হোম > সারা দেশ > ঢাকা

বিএনপির ঘাঁটিতে ভাগ বসাতে জামায়াতের জোর প্রচার

মাহবুবুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের মাটি বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনে জেলার সবকটি আসন ছিল জাতীয়তাবাদী নেতাদের দখলে। আসন্ন ভোটেও আগের আধিপত্য ধরে রাখতে তিনটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। কিন্তু ধানের শীষের নমিনিদের নাম প্রকাশের পরই ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। তাদের মনোনয়ন বাতিল দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো জেলা। অপরদিকে নীরবে সংঘবদ্ধ প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টায় আছেন জামায়াত প্রার্থীরা।

জেলার তিনটি আসনে বিএনপির বেশ কজন নেতা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই নানাভাবে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন; জনগণের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কিন্তু ধানের শীষের প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর তারা বেশ বিক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরাও হয়ে পড়েছেন বিভক্ত। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে সব আসনে একাধিক নেতার হয়ে কাজ করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারে পড়েছে ভাটা।

বিএনপি নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে মেতে উঠেছেন বিষোদ্গারের প্রতিযোগিতায়, আর অনুসারীরা জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে। এই বিভক্তি কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে দলটিকে ভোটের ফল নিয়ে পস্তাতে হতে পারে। এমনকি পরাজয়ের স্বাদও নিতে হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। ফলে হাতছাড়া হতে পারে মুন্সীগঞ্জের সব আসন।

জামায়াত প্রার্থীদের নাম বছরখানেক আগেই ঘোষণা করলেও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। কেউ বিদ্রোহ করারও আশঙ্কা নেই। তাই প্রচারে পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা, ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন নির্ঝঞ্ঝাটভাবে।

রাজনীতিসচেতন মহলের মতে, প্রার্থী বাছাইয়ে দুর্বলতা থাকলে ২০০৮ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সেবার বিএনপির আধিপত্য কমাতে জেলার একটি আসন কমিয়ে তিনটি করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে (সদর ও গজারিয়া) তৃণমূলে ব্যাপক জনপ্রিয় জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল হাইকে ঢাকায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে তার দীর্ঘদিনের আসন মুন্সীগঞ্জ-২ (টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং) আসন থেকে সরিয়ে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে দেওয়া হয়েছিল।

মিজানুর রহমান সিনহাকে মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী) আসন দিতে গিয়ে দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছিল। এতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ ও হতাশা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে সবকটি আসনই হারিয়েছিল বিএনপি। এবারো মনোনয়ন নিয়ে তিনটি আসনেই নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রায় প্রতিদিনই সব আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ করছেন বঞ্চিতরা। সড়কপথ অবরোধ করেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। হামলা-পাল্টা হামলায় আহতের ঘটনাও ঘটছে। এতে জনভোগান্তি হওয়ায় ফুঁসে উঠছেন স্থানীয়রা। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ। এতে ভেস্তে যাচ্ছে প্রচার; উৎসবের পরিবেশ পরিণত হয়েছে সংঘাতের ময়দানে।

জামায়াত প্রার্থীরা দলীয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে আছেন। তিন আসনে তিন শিক্ষাবিদকে দাঁড়িপাল্লার নমিনি করেছে দলটি। তারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চালাচ্ছেন, পাড়া-মহল্লায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক, ঘরোয়া অনুষ্ঠানসহ নানাভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। মসজিদ, চা-দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজারসহ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তাদের প্রচার কার্যক্রম চলছে না। তারা বিএনপির দীর্ঘদিনের দুর্গ দখলে নিতে এখন মরিয়া।

ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ অন্য দলগুলোও জেলার সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুন্সীগঞ্জ-১ ও ২ আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করেছে। তারাও নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর ও সিরাজদিখান)

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোমিন আলী। তাদের মধ্যে দলীয় টিকিট পেয়েছেন শেখ আবদুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছেন বঞ্চিত দুই নেতা।

জামায়াত এখানে প্রার্থী করেছে একেএম ফখরুদ্দিন রাজীকে। ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে দিন-রাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। দলটির নেতাকর্মীরাও বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লার প্রচার চালাচ্ছেন।

এনসিপি অতিসম্প্রতি এই আসনে আলী নেওয়াজকে মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীও মাঝেমধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা। তার বিরু্দ্ধে আন্দোলন করছেন অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ। প্রতিবাদী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যে সভা-সমাবেশ করছেন। তারা বলছেন, মিজানুর বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন এবং এক-এগারোর পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে নেতাকর্মীদের থেকে দূরে সরে গেছেন।

আবদুস সালামের পক্ষে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর রিপন মল্লিকসহ একাংশের নেতাকর্মীরা উঠান বৈঠক, পথসভা করে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে পদ্মার ভাঙনকবলিত টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং এলাকায় আসাদুজ্জামানের ক্লিন ইমেজের কারণে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাও আছে।

জামায়াত এখানে অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করিমকে প্রার্থী করেছে। তিনি এর আগেও আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন। এছাড়া জেলা আমিরের দায়িত্ব পালন করায় তার পরিচিতি আছে জেলাজুড়ে। আর নেতাকর্মীরা তার পক্ষে পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক সুসম্পর্ক রাখছেন।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন এখানে কেএম বিল্লাল হোসেনকে প্রার্থী করেছে। এনসিপির জেলা সমন্বয়ক মাজেদুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের জাহিদুল ইসলামও প্রচার চালাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর ও গজারিয়া)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলটির জেলা শাখার সদস্য সচিব ও সাবেক সভাপতি আবদুল হাইয়ের ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। বিএনপির দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত তালিকায় মনোনয়ন দেওয়া হয় কামরুজ্জামানকে। এরপর থেকেই তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে টানা বিক্ষোভ করছেন মহিউদ্দিনের অনুসারীরা। শহরে প্রতিবাদ সভা, মশাল মিছিল ও মুক্তারপুর ব্রিজ দুই ঘণ্টার জন্য অবরোধও করেন তারা। এমনকি মহিউদ্দিনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভার ৩৯ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

ধানের শীষের নমিনি বিতর্কে গজারিয়ায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ধীরে ধীরে চরমে পৌঁছেছে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটারও আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

জামায়াত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক আবু ইউসুফকে প্রার্থী করেছে। তিনি অপেক্ষাকৃত প্রবীণ হলেও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সমর্থন চাইছেন। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপক প্রচারও চালাচ্ছেন। এমনকি দলটির নারী কর্মীরা পরিবর্তনের অঙ্গীকারের বার্তা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এবং দাঁড়িপাল্লার জন্য ভোট চাইছেন।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন মাওলানা মাহমুদুল হাসান সুমনকে এই আসনে প্রার্থী করেছে। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী নুর হোসেন নুরানী। তবে মনোনয়ন এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি এনসিপি।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী, বললেন যে কারণ

‘জুলাই রেবেলস’ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ছাত্রদল নেতা আটক

বিজয় দিবসের রাতে দুর্বৃত্তরা পোড়াল বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর

পদ্মা সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবস পালিত

মানিকগঞ্জে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুই ককটেল বিস্ফোরণ

আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার

ভাইকে সমর্থন দিতে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন চাইলেন হাসান সরকার

নির্বাচনি আচরণবিধি উপেক্ষা করে উঠান বৈঠকে বিএনপি প্রার্থী