গেম চেঞ্জার যুদ্ধপ্রযুক্তি
আলফাজ আনাম
সামরিক অভিযানে যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দিচ্ছে ড্রোন। পাকিস্তান ও ভারতের হামলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর ড্রোন নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রেও অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে পাকিস্তান। এ নিয়ে সমরাঙ্গনে ইসলামাবাদ সবার দৃষ্টি কাড়ছে। ভারত এ পর্যন্ত যে ড্রোন ব্যবহার করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি ‘হারপ ড্রোন’। এগুলো আত্মঘাতী বা কামিকাজি শ্রেণির যুদ্ধসরঞ্জাম। নিক্ষেপের পর টার্গেটে আঘাত হেনে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এগুলো ভাসতে থাকে। হারপ ড্রোনগুলো ভয়াবহ, কারণ এগুলোর মধ্যে মিসাইল আর ড্রোন দুটো বৈশিষ্ট্যই সংযুক্ত আছে। এগুলো আকারে ছোট, মাত্র দুই মিটারের মতো লম্বা। এগুলো চিহ্নিত করাও কঠিন। ড্রোনগুলো ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে এবং টানা ছয় ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে। লক্ষ্যবস্তু খুঁজে না পেলে আবার ঘাঁটিতে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু এই ড্রোনগুলোকে একের পর এক ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত তারা ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছেন।
ভারত ইসরাইলি ড্রোনের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত অন্তত ২৫টি হারপ ড্রোন কিনেছে। প্রতি ধাপে ১০টি করে ড্রোন নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলার। নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত স্কাউটিং ড্রোনও ব্যবহার করে। এগুলোতেও হারপ ড্রোনের মতো মিসাইল সক্ষমতা আছে। বিপুল ড্রোন ভূপাতিত করার কারণে ভারতের ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। এর মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাময়িকী জেনস ডিফেন্স উইকলি গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের বিমানবাহিনী ৩৫ মিলিয়ন ডলারে ছোট আকারের বিপুলসংখ্যক নজরদারি ও আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহ পেতে শুরু করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ভয়ংকর সব ড্রোন। এসব ড্রোন নিয়ে ভারতের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। যদিও সেগুলোর ব্যবহার শুরু করেনি দেশটি। পাকিস্তানের কাছে চীন ও তুরস্কের ড্রোন ছাড়াও তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ড্রোন তৈরি করে পাকিস্তান। অন্যদিকে ড্রোনের ক্ষেত্রে ইসরাইলের ওপর নির্ভর করে থাকে ভারত। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা কয়েকটি ব্যয়বহুল ড্রোন আছে ভারতের কাছে। তবে ড্রোনযুদ্ধে পাকিস্তানের রয়েছে বিশেষ অভিজ্ঞতা। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান যুদ্ধে পাকিস্তান সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তুর্কি ড্রোনের চমকে সেই যুদ্ধে আজারবাইজান জিতে যায়।
ভারত সরকার ইতোমধ্যে দাবি করেছে, পাকিস্তান একযোগে ৫০০ ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে। তাদের দাবি, এসব ড্রোনে বিস্ফোরক ছিল না। অনেক ড্রোন তারা পাঠিয়েছিল গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে। এসব ড্রোনের মাধ্যমে তারা ভারতের বিভিন্ন অবস্থানের ছবি তুলে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। ভারত কিছু ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। ভারতের দাবি, ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন ছিল তুরস্কের তৈরি।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের কাছে মূলত শক্তিশালী ড্রোন আছে চীন ও তুরস্কের তৈরি। চীনের তৈরি যে ড্রোনগুলো পাকিস্তানের কাছে রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে উইং লুং টু। এটি তৈরি করেছে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ। এগুলো মধ্যম উচ্চতায় অনেকটা সময় আকাশে ভাসতে পারে। এগুলো এক ধরনের সশস্ত্র ড্রোন। মূলত সামরিক মিশন, নজরদারি এবং সামরিক শক্তি নবায়নের কাজে এই ড্রোনগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ড্রোন থেকে এয়ার টু সারফেইস মিসাইল ও বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব।
পাকিস্তান এই ড্রোনটি চীন থেকে কিনেছে এবং সীমান্ত নজরদারিতে নিয়মিত ব্যবহার করছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধেও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের তৈরি আরেকটি ড্রোন হলো সিএইচ ফোর বা রেইনবো ফোর। এর নির্মাতা চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স টেকনোলজি করপোরেশন। এটিও একটি সশস্ত্র ইউএভি, যা এমকিউ নাইন-রিপারের চীনা সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। এই ড্রোনগুলো নজরদারি এবং স্ট্রাইক দুটোতেই পারদর্শী। তা ছাড়া এ ড্রোনগুলো অস্ত্রও বহন করতে পারে।
পাকিস্তানের ড্রোনের ক্ষেত্রে বড় শক্তি হলো তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন। বায়রাক্তার টিবি২ একটি তুরস্কে নির্মিত মাঝারি উচ্চতা এবং দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম একটি সশস্ত্র ড্রোন, যা গোয়েন্দা নজরদারি, সুনির্দিষ্ট হামলা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এটি তৈরি করেছে তুরস্কের প্রখ্যাত ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেকার টেকনোলজি। বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনটি ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা উড়তে পারে এবং এতে চারটি লাইট ওজনের গাইডেড স্মার্ট বোমা বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রানওয়ে থেকে টেক-অফ ও ল্যান্ড করতে পারে এবং শত্রুর ট্যাংক, কামান, রাডার ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে।
তুরস্ক প্রথমে এটি নিজ দেশে ব্যবহার শুরু করলেও পরে আজারবাইজান, ইউক্রেন, কাতার, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, তিউনিসিয়া, সোমালিয়া এবং আরো কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে। বিশেষ করে নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ, লিবিয়া ও সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে। এটি আধুনিক যুগের কম খরচে, সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর ড্রোন যুদ্ধের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা তুলনামূলকভাবে দুর্বল সামরিক শক্তিধর দেশগুলোকেও আধুনিক বিমানক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। পাকিস্তান ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে এই ড্রোন সংগ্রহের চুক্তি করেছে এবং কিছুসংখ্যক ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
বুরাক নামে পাকিস্তানের একটি ড্রোন রয়েছে, যা চীনের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে দেশটি তৈরি করেছে। এ ড্রোনটি মূলত মার্কিন এমকিউ ওয়ান প্রিডেটর ড্রোনের আদলে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি পাকিস্তান এয়ারফোর্স এবং পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্টিফিক কমিশন কর্তৃক যৌথভাবে তৈরি। বুরাক ড্রোন প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে সফলভাবে অস্ত্রসহ ব্যবহার করা হয়। ড্রোনটি ‘বারক’ নামক লেজার-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এবং এটি রিয়েল-টাইমে নজরদারি ও টার্গেট শনাক্তকরণের ক্ষমতা রাখে। বুরাক ড্রোন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন, কারণ এটি দেশটিকে মার্কিন ড্রোনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করেছে এবং নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর একটি সামরিক কৌশল গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। পাকিস্তান নিজে জাসুস নামে একটি ড্রোন তৈরি করেছে। চীনা প্রযুক্তির সিএইচ ফোর রেইনবো ড্রোন তৈরি করে দেশটি। এ ছাড়া সাপাহার-১ ও ২ নামে আরো একটি ড্রোনের ভেরিয়েন্ট আছে পাকিস্তানের কাছে। এর বাইরে পাকিস্তান লাইসেন্সের আওতায় ইতালির ফ্যালকো ড্রোন তৈরি করেছিল। তুরস্ক থেকে আনকা ড্রোন আছে পাকিস্তানের হাতে।
অন্যদিকে, ভারতের কাছে বর্তমানে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বেশ কয়েকটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন রয়েছে। ইসরাইলের তৈরি হেরন এবং সার্চার ড্রোন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার হচ্ছে। হেরন একটি মাঝারি উচ্চতায় দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম এমন একটি ড্রোন, যা প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারে এবং ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
সার্চার ড্রোন অপেক্ষাকৃত ছোট এবং স্বল্প সময়ের নজরদারি মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে ইসরাইলের হারপ ড্রোন তো আছেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত সম্প্রতি এমকিউ নাইন-ই সি-গার্ডিয়ান এবং রিপার ড্রোনের ক্রয় চুক্তি করেছে, যা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সশস্ত্র ড্রোন। এমকিউ নাইন-ই ড্রোন ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারে এবং ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। এটি অত্যাধুনিক সেন্সর, লেজার-গাইডেড মিসাইল এবং স্মার্ট বোমা বহনে সক্ষম। তবে ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে ড্রোন নির্মাণে এখনো তেমন সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ড্রোনের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে নজরদারি, আঘাত হানা, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এবং শত্রুর অবস্থান শনাক্তকরণে ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ড্রোন হবে গেম চেঞ্জার সমর প্রযুক্তি।
সামরিক অভিযানে যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দিচ্ছে ড্রোন। পাকিস্তান ও ভারতের হামলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর ড্রোন নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রেও অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে পাকিস্তান। এ নিয়ে সমরাঙ্গনে ইসলামাবাদ সবার দৃষ্টি কাড়ছে। ভারত এ পর্যন্ত যে ড্রোন ব্যবহার করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি ‘হারপ ড্রোন’। এগুলো আত্মঘাতী বা কামিকাজি শ্রেণির যুদ্ধসরঞ্জাম। নিক্ষেপের পর টার্গেটে আঘাত হেনে বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এগুলো ভাসতে থাকে। হারপ ড্রোনগুলো ভয়াবহ, কারণ এগুলোর মধ্যে মিসাইল আর ড্রোন দুটো বৈশিষ্ট্যই সংযুক্ত আছে। এগুলো আকারে ছোট, মাত্র দুই মিটারের মতো লম্বা। এগুলো চিহ্নিত করাও কঠিন। ড্রোনগুলো ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে এবং টানা ছয় ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে। লক্ষ্যবস্তু খুঁজে না পেলে আবার ঘাঁটিতে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু এই ড্রোনগুলোকে একের পর এক ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত তারা ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছেন।
ভারত ইসরাইলি ড্রোনের অন্যতম প্রধান ক্রেতা। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত অন্তত ২৫টি হারপ ড্রোন কিনেছে। প্রতি ধাপে ১০টি করে ড্রোন নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলার। নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত স্কাউটিং ড্রোনও ব্যবহার করে। এগুলোতেও হারপ ড্রোনের মতো মিসাইল সক্ষমতা আছে। বিপুল ড্রোন ভূপাতিত করার কারণে ভারতের ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। এর মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাময়িকী জেনস ডিফেন্স উইকলি গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের বিমানবাহিনী ৩৫ মিলিয়ন ডলারে ছোট আকারের বিপুলসংখ্যক নজরদারি ও আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহ পেতে শুরু করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ভয়ংকর সব ড্রোন। এসব ড্রোন নিয়ে ভারতের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। যদিও সেগুলোর ব্যবহার শুরু করেনি দেশটি। পাকিস্তানের কাছে চীন ও তুরস্কের ড্রোন ছাড়াও তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ড্রোন তৈরি করে পাকিস্তান। অন্যদিকে ড্রোনের ক্ষেত্রে ইসরাইলের ওপর নির্ভর করে থাকে ভারত। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা কয়েকটি ব্যয়বহুল ড্রোন আছে ভারতের কাছে। তবে ড্রোনযুদ্ধে পাকিস্তানের রয়েছে বিশেষ অভিজ্ঞতা। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান যুদ্ধে পাকিস্তান সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তুর্কি ড্রোনের চমকে সেই যুদ্ধে আজারবাইজান জিতে যায়।
ভারত সরকার ইতোমধ্যে দাবি করেছে, পাকিস্তান একযোগে ৫০০ ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে। তাদের দাবি, এসব ড্রোনে বিস্ফোরক ছিল না। অনেক ড্রোন তারা পাঠিয়েছিল গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে। এসব ড্রোনের মাধ্যমে তারা ভারতের বিভিন্ন অবস্থানের ছবি তুলে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। ভারত কিছু ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। ভারতের দাবি, ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন ছিল তুরস্কের তৈরি।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের কাছে মূলত শক্তিশালী ড্রোন আছে চীন ও তুরস্কের তৈরি। চীনের তৈরি যে ড্রোনগুলো পাকিস্তানের কাছে রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে উইং লুং টু। এটি তৈরি করেছে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ। এগুলো মধ্যম উচ্চতায় অনেকটা সময় আকাশে ভাসতে পারে। এগুলো এক ধরনের সশস্ত্র ড্রোন। মূলত সামরিক মিশন, নজরদারি এবং সামরিক শক্তি নবায়নের কাজে এই ড্রোনগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ড্রোন থেকে এয়ার টু সারফেইস মিসাইল ও বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব।
পাকিস্তান এই ড্রোনটি চীন থেকে কিনেছে এবং সীমান্ত নজরদারিতে নিয়মিত ব্যবহার করছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধেও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের তৈরি আরেকটি ড্রোন হলো সিএইচ ফোর বা রেইনবো ফোর। এর নির্মাতা চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স টেকনোলজি করপোরেশন। এটিও একটি সশস্ত্র ইউএভি, যা এমকিউ নাইন-রিপারের চীনা সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। এই ড্রোনগুলো নজরদারি এবং স্ট্রাইক দুটোতেই পারদর্শী। তা ছাড়া এ ড্রোনগুলো অস্ত্রও বহন করতে পারে।
পাকিস্তানের ড্রোনের ক্ষেত্রে বড় শক্তি হলো তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন। বায়রাক্তার টিবি২ একটি তুরস্কে নির্মিত মাঝারি উচ্চতা এবং দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম একটি সশস্ত্র ড্রোন, যা গোয়েন্দা নজরদারি, সুনির্দিষ্ট হামলা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। এটি তৈরি করেছে তুরস্কের প্রখ্যাত ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেকার টেকনোলজি। বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনটি ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা উড়তে পারে এবং এতে চারটি লাইট ওজনের গাইডেড স্মার্ট বোমা বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রানওয়ে থেকে টেক-অফ ও ল্যান্ড করতে পারে এবং শত্রুর ট্যাংক, কামান, রাডার ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে।
তুরস্ক প্রথমে এটি নিজ দেশে ব্যবহার শুরু করলেও পরে আজারবাইজান, ইউক্রেন, কাতার, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, তিউনিসিয়া, সোমালিয়া এবং আরো কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে। বিশেষ করে নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ, লিবিয়া ও সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে। এটি আধুনিক যুগের কম খরচে, সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর ড্রোন যুদ্ধের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা তুলনামূলকভাবে দুর্বল সামরিক শক্তিধর দেশগুলোকেও আধুনিক বিমানক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। পাকিস্তান ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে এই ড্রোন সংগ্রহের চুক্তি করেছে এবং কিছুসংখ্যক ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
বুরাক নামে পাকিস্তানের একটি ড্রোন রয়েছে, যা চীনের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে দেশটি তৈরি করেছে। এ ড্রোনটি মূলত মার্কিন এমকিউ ওয়ান প্রিডেটর ড্রোনের আদলে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি পাকিস্তান এয়ারফোর্স এবং পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্টিফিক কমিশন কর্তৃক যৌথভাবে তৈরি। বুরাক ড্রোন প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে সফলভাবে অস্ত্রসহ ব্যবহার করা হয়। ড্রোনটি ‘বারক’ নামক লেজার-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এবং এটি রিয়েল-টাইমে নজরদারি ও টার্গেট শনাক্তকরণের ক্ষমতা রাখে। বুরাক ড্রোন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন, কারণ এটি দেশটিকে মার্কিন ড্রোনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করেছে এবং নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর একটি সামরিক কৌশল গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। পাকিস্তান নিজে জাসুস নামে একটি ড্রোন তৈরি করেছে। চীনা প্রযুক্তির সিএইচ ফোর রেইনবো ড্রোন তৈরি করে দেশটি। এ ছাড়া সাপাহার-১ ও ২ নামে আরো একটি ড্রোনের ভেরিয়েন্ট আছে পাকিস্তানের কাছে। এর বাইরে পাকিস্তান লাইসেন্সের আওতায় ইতালির ফ্যালকো ড্রোন তৈরি করেছিল। তুরস্ক থেকে আনকা ড্রোন আছে পাকিস্তানের হাতে।
অন্যদিকে, ভারতের কাছে বর্তমানে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বেশ কয়েকটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন রয়েছে। ইসরাইলের তৈরি হেরন এবং সার্চার ড্রোন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার হচ্ছে। হেরন একটি মাঝারি উচ্চতায় দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম এমন একটি ড্রোন, যা প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারে এবং ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
সার্চার ড্রোন অপেক্ষাকৃত ছোট এবং স্বল্প সময়ের নজরদারি মিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে ইসরাইলের হারপ ড্রোন তো আছেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত সম্প্রতি এমকিউ নাইন-ই সি-গার্ডিয়ান এবং রিপার ড্রোনের ক্রয় চুক্তি করেছে, যা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক সশস্ত্র ড্রোন। এমকিউ নাইন-ই ড্রোন ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারে এবং ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। এটি অত্যাধুনিক সেন্সর, লেজার-গাইডেড মিসাইল এবং স্মার্ট বোমা বহনে সক্ষম। তবে ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে ড্রোন নির্মাণে এখনো তেমন সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ড্রোনের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে নজরদারি, আঘাত হানা, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এবং শত্রুর অবস্থান শনাক্তকরণে ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ড্রোন হবে গেম চেঞ্জার সমর প্রযুক্তি।
দুই হাজারেরও বেশি কথিত বাংলাদেশিকে নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে চায় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেভারতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন শরিফ চৌধুরী। তার কথায়, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি কয়েক বছর পর পর (ভারতের পক্ষ থেকে) মিথ্যা ন্যারেটিভ (বয়ান) তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই ন্যারেটিভও সেকেলে।’
৩ ঘণ্টা আগেইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
৩ ঘণ্টা আগেকাতারের রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ গ্রহণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প নানা সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন।
৪ ঘণ্টা আগে