উত্তরা মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
দীর্ঘ ৯৭ দিনের দুঃসহ যন্ত্রণা ও জীবন-মৃত্যুর কঠিন সংগ্রাম শেষে অলৌকিকভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নাভিদ নাওয়াজ দীপ্ত। উত্তরার দিয়াবাড়িতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও চরম অনিশ্চয়তা থেকে আজ, সোমবার, সে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট (এনআইবিপিএস) থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। তার এই ফিরে আসা চিকিৎসা বিজ্ঞান ও অদম্য সাহসের এক অবিশ্বাস্য সংগ্রাম।
এনআইবিপিএস-এর পরিচালক ডা. এম নাশিরউদ্দিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষ-২ এ প্রেস ব্রিফিংয়ে দীপ্তর সুস্থতার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, দীপ্তর জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ৯৭ দিনের দীর্ঘ চিকিৎসায় তার শরীরে মোট ৩৬ বার অস্ত্রোপচার এবং ৮ বার স্ক্রিন গ্রাফটিং করা হয়েছে। চিকিৎসার এই দীর্ঘ পথচলায় তাকে ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে, ২২ দিন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) এবং ৩৫ দিন হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখতে হয়েছিল। বাকি সময় সে চিকিৎসাধীন ছিল ৪০ নম্বর কেবিনে।
পরিচালক ডা. নাশিরউদ্দিন বলেন, দীপ্তর এই ফিরে আসা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এক বিরাট সাফল্য। তার চিকিৎসা ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আমরা দেশবাসীর দোয়ার কাছে কৃতজ্ঞ।' তিনি আরো উল্লেখ করেন, দীপ্তর বাবা মিজানুর রহমান বিপ্লব জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন সে নিজের কথা না ভেবে বন্ধুদের সুরক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যার কারণেই তার শরীরের এত বড় অংশ পুড়ে যায়। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও সে তার বাবাকে বলতো, 'বাবা, আমি বন্ধুদের সাহায্য করেছি, আমি নিশ্চয়ই বেঁচে যাবো।' তার এই আত্মত্যাগ ও মনের জোরই তাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, দীপ্ত ছাড়াও একই ঘটনায় আহত আরো পাঁচজন রোগী বর্তমানে সুস্থতার পথে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে তাদেরও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনআইবিপিএস-এর যুগ্ম পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।