ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ঘটে গেলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে ভারী ধাতব যন্ত্রাংশ—বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে প্রাণ হারান ৩৫ বছর বয়সী তরুণ উদ্যোক্তা আবুল কালাম। মুহূর্তেই থেমে যায় তার জীবন, আর পরিবার ও পরিচিতদের হৃদয়ে সৃষ্টি হয় অসীম শূন্যতা।
আবুল কালামের জন্ম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি এলাকায়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। কাজের সূত্রে ফার্মগেট এলাকায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন এক পুত্র ও এক কন্যার প্রিয় পিতা। পাঁচ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ও তিন বছরের মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের কাছে তিনি ছিলেন শুধু বাবা নয়, এক জীবনের স্নেহ ও সহানুভূতির প্রতীক। কালাম পরিবারের সঙ্গে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে।
কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনার আগের রাতেই আবুল কালামের একটি ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি লিখেছিলেন, “ইচ্ছে তো অনেক। আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।”
পরের দিন এই পোস্টের বাস্তবতা প্রকাশ পেল, যখন জীবন আর তাকে সহ্য করতে দেয়নি।
তারেক আজিজ নামের একজন বন্ধু পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, “সি এম আজাদ, আবুল কালাম ভাইয়ের শেষ পোস্ট। আজকে মেট্রো রেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে তিনি নিহত হয়েছেন। কিছু মৃত্যু মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়।”
ফার্মগেট এলাকায় স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন দুর্ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা ও মনোযোগের ঘাটতি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে। কেউ যেন আর এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতির শিকার না হন।
আবুল কালামের সহকর্মী ও বন্ধুদের কথায়, আবুল সবসময় জীবনকে ভালোবাসতেন। স্বপ্ন দেখতেন, কাজ করতে ভালোবাসতেন। হঠাৎ তার চলে যাওয়ায় আমরা কেউই মানতে পারছি না।
নিহতের স্বজন আরিফ হোসেন জানান, আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকুরি করতেন। কাজের সূত্রে তিনি নিয়মিত রাজধানীতে যাতায়াত করতেন। দুপুরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে অপরিচিত একজন ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন।
আরিফ আরও জানান, আবুল কালামের মা-বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় থাকতেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।
ছোট্ট শিশু দুই—ছেলে আব্দুল্লাহ ও মেয়ে সুরাইয়া—আজ থেকে বাবা ছাড়া পৃথিবীতে পথ চলতে শেখার চেষ্টা করবে। এক পিতার মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, পুরো দেশকে কাঁদাচ্ছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অপ্রত্যাশিত, আর নিরাপত্তা কতটা প্রয়োজনীয়। এক ফেসবুক পোস্টের এক প্রার্থনা, আর এক মেট্রোরেলের অবহেলা—সব মিলিয়ে থেমে গেল এক স্বপ্নবাজের জীবন।