টটেনহামের শোকেসে ইউরোপার শিরোপা

‘কিংবদন্তি’ সনের মাথায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ০৫: ০০
শিরোপা হাতে সন হিউং-মিনের উচ্ছ্বাস, ছবি: এক্স হ্যান্ডেল

শিরোপা-খরা চলছিল টটেনহাম হটস্পারে। ঠিক ১৭ বছর ধরে এমনটা চলছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হলো। স্পার শিবিরের শোকেসে উঠেছে রুপালি ট্রফি। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের ঘরের মাঠ সান মামেসে কেটেছে সেই খরা। গত বুধবার রাতে অল ইংলিশ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে টটেনহাম।

টটেনহামের আগে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০০৮ সালে। ঘরে তুলেছিল তারা ইংলিশ লিগ কাপ। দীর্ঘ বিরতি শেষে এটাই টটেনহামের প্রথম শিরোপা। আর ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে দলটি চ্যাম্পিয়ন হলো দীর্ঘ ৪১ বছর পর। ১৯৮৪ সালে উয়েফা কাপ জিতেছিল তারা। ইউরোপা লিগ নামকরণের পর টুর্নামেন্টটিতে এই প্রথম শিরোপার দেখা পেল টটেনহাম।

টটেনহাম শিরোপার স্বাদ পেয়েছে একমাত্র গোলে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের ৪২ মিনিটে ফরোয়ার্ড ব্রেনান জনসনের উপহার দেওয়া গোলটি শিরোপার ভাগ্য গড়ে দেয়। লড়াই শেষে টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ক্যাপ্টেন সন হিউং-মিন ও তার সতীর্থদের ট্রফি উৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। আর গ্যালারিতে ক্লাবটির সমর্থকরা ফেটে পড়েন উল্লাসে। ১০ বছর আগে টটেনহামে নাম লেখান সন। এক দশকে স্পারদের হয়ে এটাই সনের প্রথম ট্রফি জয়ের সুখস্মৃতি। এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তো হবেই।

২০১৫ সালে এশিয়ান কাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মেনেছিল সনের জন্মভূমি দক্ষিণ কোরিয়া। শিরোপা স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়ায় রাজ্যের হতাশা আর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন স্পারদের এ তারকা ফুটবলার। তৎকালীন সকারু কোচ অ্যাঞ্জ পোস্তেকোগলু ফরোয়ার্ড সনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। সেই পোস্তেকোগলু এখন টটেনহাম কোচ। তার অধীনেই প্রিয় ক্লাবের জার্সিতে প্রথম শিরোপা জিতলেন সন। বর্ণিল ক্লাব ক্যারিয়ারে এটাই তার প্রথম শিরোপা। তার আগে এশিয়ান গেমস ফুটবলে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন সন- দক্ষিণ কোরিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে। এতদিন এটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের একমাত্র অর্জন।

মনের কোণে একটি সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে রেখেছিলেন সন। নিজের সেই স্বপ্নের কথা তিনি মৌসুমের শুরুতেই বলে রেখেছিলেন- টটেনহামের কিংবদন্তিদের তালিকায় নিজের নামটা যোগ করতে চান। কিন্তু সন ভেবেছিলেন, তেমন কিছু হয়তো তার পক্ষে করা সম্ভব হবে না। কিন্তু চলতি মৌসুমেই তার সেই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল। শিরোপা জয়ের পর এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই কোরিয়ান এ ফরোয়ার্ড একদিনের জন্য হলেও নিজেকে লিজেন্ড হিসেবে অভিহিত করলেন, ‘ঠিক আছে, আমি কিংবদন্তি। কেন নয়? শুধু আজকের (বুধবার) জন্য তো! ১৭ বছর ধরে এটা কেউ করতে পারেনি। অসাধারণ কিছু খেলোয়াড়ের কল্যাণে আজ সেই দিনটা চলেই এলো। আজ বলতে পারি যে, আমি এই ক্লাবের কিংবদন্তি।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বাকি আর এক ম্যাচ। কিন্তু টটেনহাম ঘুরপাক খাচ্ছে অবনমন অঞ্চলের আশপাশে। রেলিগেশন অঞ্চল থেকে এক ধাপ ওপরে মানে পয়েন্ট তালিকার ১৭তম স্থানে থেকে লিগ মৌসুম শেষ করতে যাচ্ছে স্পার শিবির। যে কারণে পোস্তেকোগলুর চাকরি যাচ্ছে বলে রব উঠে গিয়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেই টটেনহাম এখন ইউরোপায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে টিকিট কেটেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের। যদিও প্রিমিয়ার লিগে ৩৭ ম্যাচ খেলে ২১টিতেই হার মেনেছে টটেনহাম। চাকরি নিয়ে তাহলে দুশ্চিন্তা দূর হলো পোস্তেকোগলুর। তার প্রমাণ মিলল তার কণ্ঠেই, ‘যাই হোক না কেন, সেটা পরে দেখা যাবে।’

টটেনহামের কোচ হয়ে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে এসে শিরোপার সন্ধান পেয়েছেন পোস্তেকোগলু এবং অবিস্মরণীয় এই প্রাপ্তিটা এসেছে আবার ক্লাবটিতে নিজের শততম ম্যাচে। সেল্টিক, ইয়োকোহামা এফ মেরিনোস, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিসবেন রোয়ার্স অধ্যায়েও দ্বিতীয় মৌসুমে শিরোপা জিতেছেন। ব্যাপারটা মনে করিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এ ফুটবল গুরু বলেন, ‘আমি সব সময় নিজের দ্বিতীয় বছরে শিরোপা জিতি। কিছুই পাল্টায়নি। আমি একজন বিজয়ী। জেতার কাজটাই সবচেয়ে বেশি করি।’

অন্যদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বাজে একটা মৌসুম কাটাচ্ছে। এক ম্যাচ বাকি থাকতে রেড ডেভিলরা প্রিমিয়ার লিগে রয়েছে টটেনহামের ঠিক ওপরে- ১৬তম স্থানে। আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না ইউনাইটেড। ১৯৯০ সালের পর দ্বিতীয়বার ঘটতে যাচ্ছে এমনটা। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের পর সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটাচ্ছে এই ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাবটি। চরম হতাশার মৌসুমের শেষ বেলায় এসে ওল্ড ট্রাফোর্ড কোচ রুবেন আমোরিম চাকরি ছাড়তে প্রস্তুত, ‘বোর্ড এবং সমর্থকরা যদি মনে করেন আমি যোগ্য ব্যক্তি নই, তাহলে পরের দিনই আমি চলে যাব এবং ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনো বলব না।’

একনজরে ফল

টটেনহাম ১-০ ম্যানইউ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত