নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের
যশোরের কেশবপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল (৩৭) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা গেছেন। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ। পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হাসিবুর রহমান জানান, উজ্জ্বলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পরে ‘বহনকৃত মৃত’ উল্লেখ করে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
নিহতের বড় ভাই কেশবপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন বাবু অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সুস্থ অবস্থায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা উজ্জ্বলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার কাছে কোনো অস্ত্র বা মাদক ছিল না। পরে শুনেছি তার কাছে নাকি ২০টি ইয়াবা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মারধর করা হয়। ফজরের আজান পর্যন্ত তার ওপর নির্মম নির্যাতন চলে। কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। আমি এর বিচার চাই।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানে চারজনকে অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ আটক করা হয় বলে জানানো হয়। তারা হলেনÑকেশবপুর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ (৪০), তার ভাই আলম (৩৫), আলতাপোল গ্রামের ওয়ালিউর রহমান উজ্জ্বল (৩৫) এবং নতুন মূলগ্রামের রাসেল (৩০)।
পুলিশ জানায়, তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, ধারালো অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার কেশবপুর থানার এসআই লিটন চন্দ্র দাস জানান, আটকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে তিনটি মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
শনিবার দুপুরে কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা উজ্জ্বলের মৃত্যুর খবর একজন অফিসার রাতে টেক্সট করে জানান। সকালে বিষয়টি নিশ্চিত হই।
তিনি আরো জানান, যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিম্মায় নেওয়ার আগে আটকদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। তবে পুলিশ তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেনি বলে দাবি করেন তিনি। পরে তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ জানান, রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে চারজনকে রিসিভ করা হয়। উজ্জ্বলের মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকায় তাকে কারাগারের হাসপাতাল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। আধা ঘণ্টা পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত পৌনে ১১টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পারি, বাইরে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। তিনি ‘পাবলিক অ্যাসাল্ট’ ছিলেন।
কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল প্রায় এক বছর আগে যুবদল থেকে বহিষ্কৃত হন। তার বড় ভাই আফজাল হোসেন বাবুও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সম্প্রতি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, উজ্জ্বল আমাদের দলের কর্মী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হেফাজতে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আইনগত প্রক্রিয়ায়ই তার বিচার হওয়া উচিত।