সরকারি কেনাকাটায় অতি ক্ষুদ্র, নারী ও নতুন উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ১০ শতাংশ বাড়ানো গেলে দেশে প্রায় ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার রাজধানীর সোবহানবাগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) সম্মেলন কক্ষে এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ মত উঠে আসে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মঈন উদ্দীন আহম্মেদ।
সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউএনডিপির রিজিওনাল হেড মমতা কোহলি এবং এডিবির কান্ট্রি হেড নাশিবা সেলিম। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে সরকারি ক্রয়ে নারী, নতুন ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ মাত্র ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের। এ ভিত্তিতে ১০ শতাংশ অংশগ্রহণ বাড়ালে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জন্য।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মুসফিকুর রহমান বলেন, নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও নতুন উদ্যোক্তাদের সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণ বাড়লে সমতাভিত্তিক অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, পারিবারিক আয় বাড়ে এবং বাজারে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিস্তৃত হয়।
তিনি প্রস্তাব করেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা গেলে সরকারি-বেসরকারি ক্রেতা সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য সোর্স হিসেবে কাজ করবে। বিপিপিএ’র আর্থিক সহায়তায় প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।
সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বে অনেক দেশই সরকারি ক্রয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কোটা নির্ধারণ করেছে। যেমন-ইন্দোনেশিয়ায় ৪০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২৩ শতাংশ, ভারতে ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলে ২০ শতাংশ, কেনিয়ায় ৩০ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৩৩ শতাংশ কোটা সুবিধা রয়েছে। এসব দেশ প্রমাণ করেছে, এসএমই ও এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণ বাড়ালে অর্থনীতি আরও গতিশীল হয়।
বাংলাদেশেও সরকারি ক্রয়ের আয়তন বিপুল— জাতীয় বাজেটের ৪৫ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় সরকারি ক্রয়ের মাধ্যমে। এই বৃহৎ বাজারে এসএমই, নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশাধিকার বাড়ানো গেলে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে মত দেন আলোচকরা।
সেমিনারে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯ শতাংশ বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই)। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ এ খাতে, যেখানে কর্মরত রয়েছেন ৩ কোটিরও বেশি মানুষ।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মসূচিগুলোর সুবিধাভোগী হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ উদ্যোক্তা, যাদের ৬০ শতাংশই নারী। সংস্থাটি জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বক্তারা বলেন, দেশের জনসংখ্যা বেশি এবং সম্পদ সীমিত হলেও এসএমই খাতের উন্নয়নই টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির বৃহত্তম হাতিয়ার। সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে এ খাত অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি দিতে সক্ষম হবে।