ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। দলটি এখনো এ আসনে কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়নি। জানা গেছে, বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিনের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণেই মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে শরিকদের কাউকে আসনটি ছাড়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
দলের ভেতরের এই অন্তর্দ্বন্দ্বে তৃণমূল নেতাকর্মীরা হেভিওয়েট নেতাদের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় তরুণদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে তরুণ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে মুলাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সত্তার খান এবং ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদের নাম উঠে আসছে।
তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা, শীর্ষ পর্যায়ের দ্বন্দ্ব মেটাতে না পারলে এ আসনটি হারাতে পারে বিএনপি। ফলে সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদিনের মধ্যে কাউকে দিলে আসনটি নিয়ে শঙ্কা থেকে যাবে। একাধিক স্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, বরিশাল-৩ আসনে হেভিওয়েট নেতাদের মনোনয়ন দিলে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ বাড়বে, যা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সূত্র মতে, এই আসনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় অনেকে ধারণা করছেন, হয়তো জোটের অংশ হিসেবেই আসনটি ফুয়াদকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে আব্দুস সত্তার খান ও ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি। সাত্তার খান বারবার ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে, তরুণ নেতা ব্যারিস্টার আসাদও স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ দুই নেতার মধ্যে দলীয় বিভাজন বা গ্রুপিং নেই, যা নির্বাচনি সমন্বয়ের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা।
মুলাদী উপজেলার বিএনপি সমর্থক মিরাজ বলেন, হেভিওয়েট নেতাদের মনোনয়ন দিলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভে আসনটি হারানোর ঝুঁকি থাকবে। তাই যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে তরুণ কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মুলাদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব খান বলেন, যাদের এলাকায় জনসম্পৃক্ততা নেই, তাদের মনোনয়ন দিলে নিশ্চিত আসনটি হাতছাড়া হবে। এ ক্ষেত্রে সাত্তার খান অথবা আসাদকে বিবেচনা করা উচিত।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, বরিশাল-৩ বিএনপির ঐতিহ্যবাহী আসন। এই আসন কেন অন্য কাউকে দেওয়া হবে, বুঝতে পারছি না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবু দাবি থাকবে যাতে আসনটি আমাদেরই থাকে এবং যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিশাল-৩ আসনের মনোনয়ন প্রশ্নে বিএনপি যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তবে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও জোট-রাজনীতির চাপের কারণে এই আসনটি দলটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।