চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘ছোট সাজ্জাদ’কে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর তার স্ত্রী তামান্না শারমীনকে পাঠানো হয়েছে ফেনী জেলা কারাগারে। কারাগার থেকেই চট্টগ্রামের অপরাধচক্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগের প্রমাণ মেলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ৬ নভেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার অনলাইনে ‘জেলখানা থেকে ছোট সাজ্জাদের ‘রিমোট কন্ট্রোল রাজত্ব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহ পর গত ১৮ নভেম্বর তাদের এই স্থানান্তর করা হয়। যদিও বিষয়টি জানাজানি হয় সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সৈয়দ শাহ শরীফ বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে ছোট সাজ্জাদকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তার স্ত্রীকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে এই স্থানান্তর করা হয়েছে।
কারা সূত্র বলছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ, অক্সিজেন, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নির্দেশ দিচ্ছিলেন-এমন তথ্য পাওয়ার পর তাকে উচ্চনিরাপত্তার আওতায় দূরবর্তী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
রাজশাহী কারাগারের জেলার মো. মুশফিকুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ছোট সাজ্জাদকে আমরা একটু আগেও দেখে আসলাম। মানে, ভিজিট করলাম। সাজ্জাদ যে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে, সেটি গুজব।
গত ১৫ মার্চ রাজধানীর একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তারের পর ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। ওই সময়েও ডাবল মার্ডারসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডে তার নাম ওঠে আসে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্য-সাজ্জাদের বাহিনীর সদস্যরা এখনও সক্রিয় এবং তাদের কাছে একে-৪৭সহ আধুনিক অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে কেনা এবং কুয়াইশ–বায়েজিদ সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় লুকোনো রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী তামান্না শারমীন মাঠে থাকা সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ নেন। অভিযোগ রয়েছে-তার নির্দেশেই ২৯ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুনসহ অন্তত তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। পতেঙ্গা সৈকতে ‘ঢাকাইয়া আকবর’ নামে এক সন্ত্রাসীকেও হানিট্র্যাপের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।
সবশেষ ৫ নভেম্বর বায়েজিদে গণসংযোগে থাকা নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সামনে সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পেছনেও ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাউজানেও অন্তত ৮ জন হত্যায় ছোট সাজ্জাদ বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
কারা কর্মকর্তাদের মতে, এতসব অভিযোগের পর চট্টগ্রামে রেখে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তাকে রাজশাহীর উচ্চনিরাপত্তা কারাগারে পাঠানো হয়েছে, আর স্ত্রীকে আলাদা রাখতেই রাখা হয়েছে ফেনীতে।