নারায়ণগঞ্জ জেলার তারাবো পৌরসভার বরপা এলাকার বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেন। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। বাজার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল, ওষুধসহ সকল খরচ সামলানোর উপায় এখান থেকে।
কিন্তু ছিচকে চোরদের উৎপাতে বাড়িতে ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন ভাড়াটিয়া আসলেও কয়েক মাসের মধ্যে তাদের সহায় হারিয়ে অন্যত্র চলে যায়। ফলে এলাকার অনেক বাড়িওয়ালার মতো আনোয়ার হোসেন নিজের বাড়িতে থেকেও খরচ সামাল দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
থানা সূত্র জানায়, গত ১২ নভেম্বর গোলাকান্দাইল এলাকার ইসমাইলের পায়ে গুলি করে তার সাথে থাকা সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১৬ অক্টোবর উপজেলার দক্ষিণ রূপসীর দেলোয়ারের বাড়িতে ডাকাতি, ১৮ অক্টোবর কুশাব আয়েত আলীর বাড়ি থেকে ২৫ স্বর্ণালংকারসহ ৩ লাখ টাকা লুট, ২০ অক্টোবর গোলাকান্দাইল এলাকার ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের বাড়িতে হানা দেয় ডাকাত দল। গত ৫ নভেম্বর রাতে মুড়াপাড়া বাজার এলাকার ৪টি জুয়েলারিতে হামলা চালায় ডাকাত দল।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ৩০০ ফিট সড়ক ধরে বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন জিসান। কাঞ্চন পাড় হয়ে ঢাকা বাইপাস সড়কের ভুলতা এলাকায় আসলে পিছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে ৭/৮ জন তাদের গতিরোধ করে। অস্ত্রের মুখে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, আইফোন ও আইপ্যাড নিয়ে যায়। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সম্প্রতি রূপগঞ্জ থানা এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে এখানকার ৯টি বাড়িতে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ৩০০ ফিট থেকে শুরু করে ঢাকা বাইপাস, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের টাটকি থেকে আউখাব। সুযোগ পেলেই সঙ্গবদ্ধ চক্রটি মহাসড়কের যানবাহনে হামলা করে যাত্রী ও পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। কয়েকটি ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা আলোচনায় আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ না করার কারণে ঘটনাগুলোর কোনো বিহিত হচ্ছে না।
শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড়-মাঝারি সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা এখানকার শিল্পের শ্রমিক। জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে বাসা ভাড়া এখানে বসবাস করে। যাদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার পথে ছিনতাই এখানকার নিত্য দিনের ঘটনা। কান্দাপাড়া এলাকার শ্রমিক জুলহাস মিয়া বলেন, মাদকসেবীদের অত্যাচারে রাস্তায় চলাচল করা দায়। মোবাইল ফোন নিয়ে রাস্তায় চলতে গিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হলে, মুহূর্তের মধ্যে তা হাওয়া হয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের যন্ত্রণায় এখানকার রাস্তাগুলোতে একা চলাফেরা করা প্রায় অসম্ভব। এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে কয়েকদফা এদেরকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করার কয়েকদিনের মধ্যেই তারা এলাকায় ফিরে এসে অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। টিকতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা এখন কাজে যাওয়া ও আসার সময় দলবেধে চলাফেরা করছেন।
গোলাকান্দাইল এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক আকলিমা বেগম বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ঘরে ফিরে ঘুমাতে গেলে চোরের যন্ত্রণায় পড়তে হয়। মনের ভুলে কোনো জিনিস ঘরের বাইরে থেকে গেলে সকালে উঠে আর পাওয়া যায় না। ছুটিতে কোথাও বেড়াতে গেলে ঘরে ফিরে ব্যবহারের পুরাতন কাপড় ছাড়া কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এমন অভিযোগ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতির বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ভোলাব তদন্ত কেন্দ্র ও ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ি নিয়ে গঠিত রূপগঞ্জ থানা এলাকায় পুলিশের দেড় শতাধিক সদস্য নিয়ম করে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কোনো অপরাধের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হচ্ছে। যানবাহন সঙ্কটের কারণে কিছু সমস্যা হলেও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-বি) মেহেদী ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। চুরি-ডাকাতির বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো আমরা যথাযথ ভাবে তদন্ত করছি। কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ ডাকাতিকৃত মালামাল উদ্ধার ও অভিযুক্তদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে।