কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনুমতি ছাড়া পদায়ন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেড ধারণ করতে না পারা, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়াসহ নানাবিধ অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব মোবারক আলী।
রোববার (৩০ নভেম্বর) এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরাবর তিনি এ পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগ তিনি লিখেন, ‘রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে আমাকে যুগ্ম-সদস্য সচিবে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আলোচনা বা পরামর্শ ছাড়াই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থি। তাছাড়া আমি এই পদে থাকবো কি-না এ ব্যাপারে আমাকে অবগত করা হয় নাই এবং আমি আরো মনে করি যে, দল অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, সিদ্ধান্তহীনতা, অনিয়ম ও আচরণগত সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি ভূমিকা নেয়ার পরও দল তারুণ্যের শক্তিকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ার স্বপ্ন কিছু হীনমন্যতা ও অদূরদর্শী আচরণের কারণে ভেস্তে গেছে’। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে অর্থসম্পদের মালিক হয়ে সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়েছে। এতে আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে এবং জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়েছে। এছাড়া জুলাইয়ের আহতদের তালিকাকরণে অবিচার হয়েছে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো এখনো পুরোনো ফ্যাসিবাদী বলয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গণহত্যার বিচার না হওয়া এবং অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
গত তিনটি নির্বাচনে যারা মাফিয়ার ভূমিকা নিয়েছেন, তাদের মাধ্যমেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। অথচ দল এসব নিয়ে কোনো পদক্ষেপ করছে না। বিপ্লবোত্তর সংকটের দায় দলের নেতৃত্বের ওপর বর্তায়। অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন-তাদের স্বীকৃতি কুক্ষিগত করা হয়েছে। এছাড়া দলের ব্যর্থতা ও অভ্যন্তরীণ অনৈক্য দুই দেড় বছরে কোনো কার্যকর সাফল্য আনতে পারেনি। জুলাই-আগস্টকে পণ্য মনে করি না, জুলাইকে অনুভব করি। আমি মনে এনসিপি তারুণ্যের শক্তিকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, জাতীয় ঐক্য নষ্ট করেছে এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বজায় রেখেছে। এছাড়া দল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি উদাসীন এবং নিয়ন্ত্রণ এমন এক বলয়ের হাতে চলে গেছে, যারা জনগণের অনুভূতি বোঝে না বরং বিদ্বেষ লালন করে।
তাই সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলায় এই দলের সঙ্গে থাকার প্রয়োজন বোধ করছি না। তাই পদত্যাগ করছি।