ভারত থেকে সীমান্তপথে আসা নিষিদ্ধ মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে কুমিল্লার লাকসাম। মাদকের সহজলভ্যতায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকে পড়ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তথা ফেসবুকের মেসেঞ্জারে অর্ডার দিয়ে বিকাশে টাকা পরিশোধ করে এ অঞ্চলে মাদক বেচাকেনা অতি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদক কারবারে ও সেবনে। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ।
মাদকাসক্তের কারণে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পারিবারিককলহ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনের মতো ঘটনাও বেড়ে চলছে। আর এই মাদকের দিকে বেশি ঝুঁকছে উঠতি বয়সের ছেলেরা। এরই সঙ্গে তাদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা।
জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্তরালে জেলার বিভিন্ন যানবাহনে করে আসছে এসব মাদক। বর্তমানে মাদক পাচারের অন্যতম নিরাপদ রুট কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেলপথ। কুমিল্লা থেকে সহজেই ট্রেনে করে মাদক চলে আসে লাকসাম জংশনে। এরপর এখান থেকে কারবারিরা এসব মাদক এক স্পট থেকে অন্য স্পটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারের কাশিনগর হয়ে পাশের উপজেলা লালমাই ভূশ্চিবাজার হয়ে লাকসাম রেলওয়ে জংশনে আসে।
তারপর এখান থেকে মনোহরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলে যাচ্ছে মাদক। এক কথায় মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে মাদক কারবারিরা এখন লাকসামকে ব্যবহার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, চোলাই মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা, ফেনসিডিল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে প্রতি পিস ইয়াবা প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত ও খুচরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ইয়াবা বহনের কাজে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারা ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতাদের দেখা যায়। উপজেলার রেল চিতোষী, পরানপুর বাজার, কৈত্রা, বিজরা পূর্ববাজার, মুদাফরগঞ্জ বাজার, মুদাফরগঞ্জ নগরীপাড়া, ধানকুইয়া, নাগঝাটিয়া, নোয়াপাড়া, শ্রীয়াং বাজার, সাতঘর ইছাপুরা, মোহাম্মদপুর, কৃষনপুর আশ্রয় প্রকল্প, খুস্তা, বরইগাঁও, কামড্যা, জংশন রেল কলোনি, দূপচর বাজার, চরবাড়ীয়া, নরপাটি, ইরুয়াইন দক্ষিণ, গন্ডামারা, পেয়ারাপুর নদীরপাড়, বৌবাজার, রাজঘাট, ঠাকুরপাড়া, কান্দিরপাড় এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের বেচা-কেনা হচ্ছে।
এদিকে সেবনের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানেই মাদকের সন্ধান পাই আমাদের টিম সেখানেই ছুটে যায়। এছাড়া নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানও পরিচালনা করছি। আমরা মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করছি। লাকসাম রেলওয়ে থানার জসিম উদ্দিন বলেন, লাকসাম রেললাইন কেন্দ্রিক মাদকের সঙ্গে ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে নজরদারি রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের প্ল্যাটফর্ম তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এছাড়া লাকসামে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় প্রতিটি ট্রেনে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।