আঞ্চলিক উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ ও বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ও মানবিক বিভাগের সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রায় একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও সবদিক থেকেই পিছিয়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)।
সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে ৫০তম সাধারণ সভায় বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেখানে দেখা যায়, শিক্ষক সংখ্যার দিক থেকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ ২০ তালিকার তলানিতে রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউজিসির ৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষক সংখ্যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান যথাক্রমে ৪র্থ, ১২তম ও ১৮তম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮০ জন, নোবিপ্রবিতে ৪১৫ জন এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। আর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০তম অবস্থানে রয়েছে।
বিভাগ ও শিক্ষার্থী সংখ্যায়ও পিছিয়ে কুবি
সমসাময়িক প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকেও পিছিয়ে আছে কুবি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮টি বিভাগে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি বিভাগে ৮ হাজারের বেশি এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি বিভাগে ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
অন্যদিকে ২০০৭ সালে মাত্র ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে রয়েছে ৬টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ, ৬ হাজার ৮৮৮ শিক্ষার্থী ও ২৮০ জন শিক্ষক। তবে ইউজিসির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসংখ্যা ২৬৬ জন। এদের মধ্যে ৯৮ জন বিভিন্ন ছুটিতে রয়েছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতেও মানদণ্ডে পিছিয়ে
বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাতের আন্তর্জাতিক মান ১:২০— অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে অন্তত একজন শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুপাত ১:৩৮। বর্তমানে ৬ হাজার ৮৮৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮২ জন।
কলা অনুষদের বাংলা ও ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান অনুষদের গণিত ও রসায়ন, ব্যবসায় অনুষদের অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং ও ম্যানেজমেন্ট, প্রকৌশল অনুষদের আইসিটি এবং আইন অনুষদের আইন বিভাগে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেনি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অনুপাত সবচেয়ে খারাপ। বিভাগটিতে ২৭১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক—অর্থাৎ অনুপাত ১:৬৮।
ফার্মেসি বিভাগে ২২৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৫ জন শিক্ষক (১:৪৬) এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ৩৩২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৮ জন শিক্ষক (১:৪২) পাঠদানে নিয়োজিত রয়েছেন।
ছুটিতেও নিয়মভঙ্গ
নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ছুটিতে থাকতে পারেন না। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯৮ জন ছুটিতে রয়েছেন—যা মোট শিক্ষকের ৩৪.৮৮ শতাংশ।
এর মধ্যে ৯৫ জন শিক্ষা ছুটিতে, দুইজন ডেপুটেশনে এবং একজন বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। ফলে শিক্ষক সংকটে অনেক বিভাগে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিএসই বিভাগের ৯ জন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের ৮ জন করে, পরিসংখ্যান, ফার্মেসি ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৭ জন করে, ইংরেজি ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৬ জন করে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫ জন, বাংলা, লোকপ্রশাসন ও আইসিটি বিভাগের ৪ জন করে, অর্থনীতি ও মার্কেটিং বিভাগের ৩ জন করে এবং ফিন্যান্স, ব্যবস্থাপনা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২ জন করে শিক্ষক ছুটিতে আছেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও কুবি পিছিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করতেছি।
উপাচার্য জানান, শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাত আন্তর্জাতিক মানে আনার লক্ষ্যে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগিরই নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে, এতে দীর্ঘদিনের সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।