সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সংকট
তীব্র শীতে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদি পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শত শত পশু আক্রান্ত হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে মারা গেছে ৪০টি পশু । নানা রোগে আক্রান্ত পশু নিয়ে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগে চিকিৎসার জন্য এলেও সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেকে ধারদেনা করে বাজার থেকে ওষুধ কিনে তাদের পশুর চিকিৎসা করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে এই শীতে গরু-ছাগলের গলা ফুলে যাচ্ছে।
শরীরে তাপমাত্রা কমে দুর্বল হয়ে পাতলাপায়খানা করছে। সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মারা যাচ্ছে এসব প্রাণী। প্রতিদিন প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসব আক্রান্ত পশুর ভিড় জমছে।
আক্রান্তের মধ্যে অল্প বয়সের প্রাণীর সংখ্যাই বেশি। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, বর্ষায় গড়িয়ে আসা কীটনাশক মেশানো ডোবার পানি, শিশির ভেজা ঘাস, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বসবাসসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে এসব রোগবালাই বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে জেলা সদরসহ জেলার পাঁচটি ভেটেরিনারি হাসপাতালে এমন চার শতাধিক প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মারা গেছে ৪০টিরও বেশি পশু। অভাবি মানুষরা তাদের আক্রান্ত পশু ভ্যানে করে হাসপাতালে এনে বাজার থেকে ওষুধপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
অনেকে ধারদেনা করে পশুর চিকিৎসা করছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কোনো সময়ই এসব হাসপাতালে সরকারি ওষুধপত্র পাওয়া যায় না। হাসপাতালে এলে বাজার থেকে ওষুধ আনতে বলা হয়। সরকারিভাবে প্রাপ্ত কোনো সুযোগ-সুবিধাই পান না তারা। জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি দিয়ে প্রাণী চিকিৎসকদের আনতে হয়। গত সোমবার পঞ্চগড় সদর প্রাণিসম্পদ বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ অভাবি মানুষ তাদের আক্রান্ত পশু নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা সাধ্যমতো আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওষুধের তালিকা।
বাজার থেকে ওষুধ কিনতে না পারায় অনেকে অসুস্থ পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সদর উপজেলার ডুডুমারী গ্রামের রমজান আলী জানান, প্রায় চার দিন ধরে তার একটি বাছুর অসুস্থ । পর পর দুই দিন হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করছি। চিকিৎসক বলছেন, শরীরে তাপমাত্রা কমে গেছে ও গলা ফুলে যাওয়ায় কিছু খেতে না পেরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
স্যালাইনসহ ৬০০ টাকার ওষুধ বাজার থেকে কিনেছি। মিরগড় এলাকার আরমান আলী বলেন, আমার একটি ছোট বাছুর পাঁচ দিন ধরে কিছু খেতে পারে না। পাতলাপায়খানা করছে। মাথা তুলতে পারে না। এছাড়াও অনেক মানুষ তাদের আক্রান্ত পশু নিয়ে এসেছে হাসপাতালে। দুইজন কর্মীকে সেবা প্রদান করতে দেখা গেছে।
আক্রান্ত পশু নিয়ে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন সকাল থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিজিট নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। জরুরিসেবার সময় কোনো খোঁজখবর না নিয়ে দুইজনেই সরকারি গাড়ি হাঁকিয়ে চললেন কোথায় যেন জরুরি মিটিং আছে সেখানে যোগ দিবেন বলে। এমন ঘটনা এখানে নিত্যদিনের।
খামারিসহ প্রাণিসম্পদ বিভাগে সুবিধাভোগীদের অভিযোগ রয়েছে সরকারিসেবা সমূহ এখানে নামমাত্র। জরুরিসেবাসহ আনুষঙ্গিক কোনো সেবাই মিলছে না এখানে। সকাল হলেই বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকদের সঙ্গে সার্জন, স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তারা। আক্রান্ত গবাদি পশু নিয়ে অসহায়ের মতো বসে থাকেন সাধারণ মানুষ। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগের লোকজন কেউই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না এমন অভিযোগ রয়েছে।