মুন্সীগঞ্জের আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন। হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত আলুর অর্ধেকেরও বেশি এখনো অবিক্রীত রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু বের করার কথা থাকলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আগাম জাতের আলু বাজারজাত শুরু হওয়ায় সংরক্ষিত আলুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক এবং আলুচাষিরা।
কৃষকের জমিতে আলু উৎপাদন হতে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি আলু দর ২৫-২৬ টাকা পড়লেও ভালো মানের আলু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাভের আশায় সংরক্ষিত এসব আলু বিক্রি করতে না পারলে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলুতে এ বছর সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার অধিক লোকসানের সম্মুখীন হবেন আলু চাষে সংশ্লিষ্টরা। ফলে আলু চাষে রাজধানী হিসেবে খ্যাত মুন্সীগঞ্জের ৬০ হাজার আলুচাষির অনেকেই আসন্ন রবি মৌসুমে আবাদ করতে পারবেন না। এতে অনেক জমি অনাবাদি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জেলার ছয় উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। আবাদকৃত জমিতে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৮ টন আলু উৎপাদিত হয় যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার ৬৯ টনের বেশি। অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় জেলার ৬১টি হিমাগারে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৫ টন আলু সংরক্ষণ করেছেন। সংরক্ষিত আলুর মধ্যে এখনো খাবার আলু দুই লাখ ২৬ হাজার ২৩ টন এবং এক লাখ ৬ হাজার ১৬১ টন বীজ আলু হিমাগারে মজুত রয়েছে। এর ফলে এখনো তিন লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ টন আলু অবিক্রীত আছে। এর বিপরীতে গত বছর একই সময়ে মজুত ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৫ টন।
সরেজমিন ঘুরে আলুর দাম পড়ে যাওয়া এবং ক্ষতির কারণ জানতে চাইলে কৃষক, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে এবার চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদন হয়েছে। তাছাড়া বছরজুড়ে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এতে আলুর চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া একসময় আলু উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জের একক আধিপত্য থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ জেলায় ভালো মানের আলু উৎপাদন হচ্ছে। এর ফলে অন্যান্য জেলায় মুন্সীগঞ্জের আলুর তেমন চাহিদা নেই। অধিকাংশ জেলায় উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে। অন্যান্য বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলু বিদেশে রপ্তানি হতো, এ বছর খুবই স্বল্প পরিমাণ আলু বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। উপরন্তু এ জেলায় স্থাপিত দুটি পটেটো ফ্ল্যাক্স কারখানা বন্ধ থাকায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করতে পারেনি। এ জন্য আলুর বাজারে ধস নেমেছে।
আলুচাষে অভিজ্ঞ সদর উপজেলার চাম্পাতলা গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর সংরক্ষণে খরচ হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা আর বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাই কৃষকরা আলু নিতে হিমাগারমুখী হচ্ছেন না। নিপ্পন হিমাগারের সামনে বসে থাকা অপর আলুচাষি দিলদার হোসেন বলেন, পাঁচ দিন ধরে আলু বেচার চেষ্টা করছি, ক্রেতা নেই। তিনি আরো বলেন, বাড়িতে সংরক্ষিত ১০০ বস্তা আলুর মধ্যে ১০ বস্তা পচে গেছে। এ অবস্থা চললে কৃষকরা আগামীতে আর আলু চাষ করবে না।
বিক্রমপুর মালটিপারপাস হিমাগারের ম্যানেজার আ. রশিদ আমার দেশকে বলেন, সরকারি দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা বেঁধে দেওয়ার পর অনেক কৃষক আর হিমাগারমুখী হননি, নভেম্বরের মধ্যে আলু বের করতে না পারলে কোম্পানি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারের চাহিদা অনুযায়ী আলুতে ক্ষতি কমাতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্তি, সরকার প্রতিশ্রুত ৫০ হাজার টন আলু ক্রয়ের ব্যবস্থা করা, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ২০ কেজি করে আলু ক্রয় বাধ্যতামূলকসহ ১০টি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।