উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণমুক্তি নিশ্চিতে এবং বৈশ্বিক বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে সপ্তাহের শেষে প্রথমবারের মতো জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জোহানেসবার্গ থেকে এএফপি জানায়, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জি-২০ এজেন্ডা নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছেন। বহুপাক্ষিক কাঠামো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত সরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবেই শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে যাওয়াকে দেখা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে তুলছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
২২–২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠানের পূর্বদিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর হবে। জি-২০-এর অন্তর্ভুক্ত ১৯টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি। এ জোট বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ ও বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকান ইউনিয়নও এর সদস্য।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই বর্জন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্তেরও প্রতিধ্বনি। এর আগেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেন এবং বেশ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপরও যুক্তরাষ্ট্র ৩০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। হোয়াইট হাউজে ফেরার পর ট্রাম্প সাব-সাহারান আফ্রিকার এই দেশটিকে একাধিকবার সমালোচনার নিশানায় এনেছেন। এমনকি দেশটিতে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের সংগঠিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন।
ঋণ ও দুর্যোগ মোকাবিলা অগ্রাধিকার
এবারের জি-২০ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘সংহতি, সমতা ও স্থায়িত্ব’। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ ত্রাণ ও অর্থায়ন বৃদ্ধি—এ দুটি বিষয়েই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারির প্রাথমিক বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অংশ নেননি এবং তিনি জি-২০-কে ‘মার্কিন-বিরোধী’ আখ্যা দেন।
ঐকমত্য নিয়ে অনিশ্চয়তা
দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে আলোচনার সব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে কিনা এবং সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা যাবে কিনা—এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। প্রস্তুতিমূলক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিরা সমস্যার মুখে পড়েছেন, কারণ প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলো—ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী—এ বৈঠকও বর্জন করছেন।
মার্কিন অনুপস্থিতিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বহুপাক্ষিকতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত অক্টোবরে এক আঞ্চলিক এশীয় সম্মেলনে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন ও বহুমেরুত্ব এখন ‘অপরিবর্তনীয়’ বাস্তবতা।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ম্যাক্সিম ওরেশকিন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবার অংশ নিচ্ছেন না।
ব্রাজিলের বেলেমে কপ-৩০ শেষ হওয়ার ঠিক পরদিন জোহানেসবার্গে শুরু হতে যাওয়া এই জি-২০ সম্মেলনে জলবায়ু আলোচনার প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
তথ্যসূত্র: এএফপি
এসআর

