হোম > সারা দেশ > রংপুর

‘লজিক’ প্রকল্পের সাড়ে ৯ কোটি টাকার হদিস নেই

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে শুরু হয় ‘লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা লজিক প্রকল্প। তবে পদে পদে দুর্নীতিতে ভারাক্রান্ত প্রকল্পটির কোটি কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিইডি) স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে পরিচালিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনিসিডিএফ ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। উপকূলীয়, হাওরাঞ্চল ও চরবিশিষ্ট সাতটি জেলার ৭২টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষকে জলবায়ু সহনশীলতার আওতায় আনাই ছিল এর মূল লক্ষ্য।

২০১৬ সালে লজিক প্রকল্পের যাত্রা হলেও কুড়িগ্রামে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। চর রাজিবপুর, রৌমারী ও চিলমারীর মোট ১০টি ইউনিয়নে চার হাজার ৫০০ সুবিধাভোগী নারীকে নিয়ে গঠন করা হয় নানা নামের গ্রুপ। প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কর্মী কিংবা আওয়ামী লীগমনা একজন করে মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েকটি দলের সদস্যদের সঙ্গে। তারা জানান, প্রকল্পের মাঠকর্মীরা প্রথমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা করে নেন। কিন্তু কোনো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। এরপর মাসিক সঞ্চয় নেওয়া হলেও তার হিসাব কারো জানা নেই। কোনো সঞ্চয় বইও দেওয়া হয়নি—সব রেকর্ড কেবল মাঠকর্মীদের খাতায়।

পরবর্তী সময়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় দুটি করে ভেড়া দেওয়ার। কিন্তু বাস্তবে দেওয়া হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা, সেখান থেকেও আবার ৫০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। ভেড়ার ঘর, খাবার ও ওষুধ বাবদ বরাদ্দ পাঁচ হাজার টাকার কিছুই সদস্যরা পাননি।

এছাড়া শুরুতে ২০-২৫ জন সদস্য নিয়ে একটি করে গ্রুপ করা হয়। সেই গ্রুপের নামে খোলা হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল খুব কম এবং অনেকটাই কষ্টসাধ্য। এরপর সদস্যদের ব্যক্তিগত মোবাইল হিসেবে ২২ হাজার করে এলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পদ্ধতি পরিবর্তন করে শেখ ফজলে নূর তাপসের মালিকানাধীন মধুমতী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়নের মাঠকর্মীরাই সেখানে ব্যাংকের এজেন্ট হয়ে যান।

উপকারভোগী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদস্যদের মোবাইলে টাকা আসলেও তা জমা হয় গ্রুপের অ্যাকাউন্টে, যা নিয়ন্ত্রণ করেন মাঠকর্মী ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সদস্য। সুবিধাভোগীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হয়—তবে সেই টাকার ব্যবহারের কোনো স্বচ্ছতা নেই।

শিবিরপাড়া শাপলা দলের সদস্য বানেছা বেগম ও শ্রীমতী কাজলী বলেন, ‘৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা, ১০ হাজার দিয়ে আর খবর নেই। আমাদের বলে জমি বন্ধক নাও, টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পাইনি কিছুই।’

টুলি বেগম বলেন, আমরা কিছু বললেই ভয় দেখায়। বলে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করলেই তোমাদের নাম কেটে দেব। এজন্য কেউ কিছু বলারও সাহস পায় না।

শাপলা দলের দলনেতা রহিমা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছে। সেখান থেকে আবার ৫০০ টাকা করে ফেরত নিয়েছে। এর আগে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করার কথা বলে নিয়েছে এক হাজার ১০০ টাকা করে অথচ কোনো অ্যাকাউন্টই করা হয়নি। পরে মোবাইলে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে ১০০ টাকা করে নিয়েছে সবার কাছ থেকে। এরপর ওই অ্যাকাউন্টে ২২ হাজার করে টাকা আসছে কিন্তু সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। মধুমতী ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্ট। আমাদের শুধু ফিঙ্গার দিতে বলে আমরা ফিঙ্গার দিই।

সূত্রমতে, প্রত্যেক সুবিধাভোগীর জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৫২০ টাকা করে। অথচ হাতে পেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী, তিন উপজেলার চার হাজার ৫০০ সদস্যের ৯ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ নেই।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নেওয়া হয়েছে এবং ব্যবসা শুরু করা হয়েছে। অথচ উপকারভোগী বেশির ভাগ সদস্যই এসবের কিছুই জানেন না। ৩০ অক্টোবর কাগজে-কলমে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কুড়িগ্রামের উপকারভোগী সদস্যরা জানে না তাদের এই টাকার ভবিষ্যৎ কী?

লজিক প্রকল্পের চর রাজিবপুর উপজেলা সমন্বয়ক শাহিন আলমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে গ্যাপ শুনতে পাচ্ছি এটা যদি বাস্তবে হয়, তাহলে তো ভবিষ্যতে টাকাটা রিস্কে পড়ে যাবে।

ইউএনডিপি জেলা সমন্বয়ক খোকন কুণ্ড এ ব্যাপারে বলেন, আমরা সবার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছি। কিছু টাকা তোলা হয়েছে রেজুলেশনের মাধ্যমে। কিছু টাকা তাদের অ্যাকাউন্টেই আছে। এখন তারা সমবায়ের অধীনে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিচ্ছে—১৮-২০টি সমবায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। জমি নেওয়া আছে, ভেড়া কেনা আছে। আবার কিছু টাকা তাদের অ্যাকাউন্টেও আছে।

নীলফামারীতে নবান্নের বারতা নিয়ে কৃষকের উঠানে হেমন্ত

নীলফামারীতে আ.লীগের ১২ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

নীলফামারীতে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

রংপুরে দাঁড়িপাল্লার শোভাযাত্রায় সমর্থকের মৃত্যু, আহত ৩

ড্রিমারস স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ‘ক্যারিয়ার ভাবনা’

একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট জনগণ মেনে নেবে না: এটিএম আজহার

গরুর দালাল থেকে মন্ত্রী, অতঃপর হাজার কোটি টাকার মালিক

ড্রামে লাশ: জরেজের দাবি ‘অপরিচিত একজন মোবাইলটি দিয়েছিল’

জাতীয়তাবাদী দল কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে: ডা. জাহিদ

প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে লাশ উদ্ধার: সন্দেহের তীর বন্ধুর দিকে