
আমার দেশ অনলাইন

পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কোবার গ্রাম এই মুহূর্তে উদযাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত।
দীর্ঘদিন ধরে বন্দি মারওয়ান বারঘুতির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী গ্রামবাসী, তিনি ফিরলে কীভাবে উদযাপন করা হবে- সেই চিন্তায় বিভোর। ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করায় তার ভূমিকার জন্য পরিচিত মারওয়ান বারঘৌতি। তাকে ফিলিস্তিনি 'নেলসন ম্যান্ডেলা'ও বলা হয়।
জুমার নামাজের পর গ্রামের মসজিদের বাইরে কথা বলতে গিয়ে তার খুড়তুতো ভাই মোহাম্মদ আল - বারঘুতি জানান, তিনি '৮০ শতাংশ নিশ্চিত' যে মারওয়ান বারঘৌতিকে শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে। আমাদের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরাও এই বিষয়ে একমত।
গাজা শান্তি নিয়ে চলমান শান্তি প্রচেষ্টা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতির দ্বৈত প্রভাবেই এই আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন মারওয়ান বারঘুতির পরিবার এবং কোবার গ্রামের বাসিন্দারা।
গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরাইলকে তিনি মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলতে পারেন, যাতে তিনি (মারওয়ান বারঘুতি) গাজায় প্রশাসনিক নেতৃত্ব দিতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ইসরাইলি জিম্মিদের মক্তির বদলে (ইসরাইলের কাছে) হামাস যে ২০জন বন্দির মুক্তি দাবি করেছে, সেই তালিকায় মারওয়ান বারঘুতিও রয়েছেন। যদিও ইসরাইলের এতে সম্মতি ছিল না।
'ঐক্যের প্রতীক'
প্রথমবার ১৯৭৮ সালে কারাগারে বন্দি হওয়ার আগে পর্যন্ত এই দোতলা বাড়িতেই থাকতেন মারওয়ান বারঘুতি। ঘরে টানানো রয়েছে তার বড় রঙিন একটা ছবি। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে তোলা এই ছবি তার অনুভূতি এবং যে পরিস্থিতিতে তাকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তা ফুটিয়ে তোলে।
ছবিতে দেখা যায়, হাতকড়া পড়া অবস্থায় হাত তুলে রেখেছেন মারওয়ান বারঘুতি। তার চোখে মুখে দৃঢ় সঙ্কল্পের ছাপ স্পষ্ট।
ঘরে বসে কথা বলার মাঝে চা খাচ্ছিলেন আর সিগারেটে টান দিচ্ছিলেন তার ভাই মোকবেল বারঘুতি। তিনি মনে করেন ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলিদের যদি কেউ একসঙ্গে আনার কাজ করতে পারেন, সেটা তার ভাই মারওয়ান বারঘুতি।
"ওর মতো করে কেউ ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে না," বলেছেন মোকবেল বারঘুতি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার নিজেরও সক্রিয় যোগ রয়েছে। গ্রামে রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় মারওয়ান বারঘুতির ভাই মোকবেল। পাশাপাশি, কারাবন্দিদের জন্য তৈরি কমিটির সদস্যও তিনি।
জনমত জরিপ বলছে, ৬৬ বছর বয়সী মারওয়ান বারঘুতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ। যে সময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মারওয়ান বারঘুতি।
পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে 'ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের' জন্য নিজের সমর্থনকে অব্যাহত রেখেছিলেন।
ইসরাইলের 'অপারেশন ডিফেন্স শিল্ড' চলাকালীন তাকে ২০০২ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড তৈরির অভিযোগ তুলেছিল ইসরাইল, যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মারওয়ান বারঘুতি।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে কিন্তু আল-আকসা ব্রিগেডের কোনো যোগ নেই।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়, আল-আকসা ব্রিগেড ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান শুরু করে।
মারওয়ান বারঘুতির বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভ্যন্তরে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে। এর জন্য তাকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বিচার চলাকালীন, এই ফিলিস্তিনি নেতা ইসরাইলি আদালতের কর্তৃত্ব অস্বীকার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগও অস্বীকার করেছিলেন।
আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড বেশ কয়েকটা প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
মারওয়ান বারঘুতির স্ত্রী ফাদওয়া বারঘৌতি একজন ফিলিস্তিনি আইনজীবী। বিবিসির সঙ্গে গত বছর কথোপকথনের সময় তিনি বলেছিলেন, "ওর (মারওয়ান বারঘুতির) বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এই কারণে আনা হয়নি যে, ও এই কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত, বরং এই জন্য তোলা হয়েছিল কারণ ও একজন ফিলিস্তিনি নেতা।"
ফাদওয়া বারঘুতি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারওয়ান বারঘুতি তার বিরুদ্ধে "আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার অভিযোগও খারিজ করেছেন।"
রাজনীতিবিদরা মনে করেন, যদি শান্তি চুক্তি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে একটা "বিকল্প" হতে পারেন মারওয়ান বারঘুতি।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা তাকে বহুল পরিচিতি দেয়। রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে তাকেই দেখা হয়।
মারওয়ান বারঘুতি বরাবরই জানিয়ে এসেছেন তিনি ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পক্ষে এবং একইসঙ্গে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার উপর ভিত্তি করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনও করেন তিনি।
ইসরাইলিদের অনেকেই তার মুক্তির বিপক্ষে। তাদের অভিযোগ, পাঁচজনকে হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তার "হাতে রক্ত লেগে আছে"।
আবার অনেকে এ-ও মনে করেন যে, তার মুক্তি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলিকে একত্রিত করা এবং শান্তি আনার সর্বোত্তম সম্ভাবনা তৈরি করার একটা উপায় হতে পারে।
যা বলছে পরিবার
মারওয়ান বারঘুতির ছেলে আরবের বয়স তিরিশের কোঠায়। এই তরুণ মনে করেন, তার বাবা একজন রাজনৈতিক কর্মী, কোনো সামরিক কর্মকর্তা নন- যিনি ইসরাইলিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। বাবার মতাদর্শ মেনে তার পথেই হাঁটছেন এই তরুণ, যিনি শুধু আত্মবিশ্বাসীই নন বাগ্মীও বটে।
রামাল্লার একটা ক্যাফেতে বসে সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলছিলেন তিনি। সেই সময় আরব বারঘুতি জানান, তার বাবাকে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আটজন কারারক্ষী মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে। সেই সময় সংজ্ঞা হারান তার বাবা।
চলতি মাসের শুরুতে ইসরাইলি কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
ইসরাইলের কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, "এই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ইসরাইলের কারাবিভাগের কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী কাজ করে এবং সমস্ত বন্দির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিত করে।"
যে সময় গাজার যুদ্ধবিরতি সঙ্ক্রান্ত খবর আসে, তখন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে মারওয়ান বারঘুতির মুক্তিও ওই চুক্তির অংশ হতে পারে। সেই সময় এই খবরও (কারাগারে নির্যাতনের) প্রকাশ্যে আসে।
আরব বারঘুতি বিবিসিকে বলেছেন, "ইসরাইলে কিছু উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী আছেন, যারা স্পষ্টতই শান্তির বিষয়ে আগ্রহী নন। তারা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যার কথা বলছে।"
তিনি বলেন, "আমি মনে করি তারা আমার বাবাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছেন। তিনি কখনই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেননি, কারণ তিনি কখনোই সৈনিক বা জেনারেল ছিলেন না।"
"তিনি (বাবা মারওয়ান বারঘুতি)বরাবরই একজন রাজনীতিবিদ, সাংসদ এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।"
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বার্তা
মারওয়ানের স্ত্রী ফাদওয়া বারঘুতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠানো এক বার্তায় বলেছেন, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য অর্জনে তার স্বামী সাহায্য করতে পারেন।
গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফাদওয়া বারঘুতি বলেছেন, "মিস্টার প্রেসিডেন্ট, একজন সত্যিকারের অংশীদার আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন, যিনি আমাদের অভিন্ন স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করতে পারেন এবং যা এই অঞ্চলে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি আনবে।"
"ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তির স্বার্থে মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি পেতে সাহায্য করুন।"
আরব বারঘুতি মনে করেন, ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে তার বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এই তরুণ বলেছেন, "ফিলিস্তিনি ঐক্য সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমার বাবা একটা রাজনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করেন এবং ১৯৯০ এর দশকে সহাবস্থান এবং শান্তির প্রক্রিয়ারও বড় সমর্থক ছিলেন তিনি।"
ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এখন একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। এ এমন এক অনুভূতি, যা সেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন অনুভব করেননি।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে, গাজা এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিকতম প্রচেষ্টা এমন এক জায়গায় আশার আলো এনেছে যেখানে হতাশা দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছে।
সাতই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর থেকে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক একটা রক্তক্ষয়ী অথচ নীরব যুদ্ধের সাক্ষী। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান থেকেছে গাজায় সংঘাত।
ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে উভয় পক্ষের দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন।
যদি মারওয়ান বারঘুতিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাকে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলেও এমন এক ইসরায়লি নেতার প্রয়োজন যিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে সহমত পোষণ করেন এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলতে পারেন।
আরব বারঘুতি অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি এটা এই অঞ্চল এবং ফিলিস্তিনিদের বিষয় নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার সূচনা হতে পারে।"
"আমি আন্তরিকভাবে আশাবাদী যে, একদিন আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম হব এবং আমাদের শিশুরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।"
সূত্র: বিবিসি বাংলা

পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কোবার গ্রাম এই মুহূর্তে উদযাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত।
দীর্ঘদিন ধরে বন্দি মারওয়ান বারঘুতির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী গ্রামবাসী, তিনি ফিরলে কীভাবে উদযাপন করা হবে- সেই চিন্তায় বিভোর। ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করায় তার ভূমিকার জন্য পরিচিত মারওয়ান বারঘৌতি। তাকে ফিলিস্তিনি 'নেলসন ম্যান্ডেলা'ও বলা হয়।
জুমার নামাজের পর গ্রামের মসজিদের বাইরে কথা বলতে গিয়ে তার খুড়তুতো ভাই মোহাম্মদ আল - বারঘুতি জানান, তিনি '৮০ শতাংশ নিশ্চিত' যে মারওয়ান বারঘৌতিকে শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে। আমাদের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরাও এই বিষয়ে একমত।
গাজা শান্তি নিয়ে চলমান শান্তি প্রচেষ্টা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতির দ্বৈত প্রভাবেই এই আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন মারওয়ান বারঘুতির পরিবার এবং কোবার গ্রামের বাসিন্দারা।
গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরাইলকে তিনি মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলতে পারেন, যাতে তিনি (মারওয়ান বারঘুতি) গাজায় প্রশাসনিক নেতৃত্ব দিতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ইসরাইলি জিম্মিদের মক্তির বদলে (ইসরাইলের কাছে) হামাস যে ২০জন বন্দির মুক্তি দাবি করেছে, সেই তালিকায় মারওয়ান বারঘুতিও রয়েছেন। যদিও ইসরাইলের এতে সম্মতি ছিল না।
'ঐক্যের প্রতীক'
প্রথমবার ১৯৭৮ সালে কারাগারে বন্দি হওয়ার আগে পর্যন্ত এই দোতলা বাড়িতেই থাকতেন মারওয়ান বারঘুতি। ঘরে টানানো রয়েছে তার বড় রঙিন একটা ছবি। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে তোলা এই ছবি তার অনুভূতি এবং যে পরিস্থিতিতে তাকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তা ফুটিয়ে তোলে।
ছবিতে দেখা যায়, হাতকড়া পড়া অবস্থায় হাত তুলে রেখেছেন মারওয়ান বারঘুতি। তার চোখে মুখে দৃঢ় সঙ্কল্পের ছাপ স্পষ্ট।
ঘরে বসে কথা বলার মাঝে চা খাচ্ছিলেন আর সিগারেটে টান দিচ্ছিলেন তার ভাই মোকবেল বারঘুতি। তিনি মনে করেন ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলিদের যদি কেউ একসঙ্গে আনার কাজ করতে পারেন, সেটা তার ভাই মারওয়ান বারঘুতি।
"ওর মতো করে কেউ ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে না," বলেছেন মোকবেল বারঘুতি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার নিজেরও সক্রিয় যোগ রয়েছে। গ্রামে রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় মারওয়ান বারঘুতির ভাই মোকবেল। পাশাপাশি, কারাবন্দিদের জন্য তৈরি কমিটির সদস্যও তিনি।
জনমত জরিপ বলছে, ৬৬ বছর বয়সী মারওয়ান বারঘুতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ। যে সময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর।
ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মারওয়ান বারঘুতি।
পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে 'ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের' জন্য নিজের সমর্থনকে অব্যাহত রেখেছিলেন।
ইসরাইলের 'অপারেশন ডিফেন্স শিল্ড' চলাকালীন তাকে ২০০২ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড তৈরির অভিযোগ তুলেছিল ইসরাইল, যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মারওয়ান বারঘুতি।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে কিন্তু আল-আকসা ব্রিগেডের কোনো যোগ নেই।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়, আল-আকসা ব্রিগেড ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান শুরু করে।
মারওয়ান বারঘুতির বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভ্যন্তরে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে। এর জন্য তাকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বিচার চলাকালীন, এই ফিলিস্তিনি নেতা ইসরাইলি আদালতের কর্তৃত্ব অস্বীকার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগও অস্বীকার করেছিলেন।
আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড বেশ কয়েকটা প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
মারওয়ান বারঘুতির স্ত্রী ফাদওয়া বারঘৌতি একজন ফিলিস্তিনি আইনজীবী। বিবিসির সঙ্গে গত বছর কথোপকথনের সময় তিনি বলেছিলেন, "ওর (মারওয়ান বারঘুতির) বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এই কারণে আনা হয়নি যে, ও এই কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত, বরং এই জন্য তোলা হয়েছিল কারণ ও একজন ফিলিস্তিনি নেতা।"
ফাদওয়া বারঘুতি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারওয়ান বারঘুতি তার বিরুদ্ধে "আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার অভিযোগও খারিজ করেছেন।"
রাজনীতিবিদরা মনে করেন, যদি শান্তি চুক্তি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে একটা "বিকল্প" হতে পারেন মারওয়ান বারঘুতি।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা তাকে বহুল পরিচিতি দেয়। রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে তাকেই দেখা হয়।
মারওয়ান বারঘুতি বরাবরই জানিয়ে এসেছেন তিনি ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পক্ষে এবং একইসঙ্গে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানার উপর ভিত্তি করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনও করেন তিনি।
ইসরাইলিদের অনেকেই তার মুক্তির বিপক্ষে। তাদের অভিযোগ, পাঁচজনকে হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তার "হাতে রক্ত লেগে আছে"।
আবার অনেকে এ-ও মনে করেন যে, তার মুক্তি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলিকে একত্রিত করা এবং শান্তি আনার সর্বোত্তম সম্ভাবনা তৈরি করার একটা উপায় হতে পারে।
যা বলছে পরিবার
মারওয়ান বারঘুতির ছেলে আরবের বয়স তিরিশের কোঠায়। এই তরুণ মনে করেন, তার বাবা একজন রাজনৈতিক কর্মী, কোনো সামরিক কর্মকর্তা নন- যিনি ইসরাইলিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। বাবার মতাদর্শ মেনে তার পথেই হাঁটছেন এই তরুণ, যিনি শুধু আত্মবিশ্বাসীই নন বাগ্মীও বটে।
রামাল্লার একটা ক্যাফেতে বসে সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলছিলেন তিনি। সেই সময় আরব বারঘুতি জানান, তার বাবাকে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আটজন কারারক্ষী মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে। সেই সময় সংজ্ঞা হারান তার বাবা।
চলতি মাসের শুরুতে ইসরাইলি কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
ইসরাইলের কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, "এই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ইসরাইলের কারাবিভাগের কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী কাজ করে এবং সমস্ত বন্দির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিত করে।"
যে সময় গাজার যুদ্ধবিরতি সঙ্ক্রান্ত খবর আসে, তখন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে মারওয়ান বারঘুতির মুক্তিও ওই চুক্তির অংশ হতে পারে। সেই সময় এই খবরও (কারাগারে নির্যাতনের) প্রকাশ্যে আসে।
আরব বারঘুতি বিবিসিকে বলেছেন, "ইসরাইলে কিছু উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী আছেন, যারা স্পষ্টতই শান্তির বিষয়ে আগ্রহী নন। তারা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যার কথা বলছে।"
তিনি বলেন, "আমি মনে করি তারা আমার বাবাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছেন। তিনি কখনই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেননি, কারণ তিনি কখনোই সৈনিক বা জেনারেল ছিলেন না।"
"তিনি (বাবা মারওয়ান বারঘুতি)বরাবরই একজন রাজনীতিবিদ, সাংসদ এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।"
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বার্তা
মারওয়ানের স্ত্রী ফাদওয়া বারঘুতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠানো এক বার্তায় বলেছেন, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য অর্জনে তার স্বামী সাহায্য করতে পারেন।
গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফাদওয়া বারঘুতি বলেছেন, "মিস্টার প্রেসিডেন্ট, একজন সত্যিকারের অংশীদার আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন, যিনি আমাদের অভিন্ন স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করতে পারেন এবং যা এই অঞ্চলে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি আনবে।"
"ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তির স্বার্থে মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি পেতে সাহায্য করুন।"
আরব বারঘুতি মনে করেন, ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে তার বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এই তরুণ বলেছেন, "ফিলিস্তিনি ঐক্য সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমার বাবা একটা রাজনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করেন এবং ১৯৯০ এর দশকে সহাবস্থান এবং শান্তির প্রক্রিয়ারও বড় সমর্থক ছিলেন তিনি।"
ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এখন একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। এ এমন এক অনুভূতি, যা সেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন অনুভব করেননি।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে, গাজা এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিকতম প্রচেষ্টা এমন এক জায়গায় আশার আলো এনেছে যেখানে হতাশা দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছে।
সাতই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর থেকে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক একটা রক্তক্ষয়ী অথচ নীরব যুদ্ধের সাক্ষী। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান থেকেছে গাজায় সংঘাত।
ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে উভয় পক্ষের দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন।
যদি মারওয়ান বারঘুতিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাকে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলেও এমন এক ইসরায়লি নেতার প্রয়োজন যিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে সহমত পোষণ করেন এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলতে পারেন।
আরব বারঘুতি অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি এটা এই অঞ্চল এবং ফিলিস্তিনিদের বিষয় নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার সূচনা হতে পারে।"
"আমি আন্তরিকভাবে আশাবাদী যে, একদিন আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে সক্ষম হব এবং আমাদের শিশুরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।"
সূত্র: বিবিসি বাংলা

দীর্ঘ ২৫ বছর পর তুরস্কের মর্যাদাপূর্ণ আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার পুনরায় প্রদান করা হচ্ছে। এ বছরের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তুরস্কের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
১ ঘণ্টা আগে
আজ আতাতুর্ক বিমানবন্দরের নতুন “জনতার উদ্যান” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এরদোয়ান বলেন, “এক বছরের মধ্যে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। মাঠের পরিস্থিতি আমাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”
১ ঘণ্টা আগে
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদুরো রাডার সিস্টেম, বিমান মেরামত এবং সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে সহায়তা চাইছেন। রাশিয়ার প্রতি তার আবেদন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিঠির মাধ্যমে করা হয়েছিল যেটি একজন সিনিয়র সহকারীর মস্কো সফরের সময় পৌঁছে দেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং শনিবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য বেইজিংয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি জানান, চীন সহযোগিতা বাড়াতে এবং যৌথভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
২ ঘণ্টা আগে