হোম > আমার দেশ স্পেশাল

আবদুচ ছালামের নেওয়া প্রকল্প এখন সিডিএর গলার কাঁটা

এম কে মনির, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের আমলে নেওয়া দুটি শপিংমল প্রকল্প এখন সংস্থাটির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি এক যুগ, অন্যটি অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও কোনোটিই চালু হয়নি। বরং কোটি কোটি টাকার এসব প্রকল্প এখন ধ্বংসের মুখে। ফলে বিপাকে পড়েছে সিডিএ ও বিনিয়োগকারী উভয় পক্ষই।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আবদুচ ছালাম একের পর এক প্রকল্প হাতে নেন। নিউ মার্কেটে বিপণিবিতান ‘বি’ ব্লক ও বন্দরের সল্টগোলায় আধুনিক শপিংমল তারই ফল। কিন্তু এগুলো এখন অকেজো ভবনে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিডিএ এক যুগ আগে নগরের নিউ মার্কেটে একটি ১০ তলা ভবন ও বন্দরের সল্টগোলায় এক দশক আগে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে। লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শহরের জরাজীর্ণ নিউ মার্কেট ভবন ভেঙে ফেলা। কিন্তু একটির এক যুগ, অন্যটির অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও মার্কেট দুটি চালু হয়নি, ভাঙা হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ নিউ মার্কেট ভবনও। আবদুচ ছালামের ইচ্ছায় নেওয়া এসব প্রকল্প নিয়ে এখন কী হবেÑসংস্থাটি তা ভেবে পাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সিডিএ সল্টগোলা শপিংমল ও নিউ মার্কেটস্থ বিপণিবিতান ‘বি’ ব্লক মার্কেট বছরের পর বছর বন্ধ থাকলেও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি বর্তমান প্রশাসনও এসব মার্কেট চালুর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংস্থাটির কঠিন নীতিমালার কারণে মার্কেটগুলো চালু হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এতে শতকোটি টাকার এ প্রকল্প যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছে, তেমনি কোটি টাকা ব্যয় করে যারা দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন, তারাও লোকসান গুনছেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে নিয়োগ করে। এই পদে বসে তিনি একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করলেও কোনো প্রকল্পই লাভজনক হয়ে ওঠেনি। তারপরও নিজেকে স্বঘোষিত কর্মবীর ‍হিসেবে বিভিন্ন বিলবোর্ডে, ভিত্তিপ্রস্তর ফলকে জাহির করতে থাকেন আবদুচ ছালাম।

তার মেয়াদে ২০১২ সালে বন্দরের সল্টগোলায় ৩২ কাঠা জমিতে ২০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ছয়তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে সিডিএ। ব্যয় হয় ৪৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে নির্মাণ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও চালু হয়নি মার্কেটটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্ধ মার্কেটের এসি, লাইট, লিফট, স্কেলেটর সব নষ্ট হয়ে গেছে। টাইলস ও দেয়ালের রঙ উঠে গেছে। রাতে এখানে জড়ো হয় মাদকসেবীরা; এলাকাটি পরিণত হয়েছে অপরাধীদের আড্ডাস্থলে। তাছাড়া চোর-ছিনতাইকারীদের আড্ডার কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে মার্কেটটি।

সিডিএ সূত্র জানায়, ছয়তলা ভবনে মোট ১৮৮টি দোকান থাকলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮২টি। বাকিগুলো খালি পড়ে আছে। এখানে প্রতি ফ্লোরে লিফট ও এক্সেলেটর সুবিধা আছে। আছে আলাদা কার্গো লিফট। অচল থাকায় সেগুলোও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সিডিএ এ পর্যন্ত ১০ বার বিজ্ঞপ্তি দিলেও আর কোনো দোকান বিক্রি হয়নি। উল্টো নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ বিল হিসেবে মার্কেটটির পেছনে মাসে লাখ টাকার বেশি গচ্ছা দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিস বলেন, এটা এখন মাদকের আখড়া। উন্নয়নের বদলে এখানে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসাইন বলেন, ওই এলাকার প্রেক্ষাপটে ২০ তলা ফাউন্ডেশনে এত অত্যাধুনিক মার্কেট করার কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া ছয়তলা মার্কেটও চালু করতে পারেনি সিডিএ। কাদের স্বার্থে এ লুটপাট করা হলোÑপ্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে একই দশা নগরের নিউ মার্কেটস্থ বিপণিবিতান ‘বি’ ব্লক মার্কেটেরও। ২০১৩ সালে উদ্বোধন হওয়া নিউ মার্কেটের ‘বি’ ব্লক প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৪৫ কোটি টাকা। তবে ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ১০ তলা মার্কেটটি চালু হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটি অনেকটা আড়ালে পড়ে আছে, বাইরে পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে চলে একশ্রেণির দালালের ব্যবসা। ভেতরে প্রায় ৭৫০টি দোকান থাকলেও খোলা আছে মাত্র ২০-২৫টি। স্কেলেটর ও জেনারেটর নষ্ট, সাব-স্টেশনও অচল।

দোকান মালিক মাহমুদুল হক বলেন, ২০১২ সালে ৪০ লাখ টাকায় ১২০ বর্গফুটের দোকান কিনেছি; কিন্তু এক যুগেও ব্যবসা শুরু করতে পারিনি। সিডিএ আমাদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

নোমান নামে এক দোকানকর্মী বলেন, আমাদের কোম্পানি প্রথমে অফিস করার জন্য দোকান নিলেও পরে মার্কেটটি আলোর মুখ না দেখায় সেটিকে গুদাম বানায়। মার্কেটটি এখন জনমানবশূন্য থাকে। বলতে গেলে এটা মর্গের চেয়েও খারাপ।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিউ মার্কেট বিপণিবিতান ‘বি’ ব্লক মার্কেটটি ভুল প্ল্যানে করায় কোনোভাবেই ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। পাশেই কোর্ট হিল (পরীর পাহাড়) থাকলেও সেদিকে কোনো দেয়াল করা হয়নি। ফলে বর্ষাকালে মার্কেটের নিচতলা ও দোতলা পাহাড়ের গড়িয়ে পড়া পানিতে ডুবে থাকে। মার্কেটে সাতজন নৈশপ্রহরী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। ধীরে ধীরে সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে সিডিএ সল্টগোলা শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী আকবর বলেন, কোটি টাকা দিয়ে দোকান কিনেও আমরা পথে বসেছি। সিডিএর নীতিগত ও প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণে শহরের সবচেয়ে দামি মার্কেটটি চালু হচ্ছে না। সিডিএর নীতিমালা এত কঠোর যে, দোকান ভাড়া দেওয়াও যায় না। আমরা চাই নীতিমালা শিথিল হোক এবং দোকানগুলো ভাড়া দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক।

সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, এ প্রকল্পগুলো মূলত ভুল বিনিয়োগ ছিল, যেগুলো ছালাম সাহেবের সময় নেওয়া হয়েছিল। কোনো ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা এখন এগুলো চালুর চেষ্টা করছি।

জটিলতার মেঘ কেটে যাচ্ছে

ডেঙ্গুর আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন, বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাড়ল পেঁয়াজের দাম

হাসিনার কৃপায় উত্থান সাম্রাজ্য ফেলে পলায়ন

বাংলাদেশি রোগীদের নতুন চিকিৎসা গন্তব্য তুরস্ক

রূপনগর লেক প্রায় ‘উধাও’ গভীর ঘুমে কর্তৃপক্ষ

ফুলের সঙ্গে সারা বেলা, তবু জীবন নয় ওদের ফুলের মতো

এনায়েতের জবানবন্দিতে ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্ক ফাঁস

দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তা পেতে গলদঘর্ম ইসি

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ঘিরে বিদেশিদের মহাপরিকল্পনা