বায়েজিদ থানার একটি মামলায় গত ২ নভেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন ইসমাইল হোসেন প্রকাশ মাইকেল বাবু নামে এক যুবক। গত ২৫ নভেম্বর আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করলে পরের দিন ২৬ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি পান তিনি। অথচ ২৩ নভেম্বর জেলে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন মো. হাসান নামে এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয় অভিযোগ উঠেছে ওই মামলায় জুলাই যোদ্ধা মো. শাহীন নামে একজন ছাত্রদল নেতাসহ তার ভাই জুলাই যোদ্ধা ফাহিমকেও আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদল নেতা মো. শাহীন ৫ ডিসেম্বর সিএমপি কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তার অভিযোগ সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মো. ইয়াছিন হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, পাহাড় কাটাসহ বহু মামলার আসামি হলেও তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। অথচ তার ইশারায় নগরের বিভিন্ন থানায় ছাত্রদল, যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর ১০ জন ব্যক্তি তার সহযোগী মো. হাসানের কাছে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে খুলশী থানায় অভিযোগ এনে মামলা করেন।
শাহীনের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি গত বছরের ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে গুলিবিদ্ধ হওয়া গেজেটভুক্ত একজন জুলাই যোদ্ধা এবং পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার ভাই মো. ফাহিমও গত বছরের ৪ আগস্ট আগত হওয়া একজন গেজেটেড জুলাই যোদ্ধা৷ দীর্ঘ দিন ধরে শাহীনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও আর্থিক-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল।
সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল সলিমপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াছিনের অন্যতম সহযোগী মো. হাসান গত ২৩ নভেম্বর খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে বলা হয় গত ১৮ নভেম্বর বিকাল চারটায় সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের মসজিদের সামনে তার পথ আটকে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এর আগে ১৯ নভেম্বর উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি উত্তর) বরাবরে দেওয়া অভিযোগে দাবি করা হয়, জঙ্গল সলিমপুরের মসজিদের সামনে চাঁদা দাবি করা হয়। কিন্তু ২০ নভেম্বর সিএমপি কমিশনারের কাছে দেওয়া অভিযোগে দাবি করা হয়, নগরের বায়েজিদ থানাধীন এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির সামনে তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। অর্থাৎ ২০ নভেম্বরের অভিযোগের স্থানের সাথে তিনদিন পর করা মামলার স্থানের সাথে কোনো মিল নেই। যা বড় ধরনের গলদ। এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, মামলায় ইসমাইল হোসেন নামে যাকে আসামি করা হয়েছে তিনি গত ২ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত বায়েজিদ থানার একটি কারাগারে ছিলেন। এ সংক্রান্ত নথি আমরা সংগ্রহ করেছি।
এতে আরও বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত দশটায় নগরের টেকনিক্যাল মোড়ে নয়জন ব্যক্তির অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে আমাকে জড়ানো হয়। বাস্তবে সেখানে আমার কোনো অস্তিত্বও নেই। আমার দাবি, সেই ভিডিওতে যারা আছেন তাদেরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হোক। তাদের কললিস্ট, মোবাইলের লোকেশন, কনভারসেশন তল্লাশি করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শাহীন আরও উল্লেখ করেন, মামলায় বলা হয়েছে মো. হাসান একজন স্কেবেটর অপারেটর। অথচ আমি জানতে পারি, তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াছিনের সেকেন্ড ইন কমান্ড। মামলায় তিনি স্কেবেটরের প্রসঙ্গ এনে নিজেকে মালিক করলেও প্রকৃতপক্ষে স্কেবেটরের মালিক সন্ত্রাসী ইয়াছিনের ছেলে মো. রাসেল৷ তাদের সবার বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে। জঙ্গল সলিমপুর পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করার কাজে ইয়াছিন অর্ধ শতাধিক স্কেভেটর ব্যবহার করেন। তিনি আলী নগর বহুমুখী সমবায় সমিতি নাম দিয়ে পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকার নামে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছেন৷ আওয়ামী লীগের সময়ে সীতাকুণ্ডের ডামি এমপি এস এম আল মামুনের বিশ্বস্ত অনুসারী ছিলেন একসময়ের জলদস্যু ইয়াছিন। এছাড়াও ইয়াছিন মহানগর বাস্তুহারা লীগের নেতা ও স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত।