নতুন নাম ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি ফ্রন্ট’
নির্বাচনের আগে আবারও পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা তৈরির লক্ষে নড়েচড়ে বসেছে ভারতের মদদপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। সম্প্রতি বাঙালি–পাহাড়িদের মধ্যে পরিকল্পিত দাঙ্গার পর সংগঠনটি নিজেদের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া সমালোচনা এড়াতে নতুন মুখোশ পরেছে। এবার তারা মাঠে নামছে নতুন পরিচয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি ফ্রন্ট (পিসিএসএফ)’। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে, এটি ইউপিডিএফের পুরোনো তৎপরতারই নতুন আবরণ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউপিডিএফ যখনই চাপের মুখে পড়ে, তখনই তারা নতুন নামে আরেকটি সংগঠন দাঁড় করায়। উদ্দেশ্য—মূল কাঠামোকে আড়াল করা, দায় অন্য ব্যানারের কাঁধে চাপানো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা। ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় ২ ডিসেম্বর হঠাৎ প্রচারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আত্মপ্রকাশ ঘটায় ‘পিসিএসএফ’।
এই নতুন প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে রয়েছেন বিদেশে থাকা কয়েকজন পাহাড়ি নেতা-সুইজারল্যান্ডে সঞ্চয় চাকমা, কানাডায় প্রজ্ঞা তাপস চাকমা, যুক্তরাষ্ট্রে প্যারিস চাকমা ও দিল্লিতে অবস্থানরত ইউপিডিএফের সাবেক নেতা সুহাস মিত্র চাকমা। তারা নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনের অংশ দাবি করলেও গোয়েন্দাদের বক্তব্য-এই পুরো কাঠামোই ইউপিডিএফের নতুন পর্দা। কারণ এরাই গত ৫ অক্টোবর খাগড়াছড়ির রামসুবাজারে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ উসকে দিয়েছিল। ইউপিডিএফের হয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণায় তাদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব এবং বান্দরবানের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান-তিন জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা আমার দেশকে বলেন, নতুন এই নামধারী সংগঠনগুলোকে ঘিরে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন।
কর্তৃপক্ষের ভাষায়, নাম যাই হোক, মাঠের কর্মীরা তো একই। তাই তাদের নড়াচড়া আমরা ছাড় দিচ্ছি না।
তারা জানান, পাহাড়জুড়ে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠা ছোট ছোট সংগঠনগুলোর গতিবিধিও এখন গোয়েন্দা নজরদারির আওতায়। বাজার, পরিবহন, পাথর-বালু ব্যবসা থেকে শুরু করে গ্রামভিত্তিক কমান্ডার নিয়োগ-সব জায়গায়ই নতুন ব্যানারের চাঁদাবাজরা দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাঙালি–পাহাড়ি দাঙ্গার পর হঠাৎ করে ‘পিসিএসএফ’-এর ঘোষণা গোয়েন্দাদের আরও নিশ্চিত করেছে যে দাঙ্গাটি ছিল পরিকল্পিত।
যেসব এলাকায় দাঙ্গার সূত্রপাত, ঠিক সেই এলাকাগুলোতেই দেখা গেছে নতুন সংগঠনের পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এটি পুরোপুরি পোস্ট–দাঙ্গা কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি। যেন মনে হয় নতুন কোনো আন্দোলন উঠছে। আসলে মূল নিয়ন্ত্রণ আগের হাতেই। যে চারজন নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা সবাই বিদেশে এতে নজরদারি আরও কঠিন হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, নাম পরিবর্তনে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো সমন্বিত পুনর্গঠন। সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে ২০১০–১৫ সালের মতো অস্থিরতা ফের ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে।