রায়গঞ্জের ন্যাশনাল স্কিলস ইনস্টিটিউট
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ এলাকা উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (এনএসডিআই) এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ইউনিয়নের দাদপুর কায়েস্থপাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই এনএসডিআই কেন্দ্রটি একসময় এলাকার বেকার যুবকদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের আশার কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবন, অকেজো যন্ত্রপাতি ও নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন অব্যবস্থাপনার এক জীবন্ত চিত্র। প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত, প্রশিক্ষণকাজে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত তিনটি গাড়ি, ৩০টি কম্পিউটার, ১৬টি ল্যাপটপ, ২৯টি সেলাই মেশিন ও ইলেকট্রিক ল্যাবের আধুনিক সরঞ্জামগুলোও নষ্ট হতে বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়মে জর্জরিত ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। দক্ষ প্রশিক্ষক বা অভিজ্ঞ কর্মী নয়, বরং রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তদের কারণেই প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা নিয়মিত অফিসে আসি, কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে কোনো বেতন পাচ্ছি না। তহবিলের অভাবে বেতন প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। আট মাস আগে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার পর থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ রয়েছে, ফলে প্রশিক্ষণ ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের নাটক সাজিয়ে, শোকজ এবং চাকরিচ্যুতির মতো অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে কার্যক্রম পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে জানান স্থানীয় সূত্র।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, বিদ্যুৎ অফিস জানিয়েছে, বিল পরিশোধ করা হলে সংযোগ পুনঃস্থাপন সম্ভব। প্রকল্পটি পুনরায় চালুর জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আবেদন পাঠিয়েছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) রোজিনা আক্তার বলেন, ইউএনওকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অকেজো যন্ত্রপাতি ও গাড়িগুলোর বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সরকারি অর্থে নির্মিত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দ্রুত সচল না হলে বেকার যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোগটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যাবে, আর কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদও ধ্বংসের মুখে পড়বে।