জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা হচ্ছে।
বহুল প্রত্যাশিত হাসিনার গণহত্যার রায়ে অপেক্ষায় রয়েছে গোটা জাতি। রায় শোনার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর নজর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। গণহত্যার দায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই হবে প্রথম বিচারের রায়।
আজ দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে হাসিনার রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম মর্তূজা। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের কল রেকর্ড পড়েন বিচারক।
আজ রায় হতে যাওয়া মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়, ষড়যন্ত্র, উসকানি, গণহত্যা, পরিকল্পনাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এসব অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই-আগস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো গুলিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। আহত করা হয় প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে। অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন, চোখ হারিয়েছেন অনেকেই। তাদের বিরুদ্ধে আনা প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা ব্যাপক উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ন্যায্য দাবিতে ডাকা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ করে তাদের হতাহত করে।
দ্বিতীয় অভিযোগটি হলো হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’ দিয়েছেন । যেটি বাস্তবায়ন করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ।
হাসিনার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীহাসিনার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় তৃতীয় অভিযোগটি আনা হয়। চার নম্বর অভিযোগ হলো আসামিদের নির্দেশে পাঁচ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারী ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করা । এতে বলা হয়েছে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি।
৫ আগস্ট এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসার সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মাঝে একজন জীবন্তও ছিল। এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।
৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ
হাসিনাসহ এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।