হোম > সারা দেশ > রংপুর

এক রুমে সব শ্রেণির ক্লাস, জুতার দোকানে চলে দাপ্তরিক কাজ

আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চরাইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির ক্লাস চলছে একটি টিনশেট রুমে। প্রায় দেড় বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ধুকেধুকে চলছে তার শিক্ষা কার্যক্রম।

ভাঙনের পর এখন একটিমাত্র টিনের ছাপড়া ঘরেই পরিচালিত হচ্ছে সব শ্রেণির ক্লাস। একটি শ্রেণিকক্ষে কিছু চেয়ার-টেবিল রাখার ব্যবস্থা হলে অন্যান্য সরঞ্জামাদি রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় মূলত পাঠদান কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চরাইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একজন পল্লী চিকিৎসকের বাড়ির উঠানে অবস্থিত। একটি দরজা ও দুইটি জানালা বিশিষ্ট রুমে ফ্যান না থাকায় অতিরিক্ত গরমে কোমলমতি শিশুদের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়।

স্কুলের অবকাঠামো বলতে কয়েকটি টিন দিয়ে একটি একচালা ছাপড়া ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য কয়েকটি বেঞ্চ থাকলেও শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাশেই বাজারের একটি জুতার দোকানে টেবিল নিয়ে বসে প্রধান শিক্ষক দাপ্তরিক কাজ করছেন। কথা হয় তার সঙ্গে।

প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ‘অন্যের বাড়িতে একচালা টিনের ছাপড়া তুলে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এক রুমে সবগুলো শ্রেণির ক্লাস কিভাবে নেওয়া যায় বলেন। এক শ্রেণির ক্লাস নিলে বাকি সব শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। রোদ-বৃষ্টি সব ওদের মাথার উপর দিয়ে যায়। আর আমি পাশের জুতার দোকানে বসে অফিসিয়াল কাজ করি। মাঝে মধ্যে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। কিন্তু কি করবো বলেন, শিক্ষা অফিসকে অবগত করেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।’

এলাকাবাসী জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সরকার থেকে কোথাও বিদ্যালয়ের জন্য জমি বরাদ্দ না দেওয়ায় স্থানীয় একজন পল্লী চিকিৎসকের বাড়ির উঠানে একচালা টিনের ঘর তৈরি করে ১২০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ক্লাস কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

নিজ বাড়ির উঠানে বিদ্যালয়ের ঘর করতে দেওয়া পল্লী চিকিৎসক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার পর আমার বাড়ির উঠানে একটু জায়গা ছিলো সেখানেই ঘর তোলা হয়েছে। আমারই পর্যাপ্ত জায়গা নাই তার উপর আবার বিদ্যালয় তোলা হয়েছে। অনেক সমস্যা হয় কিন্তু কি আর করার, এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার কথা চিন্তা করে এতোটুকু সেক্রিফাইজ তো করতেই হবে।’

বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ না থাকায় দাপ্তরিক কাজকর্ম ও নথিপত্র পাশেই বাজারের একটি জুতার দোকানে রাখা হচ্ছে। জুতা ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ না থাকায় তাদের কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। তাই আমার জুতার দোকানের এক পাশে জায়গা করে দিয়েছি সেখানে একটা আলমারি রেখে দোকানেই বসে তারা দাপ্তরিক কাজ-কর্ম করে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার বলেন, এক রুমে আমরা সবাই ক্লাস করি। এক শ্রেণির ক্লাস হলে অন্যান্য শ্রেণির সবাইকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতে হয়। গরমে ছোট্ট রুমে ক্লাস করা যায়না। আবার বৃষ্টি আসলে বাইরে যারা থাকে সবাই ভিজে যায়। আপনারা আমাদের স্কুলটা ঠিক করে দেন যাতে আমরা ভালোভাবে ক্লাস করতে পারি।

অভিভাবক রেবাদুল ইসলাম বলেন, ‘এমনি চরের স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ কম তার উপর স্কুলের যে অবস্থা। তারপরও শিক্ষকরা চেষ্টা করতেছে যাতে ভালোভাবে পড়ালেখা হয়। অন্য স্কুলের বাচ্চাদের পড়ালেখার পরিবেশ ভালো তাই তারা বৃত্তির সুযোগ পাচ্ছে। সেইদিক থেকে আমাদের বাচ্চারা পিছিয়ে যাচ্ছে।’

চর রাজিবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙনের পর স্কুল তোলার জায়গা না থাকায় আর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এখন ওই এলাকার কেউ যদি জমি দান করেন তাহলে দ্রুত নতুন স্কুল নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে এলাহী আমার দেশকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর এখনো নতুন জায়গা পাওয়া যায়নি। আমি স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথেও কথা বলেছি কিন্তু কেউ জমি দিতে রাজী হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ করে তারপর বিদ্যালয় করতে হবে।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ইন্তেকাল

১২ দফা দাবিতে হাবিপ্রবি ছাত্রী সংস্থার স্মারকলিপি

আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে উত্তরা ইপিজেড

সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লো বিএসএফ, বিজিবির প্রতিবাদ

রেলে তুলকালাম: এক সাহেবের সুবিধায় হাজার যাত্রীর ভোগান্তি!

নীলফামারীতেই হচ্ছে ১ হাজার শয্যার চীনা হাসপাতাল

উত্তরা ইপিজেডের চার ফ্যাক্টরি আবারো চালু

কানাডায় পাঠানোর প্রলোভনে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ, প্রতারক গ্রেপ্তার

সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে জামায়াত প্রার্থীর শুভেচ্ছা

বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকের হাহাকার