে আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক দর্শনের চিন্তা প্রবেশ করিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহতায়ালা এবং বান্দার অধিকারগুলো আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান হয়ে ওঠে। ফলে সে আর সহিংসতা প্রদর্শন করে না। সন্ত্রাসে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে জানে আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বক্ষণ দেখছেন। তার সব গোপন বিষয়ও তিনি জানেন।

বিজ্ঞাপন

সমাজ বিনির্মাণে কোমলতা ও সহানুভূতি

সমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে কোমলতা, সহানুভূতি ও ন্যায়পরায়ণতার উন্মেষ ঘটানো। সবাই সবার প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়পূর্ণ আচরণ করবে। কোনো জাতি-ধর্ম বা বংশের কারণে কারো প্রতি কোনো পার্থক্য করা হবে না। যেমন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা কোমল ও দয়ালু। তিনি কোমলতা পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার কারণে যা দান করেন কঠোরতা বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে তা দান করেন না।’ (মুসলিম : ২৫৯৩)

মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্য বজায় রাখা

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে কার্যকর একটি উপায় হচ্ছে মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় দ্বীন হচ্ছে সহজ বিষয়। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে, দ্বীন তার ওপর জয়ী হয় (অর্থাৎ দ্বীন পালনে সে অক্ষম হয়ে যায়)। কাজেই তোমরা মধ্যমপন্থায় আমল করো, (আমল করার ব্যাপারে) সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সকালে, দুপুরে ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাও।’ (বোখারি : ৩৯)

শান্তিকামী মানসিকতা তৈরি

সমাজের সব সদস্যের মধ্যে শান্তিকামী হওয়ার মানসিকতা তৈরি। এটি এমন এক মূল্যবোধ, যার দ্বারা গুণান্বিত মানুষকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার প্রতিপালকের কাছে এবং সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এমনকি এই শান্তিকামী মনোভাবের সুদূর বিস্তৃত সীমাও তিনি আমাদের কাছে বিবৃত করেছেন।

হজরত জাবের (রা.) বলেন, একবার এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোন মুসলমান শ্রেষ্ঠ?’ উত্তরে নবীজি (সা.) বললেন, ‘যে মুসলমানের জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে, সে মুসলমানই শ্রেষ্ঠ।’ (বোখারি : ৬৪৮৪)

অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরা

সমাজ থেকে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরা। যাতে মানুষের অন্তরে অপরাধের প্রতি ঘৃণাবোধ তৈরি হয়। নবীজি (সা.) কার্যকর এই কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন। আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরাইরা (রা.) যৌথভাবে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সবাই একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরিক থাকে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাদের সবাইকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (জামে তিরমিজি : ১৩৯৮)

দুর্বৃত্তদের রুখতে চাই দণ্ডবিধির যথাযথ প্রয়োগ

কোমলতা ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে সমাজের একটা বড় থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর করা গেলেও কিছু কিছু বিচ্যুত মানুষ সমাজে থাকবেই। তাদের প্রবৃত্তি তাদের প্রলুব্ধ করে সমাজকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে এবং নিজেরা সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে। তাদের জন্যই প্রয়োজন হয় শরিয়তের এমন সব আইন ও দণ্ডবিধানের, যেগুলো তাদের এসব অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে।

শরিয়তের এমন কিছু দৃষ্টান্ত হলো, কিসাস, বিদ্রোহ, ডাকাতি ইত্যাদির দণ্ডবিধান। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদের দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হবে। এটি তো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি।’ (সুরা মায়িদা : ৩৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব দণ্ড বাস্তবায়নে দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। কেননা এর মধ্যে পুরো সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে ছিল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত