চট্টগ্রামের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপে রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাজ্জাদ হোসেন (২৬) নামে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরো অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নতুন ব্রিজ এলাকার টেম্পু স্ট্যান্ড ও বাকুলিয়ার সরকারি জমি দখল নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওই এলাকার বিএনপি নামধারী দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিলো। এরই জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে মঙ্গলবার রাতের এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেনের ছবিসংবলিত একটি ব্যানার সরানো নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। বিবাদমান এতটি পক্ষ মেয়র শাহাদাত হোসেন আরেকটি পক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলালের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচয় দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। তবে কোনো নেতায় অস্ত্রধারীদের নিজেদের লোক হিসেবে স্বীকার করেন নি।
সোমবার রাতে মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত পক্ষটি ডা শাহাদাতের ছবি সংবলিত বেশ কয়েকটি ব্যানার টানায় এলাকায়। মঙ্গলবার গভীর রাতে আরেকটি পক্ষ ব্যানারগুলো সরিয়ে নিতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
হতাহতদের চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা জিএম সালাউদ্দিন আসাদ নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিয়ে জানান, ‘যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যুবদলের পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করছে। মেয়রের ছবি লাগিয়ে তারা ব্যানার পোস্টার ঝুলিয়েছিল। মেয়রের লোকেরা তা খোলার নির্দেশ দিলে আমাদের ছেলেরা ব্যানার খুলতে যায়। তখন তাদের তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে উদ্ধার করতে গেলে ভবনের ছাদ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। এতে সাজ্জাদ হোসেন মারা যায়।’
দল থেকে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা এমদাদুল বাদশা বলেন, ‘অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারা এত অস্ত্র কোথা থেকে পেয়েছে? তাদের অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। গুলি করার আগে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা বিএনপির কেউ নয়; আগে যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর যুবদলের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করছে।
নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম নিজেকে বিএনপির অনুসারী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলেকে বন্ধুরা ফোন করে ডেকে নিয়ে গেছে। কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে জানি না। আমি চাই, যারা আমার ছেলেকে মেরেছে, তাদের বিচার হোক।
স্থানীয়রা জানান, যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা বাদশা আর যুবদল নেতা হুমায়ুন ও বোরহানের অনুসারী অস্ত্রধারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ৩০ মার্চ রাতে একই এলাকায় চলন্ত গাড়িতে গুলি করে দুই জনকে খুন করে সন্ত্রাসীরা। সেই ঘটনায়ও একই সন্ত্রাসীদের নাম আসে।
একজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশিক। তিনি বলেন, সাজ্জাদ হোসেন (২৬) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার বুকে গুলির আঘাত রয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও আটজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, গভীর রাতে বাকুলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৮/১০ জনকে হাসপাতালে নেয়া হলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।