আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ–৩ (জগন্নাথপুর–শান্তিগঞ্জ) আসনে রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মোড় নিচ্ছে। জামায়াতসহ আট দলীয় নির্বাচনি সমঝোতা জোট ও এনসিপির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মধ্যে সমঝোতা হলে এ আসনে প্রার্থীদের অবস্থান ও লড়াইয়ের ধরন ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে।
বর্তমানে এ আসনে এবি পার্টির প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরী এবং জামায়াত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খানের মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।
নির্বাচনি অভিজ্ঞতার দিক থেকে শাহীনুর পাশা এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে। অপরদিকে জামায়াত প্রার্থী ইয়াসিন খান তুলনামূলক নতুন মুখ হলেও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
এই প্রেক্ষাপটে অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তি—এই তিনটি দিক থেকেই এবি পার্টির প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলমকে শক্ত অবস্থানে দেখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে তিনি শাহীনুর পাশার সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট অর্জন করেন। জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত তার পরিচিতি রয়েছে।
করোনাকাল, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় তালহা আলমের একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০-২১ সালের করোনাকাল, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে দুই কোটিরও বেশি টাকা অনুদান বিতরণ করেন। পাশাপাশি যুব উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র সহায়তার মাধ্যমে বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন, যার ফলে দল-মত নির্বিশেষে তরুণদের একটি শক্ত বলয় গড়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথপুর উপজেলার এক জামায়াত নেতা বলেন,
এই আসনে যদি যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কাউকে সামনে আনা যায়, তাহলে জোটের জন্য তা লাভজনক হবে। বিতর্কিত কাউকে দিলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তালহা আলমের সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততার সঙ্গে যদি আট দলীয় জোটের সমর্থন যুক্ত হয়, তবে এ আসনে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
এদিকে, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি তালহা আলমকে দলটির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভুইয়ার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মনোনয়ন পাওয়ার পর সৈয়দ তালহা আলম বলেন, করোনা ও দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। যুগপৎ আন্দোলনে সব সময় মাঠে ছিলাম। এখন জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে তাদের পরীক্ষিত সঙ্গী।
তিনি আরো বলেন, ভোটের মাঠ যাচাই করা ও বিগত দিনের আমার কর্মকাণ্ডে এ আসনের ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। আমি আশাবাদী ৮ দলীয় জোট এই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিবেচনা করবেন। জোটে বিতর্কিত ডামি নির্বাচনে অংশ নেওয়া কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে ভরাডুবি হবে। ডামি নির্বাচনে প্রার্থীর অবস্থা বর্তমান মাঠের অবস্থা খুবই নাজুক। এবি পার্টিকে এ আসন উপহার দিলে বিজয় নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ।
জোটগত কারণে এবি পার্টিকে এ আসন ছাড় না দিতে পারলে এ আসনটি ৮ দলীয় জোটের কাছে উম্মুক্ত রাখার দাবি জানাই।
অন্যদিকে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খান বলেন, সুনামগঞ্জ–৩ একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন। এখানকার মানুষ সব সময় যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মূল্যায়ন করেছে। আমরা মাঠে ঘুরে দেখেছি, মানুষ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রতি আগ্রহী।
তিনি আরো বলেন, এই আসনে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি—তা জরিপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত। বিতর্কিত বা জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের পক্ষে থাকা কাউকে মনোনয়ন দিলে জোটের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। তাই জোটের স্বার্থে এই আসন উন্মুক্ত রাখা হলে সবাই উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।
সৈয়দ তালহা আলম বলেন, সুনামগঞ্জ- ৩ আসনে আমাদের অবস্থান সবচেয়ে শক্ত। আমাদের রয়েছে নির্বাচনি অভিজ্ঞতা এবং জনপ্রিয়তা।