হোম > বাণিজ্য

বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড, দাম বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি

সরদার আনিছ

বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড। হু হু করে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। রাজধানীর বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় শুক্রবার ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর জন্য সরবরাহ ঘাটতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, যেসব জেলা থেকে পেঁয়াজ আসে সেখানে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামের এই ঊর্ধ্বগতি।

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগেই ঘোষণা দিয়েছে পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা অতিক্রম করলে আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। এজন্য সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। বাস্তবে কোনো ঘাটতি নেই। তবে যেহারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, কৃষকের হাতেও এক লাখ টনের বেশি পুরোনো পেঁয়াজ, তা ছেড়ে দিলে দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৪০–১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ৩-৪ দিন আগেও ছিল ৯৫-১১০ টাকা। এদিন কেরানিগঞ্জ বৌবাজারে বাজার করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৬০ টাকা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম ভুল শুনেছি। পরে বুঝলাম ঠিকই বলেছে। কয়েকটি দোকান ঘুরেও দেখলাম সব জায়গায় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে যাওয়া অসম্ভব। বাজারে নিশ্চয়ই কিছু হচ্ছে। সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আমদানিকারকরা বলছেন, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এগুয়েমির কারণে সাধারণ ভোক্তাদের ১৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। কৃষকের স্বার্থের কথা বলে তারা আমদানির অনুমতি দিচ্ছেন না। অথচ আমদানির অনুমতি দেয়া হলে ৪০-৫০ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারতো।

শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, কেরানীগঞ্জের বৌবাজার ও কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে কয়েকদিন আগেও যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় পাওয়া যেত, শুক্রবার তা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এমনকি পাইকারি বাজারেই ভালো মানের পেঁয়াজের পাল্লা (পাঁচ কেজি) এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার রাতে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুল কাদের আমার দেশকে বলেন, আগের দিনের তুলনায় পেঁয়াজের দাম আরো বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত কয়েক দফা দাম বেড়ে ৮০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হয়েছে। এরপরও আড়তে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। দাম আরো বেড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সবমিলিয়েই পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে অরাজকতা চলছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

মতি ব্যাপারী নামে অপর ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ নেই তাই দাম চড়া। এ অবস্থা বজায় থাকলে চলতি সপ্তাহেই ২০০ টাকায় পৌঁছাতে পারে পেঁয়াজের দাম। এ বিষয়ে সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

শুক্রবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ছে। তাদের কাছেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ নেই বললেই চলে। আমাদের কাছে যেখানে কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ থাকতো, আজ মাত্র কয়েক মন পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। কেউ কেউ অগ্রিম টাকা দিয়েও পেঁয়াজ পাচ্ছেন না।

শুক্রবার রাতে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক আমার দেশকে বলেন, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কী যে করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। যতদূর জানি তাতে এই মন্ত্রণালয়ের আমলারাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। কৃষকের স্বার্থের কথা বলে তারা আমদানির অনুমতি দিচ্ছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। সিন্ডিকেটচক্রের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত আছে। এ কারণে সাধারণ ভোক্তাদের ১৫০-১৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে। আমদানির অনুমতি দিলে একদিনের মধ্যে দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে আসবে। সীমিত আকারে হলেও এখন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত।

তবে আমদানিকারকদের এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এখনো মার্কেট প্রসেস এবং কৃষকের হাতে এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে। নতুন পেঁয়াজও বাজারে আসছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে।

তিনি বলেন, দাম বাড়ার আশঙ্কায় অনেক ভোক্তা ৫-১০ কেজি করে পেঁয়াজ কিনছেন। এতে সিন্ডিকেট চক্রের কৃত্রিম সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দাম বাড়ার আশঙ্কায় বেশি করে পেঁয়াজ না কিনে যা প্রয়োজন তা কিনুন। কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে যাবে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা অতিক্রম করলে আমদানির সিদ্ধান্ত আগে থেকেই হয়ে আছে। ফলে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

শুক্রবার রাতে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক আমার দেশকে বলেন, এরই মধ্যে আমদানির অনুমতি না পেয়ে সোনা মসজিদ স্থল বন্দর এলাকার ৭জন এবং হিলির একজন ব্যবসায়ী হাইকোর্টে রিট করেছেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি হওয়ার কথা।

উৎপাদিত চিনি মজুত থাকলে আমদানি করা হবে না: শিল্প উপদেষ্টা

টানা চার মাস রপ্তানি আয়ে পতন

পেঁয়াজের কেজিতে বাড়ল ৩০ টাকা, উদ্যোগ নেই আমদানির

স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি পরিণত বয়সের ব্রয়লার মুরগির

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভার ডাউন: লেনদেনে ভোগান্তি

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের এমডি খুঁজছে সরকার

টানা চার মাস ধরে রপ্তানি খাতে পতন

জাল ব্যান্ডরোলে ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি: এনবিআর

রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বেসরকারি খাতের বিকাশকে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বললেন জ্বালানি উপদেষ্টা