রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রতি রাতেই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে খুনের ঘটনাও। গত ১৩ মাসে ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে । এতে করে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ১ বছর ১ মাসে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৫টি খুনের ঘটনা হয়েছে। এসবের মধ্যে অধিকাংশই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় হয়েছে। এসব খুনের ঘটনার অধিকাংশের রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ ।
সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাজুড়ে চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। তৎমধ্যে চলতি সপ্তাহে উপজেলার দুই স্কুলে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে রাঙ্গুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনিক তৎপরতা দ্রুত বৃদ্ধি করতে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণে পৃথক স্থানে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এভাবে নিয়মিত বিরতিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাজুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর প্রতিপক্ষের হামলায় সরফভাটায় শ্রমিক দল নেতা মো. মন্নানকে রাতে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর লালানগরের ঘাগড়া খিল মোগল বাড়ির সংলগ্ন মসজিদের সামনে খোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তিকে গলাকেটে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বজন ও গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারছেন না। এসব হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। এই হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাতে সরফভাটায় সিকদার পাড়ায় ছুরিকাঘাতে রহমত উল্লাহ নামে একজন খুন হন। মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে খুনের ঘটনাটি ঘটে। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ মামলার প্রধান আসামি আশরাফ আলীকে আটক করেছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর পারুয়ায় রুমা বেগম নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিজ স্বামী কর্তৃক পোমরার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলফেরত স্বামী মো. নেজামের হাতে যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। খুন হওয়া রুমা চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন বনগ্রাম লালপাহাড়ের মীর আহম্মদের মেয়ে। গত ২৭ আগস্ট রুবেল নামে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে প্রতিপক্ষরা প্রথমে গুলি, পরে কুপিয়ে হত্যা করেছে। উপজেলার পদুয়ায় হারুয়ালছড়ি ইকুপার্কের পাশে একটি ঘরে এ হত্যার ঘটনাটি হয়। মাদক সংক্রান্ত বিরোধে ওই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। ১০ জুলাই পদুয়ায় মোবারক আলী টিলায় মো. রাসেল নামের এক যুবককে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে প্রথমে গুলি করে, পরে মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য কুপিয়ে হত্যা করে সংলগ্ন ধানক্ষেতে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত রাসেল মো. আলীর ছেলে। তিনি প্রবাসী ছিলেন। তবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটনার রহস্য পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি।
২০ জুন সরফভাটার কাইন্দারকুল নামক স্থানে সন্ত্রাসীরা গুলি করে শিবুউ মারমাকে হত্যা করে। উনি সরফভাটা পাহাড়ের মারমা পাড়ার চিংচালা মারমার ছেলে। জানা যায়, তিনি একজন লেবু ব্যবসায়ী । অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক সংক্রান্ত বিরোধে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে । প্রশাসন এখনো এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। গত ৬ জুন গোডাউন গরুর হাটে শ্বশুর ওসমান গনি নিজ জামাতা মুহাম্মদ হোসেন কর্তৃক খুন হন। জানা যায়, প্রকাশ্যে কুপিয়ে এ বৃদ্ধাকে হত্যা করেছেন। গত ১০ এপ্রিল ভোররাতে রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী সরফভাটা বোয়ালখালী সীমান্তে লেমুছড়া এলাকায় লেবু বাগান পাহারা দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আওয়াইমং মারমা নামে এক উপজাতীয় যুবক।
এছাড়া গত ২৬ মার্চ আ.লীগ নেতা নুরুল ইসলামকে সন্ত্রাসীরা হামলা করে হত্যা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম (৭০)। এই হত্যাকান্ডের আগের দিন ২৫ মার্চ মীরের খীল বাজারে তার নিজের দোকানে কুপিয়ে তাকে আহত করে। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত নুরুল ইসলাম সরফভাটা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। তার হত্যার রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি । এই ঘটনায় মামলাও হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি।
গত ১৫ জানুয়ারি বুধবার ভোররাতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়ি নতুন পাড়া এলাকায় ভাড়া ঘরে খুন হয়েছিলেন গৃহবধূ জরিনা বেগম । আগেরদিন রাতে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার রেশ ধরে গভীর রাতে স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। পরে পুলিশ স্বামী শাহ আলম হাসানকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার লালানগরের ইসলামিয়া পাড়ায় গাড়িতে গ্যাস নিয়ে ফেরার পথে রবিউল হোসেন রুবেল চালক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ।