আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নারায়ণগঞ্জ- ৪ (সদর উপজেলা) আসনে সক্রিয়ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামি দলগুলোর এমপি প্রার্থীরা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে।
আসনটিতে বিএনপি এখনো তাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। দলটির অন্তত পাঁচজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর প্রার্থীরা দিন দিন নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আসনটিতে কখনো ইসলামি কোনো দল জয়লাভ করতে পারেনি। তবে এবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও নিয়মিত ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী খন্দকার আনোয়ার হোসেনও নির্বাচনকেন্দ্রিক গণসংযোগ ও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আসনটিতে বিএনপি সর্বশেষ ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। সেবার এ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার মাঠে রয়েছেন বিএনপির পাঁচ নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বারী ভূঁইয়া ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির পাঁচ নেতাই নিজেদের দলের জন্য ত্যাগী হিসেবে দাবি করছেন। দলের জন্য নিজেদের বিভিন্ন ত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রত্যেকেই নিজেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য ও দাবিদার মনে করছেন।
আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তিনি জানান, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে প্রায় অর্ধশত মামলার আসামি হয়ে তিনি কারাবরণ করেছেন। কলেজে ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে রিমান্ডের নামে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক মামুন বলেন, ফতুল্লা হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। এ আসনে বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে কোনো উন্নয়ন হয়নি। মানুষ মুখিয়ে আছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাই।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব নিজেকে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে মনে করেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলে একের পর এক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফতুল্লার জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনসম্পৃক্ত কাজে দলীয় নেতাকর্মীদের একত্রিত করছি।
তার বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজি বা দখলবাজির কোনো অভিযোগ তুলতে পারবে না দাবি করে রাজীব বলেন, দলের মঙ্গলে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে কাজ করছি। দল যদি মূল্যায়ন করে, তাহলে এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে প্রস্তুত আছি।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুও আসনটিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। তার দাবি, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজপথে থেকে দলীয় নির্দেশে যারা কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। টিটু জানান, ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় হাসিনাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি পুলিশের ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পান। এছাড়া ৪০টি মামলার আসামি হয়েও কখনো রাজপথ ছাড়েননি বলে দাবি করেন তিনি।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বারী ভূঁইয়াও এই আসনে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
হাসিনার শাসনামলে এক ডজন মামলার আসামি হয়েও হাল ছাড়েননি দাবি করে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। জুলাই অভ্যুত্থানে মাঠে ছিলাম প্রতিদিন। কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। জুলাই বিপ্লবের পর কোনো দখলবাজি বা চাঁদাবাজি করেননি দাবি করে বারী বলেন, আমার বিশ্বাস, সব দিক বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি দলের জন্য নিজের ত্যাগের কথা বিবেচনা করে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি আমার দেশকে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আমি মঞ্চে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছি। সে কারণে আমাকে তিন দিন গুম করে রাখা হয়। ক্রসফায়ার দিতে ফতুল্লার একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। কিন্তু আল্লাহ সেদিন আমাকে বাঁচিয়ে দেন। দল আমার ত্যাগের কথা বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে আমি ধানের শীষের হয়ে লড়াই করে আসনটি উপহার দিতে চাই।
প্রায় আড়াই দশক পর বিএনপি যখন আসনটি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে, তখন ইসলামি দলগুলোর প্রার্থীরাও নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যস্ত। জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি মাঠে কাজ করছেন নিয়মিত। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
এদিকে জমিয়তের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীও বিএনপি প্রার্থীদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট করলে সেই জোট থেকে কাসেমীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আবদুল জব্বার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জে জামায়াতের একজন কর্মীর বিরুদ্ধেও কেউ চাঁদাবাজি বা দখলবাজির অভিযোগ করেনি। কিন্তু অন্য একটি দলের অনেক নেতাকর্মী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আমরা সেই পরিবর্তনের আশায় ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আমরা ন্যায় ও ইনসাফের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি কাসেমী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে লড়াই করেছিলাম। এবারো ভোটের মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব। সুযোগ পেলে জনগণের সেবায় কাজ করে যাব।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী খন্দকার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। মানুষ মুখিয়ে আছে ভোট দেওয়ার জন্য। আমি জিততে পারলে জলাবদ্ধতা, সড়ক সংস্কার ও শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেব।