আটলান্টিকে সাঁতার কাটা রূপকথার গল্পের মতো

মাহফিজুর রহমান সাগর
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ০০
মাহফিজুর রহমান সাগর

অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল- আমি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেব। পরিকল্পনাটা করেছিলাম ২০১৫-১৬ সালের দিকে। সোলো করার ইচ্ছা ছিল। ফাইনালি রিলেতে করেছি। দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে থাকতে ২০২৩ সালে আমরা স্লট পাই। এই স্লটে ২০২৫ এ সাঁতার কাটতে পারব- এই রকম। কিন্তু টিম দরকার ছিল আমার জন্য। রিলে টিম বানাতে একটু চাপ নেওয়া লাগছে আমার।

বিজ্ঞাপন

এখানে উপযুক্ত টিম ছাড়া যদি অন্য যেকোনো একজনের ভুলে পুরো টিম ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বা পরিকল্পনাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখানে অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ভিসা প্রসেস থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনার ব্যাপার ছিল। এছাড়া আবহাওয়া, পানির তাপমাত্রাসহ অন্য বিষয়গুলোও ছিল। একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম।

তবে ঠান্ডা পানিতে, আইস বার্থ, রেগুলার সুইমিং করে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।
রাতে কখনো সুইমিংপুলেও সাঁতার কাটিনি। পুকুরেও না। আমাদের সাঁতারটা শুরু হয়েছিল রাত ২টা ৪৩ মিনিটে। আমিই শুরু করেছিলাম ইংল্যান্ডের সাইড থেকে। তো আটলান্টিক মহাসাগরে ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা- খুবই ভয়াবহ অবস্থা। তার আগে সি সিকনেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমার।

যেখান থেকে সাঁতার শুরু সেখান থেকে। এর মধ্যে ২০-২৫ মিনিটের একটা দূরত্ব ছিল, যেটি বোটের দূরত্ব। বোটে করে যেতে হয়। তো ওখানে যাওয়ার সময় বমি শুরু করে দিই। চিন্তা করি, এই অসুস্থতা নিয়ে কী আমি সাঁতার কাটব, কীভাবে সম্ভব। তারপর বমি করতে করতে ফাইনালি দ্রুত প্রস্তুত হয়েছি এবং সাঁতার শুরু করেছি। সাঁতার শুরু করার পরও বমি করি। এভাবে চলতে চলতে এক সময় ফ্রান্সে যাই।


ঠান্ডা পানি, ঢেউ, ঢেউয়ের বিপরীতে সাঁতার কাটা, লবণাক্ত পানি, জেলি ফিশ, মাঝ সমুদ্রে জাহাজ আসা-যাওয়ার ঢেউ, ফেরি যাতায়াত- আসলে এসব মিলে রূপকথার গল্পের মতোই ব্যাপারটা আসলে। ইংল্যান্ড থেকে শুরু করেছি আমি। আর ফ্রান্সের গিয়ে স্পর্শ করা বা দাঁড়ানো- সেটাও আমার। সেক্ষেত্রে আসলে সবকিছু মিলে এটা ছিল একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। ব্যাপারটি স্বপ্নের থেকেও সুন্দর বলা যায়। সবকিছু মিলে আমি সার্থক, সাফল্য এসেছে। আমি মনে করি, সাফল্য পাওয়ার পেছনে মানসিক শক্তিটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

* মাহফিজুর রহমান সাগর, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া সাঁতারু

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত