কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজার এলাকায় সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও তাদের স্বজনরা। এই জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মালিকানাধীন জায়গা দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান ও তাদের স্বজনরা। প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ করা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেছেন জয়নাল আবেদিন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন গোমতী নদীর বাঁ তীরের বেড়িবাঁধ নির্মাণকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিগৃহীত কিছু জমি ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাড়া দিয়ে আসছে। এতে বেড়িবাঁধের ক্ষতিসহ জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
এ অবস্থায় আসমানিয়া বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে। আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ ও ২০২০ সালে দুই দফা নোটিশ প্রদান এবং উচ্ছেদের জন্য দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তৎকালীন সরকারের সময় দখলকারীদের বাধার কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারান্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিনের ছোট ভাই নাছির উদ্দিন ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল মেম্বারের ছোট ভাই গাফফার এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ও নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আরিফুজ্জামান খোকা আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন গোমতী নদীর বাঁ তীরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১৫ শতাংশ জমি দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া ওই বাজার এলাকায় পাউবোর আরো জমি দখল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদের অফিস, হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে দখলদার নাছির উদ্দিন বলেন, ‘জায়গাটি দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকায় ভরাট করে দোকান তুলেছি। তবে এই বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরো অনেক জায়গা দখল করে মার্কেট ও হোটেল নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। সেগুলো যদি সরকারিভাবে উচ্ছেদ করে, তবে আমিও আমার দখল ছেড়ে দেব।’
বর্তমান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খোকা বলেন, ‘এই জায়গার প্রকৃত মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় আমার দখল ছেড়ে দেব। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি যদি আবার দখল নেওয়ার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে না।’
আবেদনকারী জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্যে কুমিল্লার আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন জোয়ার গোবিন্দপুর এলাকার ১৫৫ নম্বর মৌজার ৯৬৯/১ খতিয়ানের ৭২৫০ নম্বর দাগে অবস্থিত আমাদের মালিকানাধীন মোট ১৯ শতক জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করে। তবে অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে মাত্র ৯ শতক জমির ওপর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং অবশিষ্ট ১০ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী ওই অবশিষ্ট ১০ শতক জমি আমার ভোগদখলে থাকার কথা থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করেছে এবং ভাড়া দিয়ে আসছে। এর আগে ২০১৬ ও ২০২০ সালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ অবৈধভাবে দখলকৃত এই ভূমি দখলমুক্ত করতে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। দ্রুত ওই ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
কুমিল্লা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, ‘জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যক্তি একটি আবেদন করেছেন। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সরেজমিনে গিয়ে জায়গা পরিমাপ করে প্রতিবেদন জমা দিলে সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’