গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে কেন্দ্র করে শর্তগুলো নতুন করে ব্যাখ্যা বা পুনঃসংজ্ঞায়নের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-পর্যায়ের কর্মকর্তা মানাল রাদওয়ান স্পষ্ট করে বলেন—গাজাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ইস্যু হিসেবে দেখা যাবে না। বৃহত্তর ফিলিস্তিন প্রশ্নের অংশ হিসেবেই দেখতে হবে।
দোহা ফোরাম ২০২৫-এ শনিবার তিনি বলেন, “যা আমরা একবার সম্মত হয়েছি এবং যা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব হিসেবে গৃহীত—সেসব শর্ত পুনরায় ব্যাখ্যা বা পুনরায় আলোচনার জন্য উন্মুক্ত করা যাবে না। আমরা যুদ্ধবিরতি মানে কী, নিরস্ত্রীকরণ মানে কী, বা গাজা শাসনে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ভূমিকা—এসব নতুন করে সংজ্ঞায়ন করতে পারি না।”
তিনি সতর্ক করেন যে এই ধরনের পরিবর্তনের চেষ্টা রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ‘সাইডট্র্যাকে’ নিয়ে যাবে, ফলে মূল সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু থেকে দৃষ্টি সরে যেতে পারে।
রাদওয়ান বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই মনে করেন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ। যদি তাই হয়, তবে এখন প্রশ্ন—কে কী করবে যাতে এই সমাধান বাস্তবায়িত হয়।”
সৌদি কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেন, গাজা কোনো একক সংকট নয়—এটি সামগ্রিক ফিলিস্তিন প্রশ্নেরই অংশ।
তার ভাষায়, “গাজা হলো ফিলিস্তিন ইস্যুরই প্রতিফলন—শুধু গাজা নয়।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য পরিষ্কার না থাকলে মানবিক সহায়তা, নিরাপত্তা বা বিভিন্ন ধাপের বাস্তবায়ন—কিছুই সফল হতে পারে না।
রাদওয়ান দীর্ঘদিনের পুনরাবৃত্ত সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আমরা আগেও দেখেছি—গাজায় যুদ্ধ হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জড়িত হয়, কিছুদিন মানবিক প্রচেষ্টা চলে, তারপর ক্লান্তি আসে, আর শেষে সবাই ভুলে যায়—এরপর আবার আরও ভয়াবহ সহিংসতা শুরু হয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে “ইসরাইলসহ কেউই নিরাপদ থাকবে না।”
সমঝোতার কাঠামো অটুট রাখা জরুরি
রাদওয়ান বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নির্ভর করছে ইতোমধ্যে স্বীকৃত কাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার ওপর এবং যেন কোনো পক্ষ সংজ্ঞা বা শর্ত বদলে দিতে না পারে।
তার ভাষায়, “ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে বিরতির চুক্তি থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের যেকোনো পরিকল্পনাই আরেকটি সহিংস চক্র ঠেকাতে ব্যর্থ হবে।”
চলমান যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট
চলতি যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়, যা প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনকে থামিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু; আহত হয়েছে প্রায় ১,৭১,০০০ মানুষ।
চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরাইলি বন্দিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির কথা রয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার পুনর্গঠন এবং হামাসের বাইরে একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির বিষয়ও উল্লেখ আছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
এসআর

