ভাড়াটিয়া-বাড়িওয়ালা উভয় পক্ষের অধিকার, দায়িত্ব ও আইনের সীমাবদ্ধতা এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য ভূমিকা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার গুলশান ডিএনসিসি নগরভবনে অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে ভাড়াটিয়া-বাড়িওয়ালার অধিকারের বিষয়ে সম্ভাব্য ভূমিকা তুলে ধরেন সংস্থাটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ সচিব) জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে মূল আইন হলো ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ এই আইনের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া উভয়ের অধিকার ও কর্তব্যগুলি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. নিয়োগ ও কার্যাবলি:
ধারা ২(ক): "নিয়ন্ত্রক’ এর সংজ্ঞা।
ধারা ৩: নিয়োন্ত্রক নিয়োগ; সরকার এই আইনের ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক ও উপ-নিয়োন্ত্রক নিয়োগ করতে পারে।
ধারা ১৫: নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব : নিয়ন্ত্রক বাড়ি-মালিক ও ভাড়াটিয়া আবেদনের ভিত্তিতে কোন বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেন।
২. ভাড়ার নির্ধারণ ও চুক্তি :
ধারা ৭ : ভাড়ার বৃদ্ধির উপর বাধানিষেধ : নিয়ন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া বা চুক্তিতে নির্ধারিত সময়ের আগে ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না।
ধারা ১৫ : মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ : নিয়ন্ত্রক বাড়ির বাজার মূল্যের বার্ষিক ১৫% এর সমান মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবেন।
ধারা ১০ : প্রিমিয়াম ইত্যাদির দাবী নিষিদ্ধ : বাড়ি-মালিক বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়া বাদে কোনো অতিরিক্ত অর্থ, প্রিমিয়াম বা সালামি দাবি করতে পারবেন না।
ধারা ১৩: ভাড়া আদায়ের রশিদ প্রদান বাড়ি-মালিক ভাড়া আদায়ের সাথে সাথেই ভাড়াটিয়াকে একটি স্বাক্ষরিত রশিদ প্রদান করতে বাধ্য।
ধারা ২৪: মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দণ্ড যদি কেউ মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ (প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়ার দ্বিগুণ পর্যন্ত জরিমানা)।
৩. উচ্ছেদ ও অধিকার :
ধারা ১৮. উচ্ছেদের আদেশ চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করা হলে বা নিয়ন্ত্রকের কাছে ভাড়া জমা দেওয়া হলে সাধারণত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদের আদেশ দেওয়া হবে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু কারণে উচ্ছেদ করা যেতে পারে। (যেমন-মালিকের নিজ ব্যবহারের জন্য, অসৎ উদ্দেশ্য বা ক্ষতিসাধনের জন্য)।
ধারা ১৯: ভাড়াটিয়া কর্তৃক ভাড়া জমা কিছু পরিস্থিতিতে (যেমন বাড়ি-মালিক ভাড়া নিতে অস্বীকার করলে বা তার ঠিকানা জানা না থাকলে) ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের নিকট ভাড়া জমা দিতে পারেন।
ধারা ২১: ভাড়াটিয়া কর্তৃক মেরামত ইত্যাদি : যদি বাড়ি-মালিক প্রয়োজনীয় মেরামত বা অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহ ব্যবস্থা (পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) রক্ষণাবেক্ষণ না করেন, তবে ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের অনুমাতি নিয়ে তা নিজে করতে পারেন এবং তার খরচ ভাড়ার সাথে সমন্বয় করতে পারেন।
ধারা ৩২: বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার অধিকারী : অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ভাড়াটিয়া তার ভাড়া নেওয়া বাড়িতে বাড়ি-মালিকদের বিনা অনুমতিতে লাইসেন্স থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিতে পারবেন।
ধারা ২৬: সুখাধিকার ইত্যাদিতে বাধা প্রদানের দন্ড: বাড়ি-মালিক ভাড়াটিয়ার সুখ-সুবিধায় (পানির সরবরাহ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) বাধা সৃষ্টি করলে দণ্ডনীয় হবে।
ভাড়াটিয়ার ন্যায্যতা ও অধিকার–
১. লিখিত ভাড়া চুক্তির অধিকার : আইন ভাড়াটিয়াকে লিখিত চুক্তি করার সুযোগ দেয়, যাতে ভাড়া, মেয়াদ, জামানত, মেরামত দায়িত্বসহ বিষয় স্পষ্ট থাকে। যদিও আইন চুক্তি ফরম বিস্তারিত নির্ধারণ করে না, তবে আইনগত নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে এটি অনুপস্থিত থাকলে অমীমাংসিত বিবাদ তৈরি হতে পারে।
২. অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি থেকে সুরক্ষা : আইন ধারা ১৬ অনুযায়ী, বাড়িওয়ালা দুই বছরের মধ্যে বড় ধরনের নির্মাণ পরিবর্তন না করেই নিয়মিতভাবে ভাড়া বাড়াতে পারে না। এই ধারা ভাড়াটিয়াকে বাজার ভাড়া বৃদ্ধির অতিরিক্ত বোঝা থেকে রক্ষা করে।
৩. জোরপূর্বক উচ্ছেদ নিষিদ্ধতা : আইন ভাড়াটিয়াকে অবৈধ উচ্ছেদ থেকে সুরক্ষা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ভাড়াটিয়া আইনগত নোটিশ ছাড়াই বা আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। (ইভিকশন প্রক্রিয়ায় আইন অনুযায়ী নোটিশ প্রদান অপরিহার্য।)
এছাড়া, eviction-সংক্রান্ত বিধান বলে যে, ধারা ১৮(১) অনুযায়ী বাড়িওয়ালা যদি ভাড়াটিয়ার আইনবিরোধী ব্যবহার বা চুক্তি লঙ্ঘন করে, তবেই বৈধ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
৪. মৌলিক সুবিধা ও মেরামতের অধিকার : আইন ধারা ২১ অনুযায়ী, পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাজনিত খরচসমূহ ঠিক রাখার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার ওপর রয়েছে। ভাড়াটিয়া আইনগতভাবে দাবি করতে পারে যে এই মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখা হোক।
৫. নিরাপদ জামানত নীতির অধিকার : আইন ভাড়াটিয়াকে অতিরিক্ত বা অবৈধ জামানত বোঝা দেওয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ধারা ১০ অনুযায়ী, বাড়িওয়ালা সর্বোচ্চ এক মাস ভাড়ার অগ্রিম বা জামানত গ্রহণ করতে পারে। সেই সঙ্গে, যদি জামানত ফেরত প্রদানের শর্ত চুক্তিতে নির্ধারিত না থাকে, ভাড়াটিয়াকে আইনি পথ খোলা থাকে।
বাড়িওয়ালার ন্যায্যতা ও অধিকার:
১. ভাড়া গ্রহণের আইনগত অধিকার : আইন ভাড়াওয়ালাকে নির্ধারিত সময়ে ভাড়া নেওয়ার অধিকার প্রদান করে। যদি ভাড়া বকেয়া থাকে, তাঁরা আইনানুসারে নোটিশ দিতে পারে এবং ধারাবাহিকতা না পেলে ভাড়া দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে আইনি বিন্যাস গ্রহণ করতে পারে।
২. সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ এবং ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা : বাড়িওয়ালা চুক্তিতে নির্ধারিত ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রাখতে পারে এবং যদি ভাড়াটিয়া ভবন বা সম্পত্তি অবৈধভাবে ব্যবহার করে অথবা ক্ষতি সৃষ্টি করে, ধারা ১৮(১) অনুযায়ী তিনি আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন।
৩. চুক্তি মেয়াদ শেষে বাড়ি অধিগ্রহণ : চুক্তি শেষে বাড়িওয়ালা আইনগত নোটিশ জানিয়ে বাড়ি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, তবে উচ্ছেদের ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে (যেমন, ধারা ১৮)।
৪. অতিরিক্ত ব্যবহার বা বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : যদি ভাড়াটিয়া চুক্তি লঙ্ঘন করে (উদাহরণস্বরূপ, সাবলেটিং, বাণিজ্যিক ব্যবহার), বাড়িওয়ালা ধারা ১৮(১) অনুযায়ী আইনগত নোটিশ ও অবলম্বনযোগ্য ব্যবস্থা নিতে পারে।
আইনগত বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা:
আইন প্রয়োগ-চ্যালেঞ্জ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯' কার্যকর হলেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট:
১. ভাড়া নির্ধারণ মডেল এবং "মানসম্মত-ভাড়া" : ধারা ১৫ অনুযায়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রক" এবং আবেদন ভিত্তিতে মানসম্মত-ভাড়া নির্ধারণ করতে পারে; তবে এটি এত শক্তিশালী প্রযোজ্য নয়। আদালতেও এটা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
২. লিখিত চুক্তির অভাব: ঢাকায় অনেক ভাড়া মৌখিক চুক্তির উপর নির্ভর করে, যা ১৯৯১ আইন অনুসারে আইনগত নিরাপত্তা কমিয়ে দেয় এবং বিরোধ উত্থাপনের ক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহ কঠিন করে তোলে।
৩. ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা : যদিও আইন 'নিয়ন্ত্রক" কর্তৃপক্ষের সুযোগ দেয়, বাস্তবে এই নিয়ন্ত্রক পর্যায় যথেষ্ট সক্রিয় বা স্বাধীন নয়।
৪. দীর্ঘ ও ধীর বিরোধ নিষ্পত্তি : বিরোধ হলে আদালত-নির্ভরতা বেশি; বিকল্প বিচার প্রক্রিয়া বা দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন আইন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে না, ফলে আইন বাস্তবায়নের গতি ধীর।
৫. জামানত এবং ভাড়া বৃদ্ধিতে স্বচ্ছতার অভাব : অনেক বাড়িওয়ালা তারাই বেশ বড় অগ্রিম জামানত নেন এবং প্রায়শই বাজারদর লক্ষ্যে একাধিকবার ভাড়া বাড়ান: এই প্রক্রিয়াগুলি আইনগত সীমা ও নিয়মের বাইরে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আইনি সীমা ও নিয়ম পুরোপুরি প্রয়োগ হচ্ছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত ভূমিকা:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-এর কাঠামোর ভিতরে লিখিত বা নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করে ভাড়াবাজারকে আরও স্বচ্ছ, ন্যায্য ও সুশৃঙ্খল করতে পারে:
১. ভাড়া রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম : ডিএনসিসি একটি অনলাইন রেজিস্ট্রি গঠন করতে পারে, যেখানে প্রতিটি ভাড়া বাসা নিবন্ধিত থাকবে এবং চুক্তি (ভাড়া, জামানত, মেয়াদ) সহ দৈনিক তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। এতে আইনগত প্রমাণ সহজতর হবে এবং ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার মধ্যে জটিলতা কমবে।
২. স্ট্যান্ডার্ড ভাড়া চুক্তি ফরম : ডিএনসিসি একটি আদর্শ ভাড়া চুক্তি ফরম প্রণয়ন করতে পারে যার মধ্যে ধারা ১০, ১৬, ১৮, ২১ ইত্যাদি ধারা উল্লেখ থাকবে। এতে চুক্তিপত্র আরও আইনসঙ্গত ও স্বচ্ছ হবে।
৩. ভাড়া সংক্রান্ত অভিযোগ সেল এবং মধ্যস্থতা প্ল্যাটফর্ম : ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার জন্য দ্রুত, সহজ এবং বিনামূল্যে হটলাইন, অনলাইন ফর্ম ও মধ্যস্থতার ব্যবস্থা গঠন করা যেতে পারে, যাতে বিরোধ আইনগত পথে না গড়ায় এবং তা দ্রুত নিষ্পত্তি পায়।
৪. ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশিকা প্রকাশ : ডিএনসিসি প্রতি বছর একটি ভাড়া নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে যা ধারা ১৬-এ লিমিটেশন ও বাস্তব বাজার অবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে। এটি বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াকে বোঝাপড়া ও স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
৫. আইনগত সচেতনতা এবং শিক্ষা : ডিএনসিসি স্থানীয় সভা, কর্মশালা ও প্রকাশনা পরিচালনা করতে পারে, আইন ১৯৯১ Act এবং প্রাসঙ্গিক ধারাসমূহ (উদাহরণস্বরূপ, ধারা ১০, ১৫, ১৬, ১৮, ২১) সম্পর্কে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের সচেতন করবে।
৬. বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় বোর্ড : ডিএনসিসি এআরডি বোর্ড গঠন করে, স্থানীয় স্তরে বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়। এতে আদালতের বোঝা কমবে এবং আইনগত প্রক্রিয়া সহজতর হবে।
উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সুপারিশগুলো-
১. বাধ্যতামূলক লিখিত ভাড়া চুক্তি প্রণয়ন : সব ভাড়াবাড়িতে বাধ্যতামূলকভাবে লিখিত চুক্তি ব্যবহার করতে হবে। চুক্তিতে ভাড়া, জামানত, মেয়াদ, নোটিশ-সময়, মেরামত দায়, ইউটিলিটি বিল-সবকিছু পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকবে। এতে উভয় পক্ষ ভুল বোঝাবুঝি ও অবিচার থেকে নিরাপদ থাকবে।
২. ভাড়া বৃদ্ধির স্বচ্ছ নীতি : নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভাড়া বৃদ্ধি নিষিদ্ধ (যেমন-১ বছর বা ২ বছর)।
৩. ভাড়া বাড়াতে হলে: আগাম অন্তত ৩০ দিনের লিখিত নোটিশ দিতে হবে। ভাড়া বৃদ্ধির হার স্বচ্ছ ও যৌক্তিক হতে হবে। এতে ভাড়াটিয়া অযৌক্তিক চাপের সম্মুখীন হবে না এবং বাড়িওয়ালা বাজার-মূল্য অনুযায়ী বাড়তি আয় নিশ্চিত করতে পারবেন।
৪. ন্যায্য ও নিয়ন্ত্রিত জামানত নীতি : সর্বোচ্চ ১-২ মাসের জামানত নীতিগতভাবে নির্ধারণ করা। বাড়ি ছাড়ার পরে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে জামানত ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। যদি মেরামতের প্রয়োজন হয়, তা প্রমাণসহ দেখাতে হবে। এতে ভাড়াটিয়া আর্থিক অস্বচ্ছতা থেকে বাঁচবে এবং বাড়িওয়ালা প্রকৃত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের স্পষ্ট দায়িত্ব চিত্র:
বাড়িওয়ালা: পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বিল্ডিং-সেফটি ও স্ট্রাকচারাল রক্ষণাবেক্ষণ।
ভাড়াটিয়া: ব্যক্তিগত ব্যবহারজনিত ক্ষতি বা আসবাব/অভ্যন্তরের ক্ষতির দায়িত্ব নেবে।
উভয় পক্ষ চুক্তিতে যুক্ত রাখবে।
উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ন্যায়সংগত প্রয়োগ:
ভাড়াটিয়াকে জোরপূর্বক বা হঠাৎ উচ্ছেদ নিষিদ্ধ।
উচ্ছেদ করতে হলেঃ
> আইনসম্মত কারণ থাকতে হবে।
> লিখিত নোটিশ দিতে হবে।
> প্রয়োজনে মধ্যস্থতা বা স্থানীয় সমাধান বোর্ডের সাহায্য নিতে হবে। এতে বাড়িওয়ালা আইনগতভাবে শক্তিশালী থাকবেন এবং ভাড়াটিয়া নিরাপদ থাকবে।
নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ভাড়া নিবন্ধন সিস্টেম:
প্রতিটি ভাড়া-বাড়ির অনলাইন/অফলাইন রেজিস্ট্রেশন।
ভাড়া, চুক্তি, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মৌলিক তথ্য সিটি করপোরেশনে সংরক্ষিত থাকবে।
বিরোধ হলে এটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এটি উভয় পক্ষকে সুরক্ষা দেবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা আনবে।
ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির দ্রুত ব্যবস্থা (স্থানীয় বোর্ড):
ডিএনসিসি বা স্থানীয় প্রশাসনের আওতায়:
ভাড়া বিরোধ নিষ্পত্তি স্থানীয় বোর্ড স্থাপন, যেখানে : বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবে। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় দ্রুত সমাধান দেওয়া হবে। আদালতে মামলা করার প্রয়োজন কমবে। এটি বাস্তবায়ন করলে ৭০-৮০% ভাড়া-বিরোধ স্থানীয় পর্যায়েই সমাধান সম্ভব।
ভাড়াটিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়িওয়ালার তথ্য সুরক্ষা: ভাড়াটিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে হবে। বাড়িওয়ালাও ভাড়াটিয়ার পরিচয় যাচাই করতে পারবে। এটি উভয় পক্ষের নিরাপত্তা ও আস্থা বৃদ্ধি করে।
ইউটিলিটি বিলের ন্যায্য ব্যবস্থাপনা : আলাদা মিটার না হলে বিল ভাগাভাগির স্পষ্ট পদ্ধতি থাকবে। বাড়িওয়ালা অতিরিক্ত চার্জ দাবি করতে পারবে না। ভাড়াটিয়া সময়মতো বিল পরিশোধে বাধ্য থাকবে।
জরুরি অবস্থায় (ফায়ার, গ্যাস লিক, রিপিয়ার) উভয় পক্ষের সহযোগিতা : উভয় পক্ষই ভবনের নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। ভাড়াটিয়া জরুরি পদ্ধতি মানবে; বাড়িওয়ালা তা কার্যকর রাখবে। সেফটি কম্পালাইন্স নিশ্চিত করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ ভূমিকা : ডিএনসিসি যে যে পদক্ষেপ নিতে পারে- ভাড়া নির্দেশিকা প্রকাশ, স্ট্যান্ডার্ড ভাড়া চুক্তি ফরম, অনলাইন ভাড়া রেজিস্ট্রি, প্রকাশ্য ভাড়া-বৃদ্ধি নীতি, বিরোধ নিষ্পত্তি সেল/স্থানীয় বোর্ড, ভাড়াটিয়া/বাড়িওয়ালা উভয়ের সচেতনতা কর্মসূচি।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার ভাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা ও ন্যায্যতা স্থাপনে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ একটি অপরিহার্য আইনগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আইনটি ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে যেমন ধারা ১৬ ভাড়া বৃদ্ধির সীমা, ধারা ১৮(১) উচ্ছেদ প্রক্রিয়া ও ধারা ২১ রক্ষণাবেক্ষণ দায়ভার। তবে আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট যেমন ভাড়া পরীক্ষণ-সংস্থা না থাকা, বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার ধীরগতি, এবং মৌখিক চুক্তির প্রচলন।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, স্ট্যান্ডার্ড চুক্তি ফরম, অভিযোগ সেল, ভাড়া নির্দেশিকা এবং মধ্যস্থতা বোর্ড গঠন করে। আইন ও নীতি একসঙ্গে প্রয়োগ হলে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার মধ্যে আস্থা বাড়বে এবং ঢাকা শহরকে একটি আরও বাসযোগ্য, ন্যায্য ও সুশৃঙ্খল নগর হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মাদ এজাজের সভাপতিত্বে বৈঠকে ঢাকা শহরের বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়া সহ অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।