একনেক সভা
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ১৩ হাজার ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের খরচ ‘বায়বীয়’ মনে হওয়ার কারণে তা পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
অন্যদিকে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ৬৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২১ তলাবিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পও অপরিকল্পিত উল্লেখ করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার একনেক সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পটির বিভিন্ন অংশে বায়বীয় ব্যয় দেখা গেছে। এত অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক ব্যয় দেখে প্রস্তাবটি একনেক সভার সিদ্ধান্তক্রমে পুনর্মূল্যায়নের জন্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় যাচাই করে সংশোধিত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট বিভাগ নতুন করে দাখিল করলে তা পুনরায় বিবেচনা করা হবে।
প্রকল্পটি সারা দেশে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবার মানোন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রাপ্যতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন সার্ভিসেস ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড সিস্টেম স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট’ নামে প্রস্তাব করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৯ মে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছিল। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ছয় হাজার ৮২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অংশ ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ১৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। একনেক সভায় এটি পুনর্মূল্যায়ন করে সংশোধিত প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করায় প্রকল্প বর্তমানে স্থগিত থাকছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সচিবালয় অভ্যন্তরে ২১ তলা ভবন নির্মাণ অপরিকল্পিত উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এমনিতেই এখানে এখন অনেক ভবন রয়েছে। তাছাড়া জায়গা সংকটও আছে। এমন একটি স্থানে এত বড় ভবন করা যায় কি না—তা যাচাই করা প্রয়োজন। আমি মনে করি, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার দরকার আছে। ভবন নির্মাণ-সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ ও অভিমত নিয়ে প্রকল্পটি পুনরায় যাচাই করতে হবে। তিনি বলেন, যেভাবে এখানে ভবন গড়ে উঠেছে, তাতে নিরাপত্তার বিয়য়টি লক্ষ রাখতে হবে। এখানে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া ভবিষ্যতে এখানে সচিবালয় থাকে কি না, সেটাও বোঝার দরকার আছে। আমি তো মনে করি এখানে সচিবালয় রাখা যায় না।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছিল। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, মুশকিল হলো এখন কেউ প্রকল্প পরিচালক হতে চান না। এছাড়া ঠিকাদাররাও এখন বেশি উৎসাহী হচ্ছেন না। ঠিকাদারদের অনাগ্রহের মূলে রয়েছে সরকারি ক্রয় নীতিমালার পরিবর্তন। এতদিন ধরে বড় বড় ঠিকাদার একচেটিয়াভাবে ঠিকাদারি করে আসছিলেন। আগে এমনভাবে মূল্যায়ন করা হত, যারা আগে কাজ করেছেন, তারাই কাজ পেতেন। এমন তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো কব্জা করে রেখেছিল।
তিনি জানান, সংস্কারের ফলে এখন একচেটিয়া ও বেনামে কেউ কাজ নিতে পারবে না। প্রভাবশালী একজন নিয়ে কাজ না করে অন্যকে দেওয়ার আর সুযোগ নেই। যাদের কাজ দেওয়া হবে, তাদের পূর্ণ তথ্য থাকতে হবে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কর পরিশোধ—সবকিছু উন্মুক্ত থাকতে হবে। তাদের অন্য ব্যবসা থাকলে সেগুলোরও তথ্য দিতে হবে। তাই এখন সহজে কেউ এগিয়ে আসবে না। কত শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে এখন পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে সংখ্যা নেই। সংখ্যা বের করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প রয়েছে, তাই সবার তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যতটুকু জানি, মন্ত্রণালয়গুলো বর্তমানে অস্থায়ীভাবে কাউকে রেখে কাজ করছে।
গত সোমবারের সভায় একনেক ১৫ হাজার ৩৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৫১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ পাঁচ হাজার ৬০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।