পটুয়াখালীর চার আসন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে পটুয়াখালী সংসদীয় আসনের রাজনীতি। আট উপজেলা ও চার পৌরসভা নিয়ে চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-১, ২ ও ৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করায় সেখানে বইছে উৎসবের আমেজ। অপরদিকে, দ্বিতীয় ধাপে বিএনপি এ আসনে মো. শহিদুল আলম তালুকদারকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। অনেক প্রতীক্ষার পর প্রার্থী ঘোষণা করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনি আমেজ ফিরেছে।
তবে ৩ নম্বর আসনে দলটির প্রার্থিতা ঘোষণা না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। এখনো আশা ছাড়েননি এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা হাইকমান্ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি সমর্থকদের আশ্বস্ত করছেন।
এদিকে, এখনো প্রার্থী ঘোষণা না করায় পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলার চারটি আসনেই তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের মাঠে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এক আসনে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তিন আসনে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চার আসনে, গণঅধিকার পরিষদ দুই আসনে, এনসিপি দুই আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও নির্বাচনি মাঠে চলছে ঢিলেঢালা কার্যক্রম।
পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি) নিয়ে গঠিত জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
মাঠে আওয়ামী লীগর অনুপস্থিতি এবং অন্যান্য দল থেকেও শক্তিশালী প্রার্থী না আসায় বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী রয়েছেন তুলনামূলক ভালো অবস্থানে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও তৃণমূলের জনপ্রিয়তা তাকে এগিয়ে রেখেছে বলে স্থানীয়দের মত। ইতোমধ্যে প্রতিটি এলাকায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে পটুয়াখালী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মুফতি হাবীবুর রহমান, জমিয়তে উলামায় ইসলাম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি মাও. মো. আব্দুল হক কাওসারী, গণঅধিকার পরিষদ কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম ফাহিমকে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে।
পটুয়াখালী-২ বাউফলের মোট পনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ সংসদীয় আসন। দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী ঘোষণায় এ আসনে মো. শহিদুল আলম তালুকদার দলের টিকিট নিশ্চিত করেছেন।
তবে মনোনয়নবঞ্চিত অপর দুই প্রার্থী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।
আসনটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি থেকে মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা মো. জাকির হোসেন মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ আসন থেকে জামায়াত প্রার্থী দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, বাউফলবাসী আমরা একটা পরিবার, এ উপজেলার প্রতিটি মানুষ আমার আপনজন। আমাদের মূল লক্ষ বাউফলকে উন্নত ও আধুনিক মডেল উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে এখানকার রাজনৈতিক মাঠ। তবে এখানে বিএনপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের জোটবদ্ধ হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। আসনটি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জন্য খালি রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এ নিয়ে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তীব্র বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়। নেতাকর্মীরা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের মনোনয়ন চেয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিকল্প কোনো প্রার্থী মেনে নিতে নারাজ। এর জের ধরে গত মাসের ৬ নভেম্বর রাতে গণঅধিকার ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। এর আগেও এ আসনকে ঘিরে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে আমরা নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করব। দলের সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। পটুয়াখালী জেলা ও গলাচিপা-দশমিনা উপজেলা এবং প্রত্যেকটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সে সিদ্ধান্তই দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, নির্বাচনি জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দল। তবে স্থিতিশীল রাজনীতি ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আগামীতে নির্বাচনি জোট করলেও গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থীরা নিজ দলের মার্কা ট্রাক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
এ আসন থেকে জামায়াতে ইসলাম থেকে অধ্যাপক মো. শাহ আলম, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা মো. মোতাহার উদ্দিন।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও মহিপুর) থানা নিয়ে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম থেকে মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক শরীফ মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়াও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা গেলেও প্রার্থীদের নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।