বছরের শুরুতে বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
বছরের ১০ মাসের বেশি সময় পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের তিন শ্রেণির সাড়ে ১২ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এতে নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ, আগামী ১ জানুয়ারি মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দিতে দুই-তিন মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরে প্রায় আট কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার মোট বইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম। প্রাক-প্রাথমিক এবং ইবতেদায়ির পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ৬২ শতাংশ উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে প্রাথমিকের বই যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে পারবে সংস্থাটি। তবে বছরের শুরুতে মাধ্যমিকের পুরো বইপ্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর নবম এবং গত বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশ (ওয়ার্কঅর্ডার) হয়েছে। এখন প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি হবে। এজন্য আরো সপ্তাহ দুয়েক সময় লেগে যেতে পারে। নবম শ্রেণির পৌনে ছয় কোটির মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র তিন লাখের মতো বই প্রস্তুত হলেও ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির জন্য সাড়ে ১২ কোটির মধ্যে এখনো একটিও ছাপা হয়নি। এতে শঙ্কা আছে মাধ্যমিকের সব বই হাতে পেতে মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু না হওয়ায় যথাসময়ে বই ছাপা ও বিতরণকাজ ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এতে ১ জানুয়ারি মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানো নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার কারণে বিপাকে পড়েছে এনসিটিবি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সদস্য আমান সুলাইমান আমার দেশকে বলেন, পাঠ্যবই যথাসময়ে ছাপা ও বিতরণ নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে এজন্য শুধু প্রফেসর রবিউল কবির চৌধুরীই দায়ী নন; সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনেকেই দায়ী। এমনকি জুলাই বিপ্লবের পর জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শিক্ষার বিষয়ে কোনো আন্তরিকতা দেখছি না। ফলে শিক্ষার সর্বস্তরে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, যেখানে আগের বছরের অভিজ্ঞতায় এবার জুলাই-আগস্টে বই ছাপার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখনো মাধ্যমিকের ছাপার কাজ শুরু হয়নি; ফলে সহজেই অনুমান করা যায়, এবার পাঠ্যবই নিয়ে কী ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এবার মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ দেরি হওয়ার পেছনের দায় এনসিটিবির নয়, মন্ত্রণালয়ের। এ প্রসঙ্গে নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ কর্তাব্যক্তি আমার দেশকে বলেন, আগের বছরের অভিজ্ঞতায় এবার বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করেছিল এনসিটিবি। নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) পাঠ্যবইয়ের দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়া এবং নবম-দশম শ্রেণির কার্যাদেশ যথাসময়ে অনুমোদন না হওয়ায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
গতকাল শনিবার রাতে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. রিয়াদ চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, এরই মধ্যে সব শ্রেণি বইয়ের কার্যাদেশ হয়ে গেছে। যে তিন শ্রেণির বই আটকে ছিল তা-ও গত বৃহস্পতিবার কার্যাদেশ হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগির প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি শেষে ছাপার কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রেসগুলোর যে সক্ষমতা রয়েছে, তাতে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা তা করতে পারব বলে আশা করছি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, প্রিন্টিং প্রক্রিয়াটা ফেস বাই ফেস চলে; এখন প্রাইমারির কাজ চলমান রয়েছে। সেহেতু এখন ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির কাজ গেলেও তারা (ছাপাখানা) কিন্তু কাজটা ধরতে পারবে না। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে।