গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি কলোনি বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানীর অপহরণ নাটকের শেষ কোথায়? অপহরণ নাটকের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আলোচনায় এসেছেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী।
এবার টিঅ্যান্ডটি কলোনির তার বাসা ‘খতিব মানযিল’ থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী দুপুর দেড়টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে খালি গায়ে বেরিয়ে ভোঁ-দৌড়ে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তার ছোট ছেলে মুহাম্মাদুল্লাহ তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মসজিদের মুসল্লি ও আশপাশের লোকজন এসে তাকে চ্যাংদোলা করে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় নেওয়ার পর তিনি তার স্বজনদের বিরুদ্ধে ‘তাকে মেরে সারা শরীর ব্যথা’ করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন এবং কান্না করেন।
এ ব্যাপারে মুফতি মুহিব্বুল্লাহর বড় ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বুধবার জোহরের নামাজের পর তিনি হঠাৎ করে বাসা থেকে দৌড়ে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তাকে পালানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ইসকনের মহাপ্রভু চিন্ময় দাসের হাতে ‘পানি পড়া’ খাওয়ার জন্য যাচ্ছেন বলে স্বজনদের জানান। তবে কী কারণে তিনি স্বজনদের না জানিয়ে দৌড়ে পালাতে চান, সে বিষয়টি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে গত সোমবার রাতে মুফতি মুহিব্বুল্লাহকে হেফাজতে নেয় টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ। পরে রাতেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি সকালে হাঁটতে গেছি। হাঁটতে যাওয়ার পরে আমার মাথায় এলো যে আমি চলতে থাকি, যাই। কোন দিকে যাই, বলতে পারি না।
একপর্যায়ে আমি অটো পাইছি, অটোতে উঠছি, মীরের বাজার নামছি। নামার পরে মন চাইল যে আমি জয়দেবপুর যাই। সিএনজি দিয়ে জয়দেবপুর গেছি। এরপরে আমার মাথায় এলো যে আমি এখন এই বাসে উঠি।
বাসে উঠে শ্যামলী না কোন জায়গায় যেন নামিয়েছে। এখান থেকে আমি আরেকটা বাসে উঠে গাবতলী গেছি। ওইখান থেকে আমার মন চাইল যে আমি টিকিট করি। কই যাব, খেয়াল হলো যে আমি পঞ্চগড় যাই।
অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি। নামার পরে হাঁটতেছিলাম, কোন দিকে হাঁটতেছি আমি জানি না চিনি না, হাঁটতেছিলাম।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমি দেখি যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইনস এগুলো হেঁটে পার হয়ে গেছি। পার হয়ে গিয়ে আমি একটা শিকল কুড়িয়ে পেলাম। ওইটা নিয়ে আমি এক জায়গায় প্রস্রাব করতে বসলাম। প্রস্রাব করলাম আর পাজামায় প্রস্রাব লাগল, এর পরে জামায়ও লাগল। জামা খুলে ফেললাম, পাজামাও খুললাম। কিন্তু খোলার পরে আবার পরতে হবে এই জিনিসটা আমি আর পারি নাই ঠাণ্ডায়। ঠাণ্ডায় ওইখানে শুয়ে পড়লাম আর পায়ে শিকল দিলাম। এইটা কেন করতেছি এইটার কোনো চিন্তাভাবনা আমার নেই, খালি যা মাথায় আসতেছে তা করতেছি।”
তিনি নিজে নিজেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীকে (৬০) পঞ্চগড়ের সদর থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ গত ২৩ অক্টোবর সকালে তাকে একটি গাছের সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে এবং সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ পঞ্চগড় থেকে তাকে উদ্ধার করে টঙ্গী নিয়ে আসে।