মানবপাচারের লোভনীয় প্রলোভনে যুবকদের গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরি দেয়ার প্রতারণায় লিবিয়ায় পাঠিয়ে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া চক্রের সক্রিয় সদস্যকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণামূলকভাবে নানামাত্রিক লোভ দেখিয়ে যুবকদের বৈশ্বিক চাকরির আশায় বিদেশে পাঠানো এবং পরে মুক্তিপণের নামে অর্থ আদায় করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
গত মঙ্গলবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মিডিয়া জসীম উদ্দিন খান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রচলিত আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল। এর মতো অপকর্ম রোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্ত আরও গভীরভাবে চালানো হচ্ছে।'
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে নজির হোসেনকে আটক করে সিআইডি। তার বিরুদ্ধে একই সময় তদন্তাধীন দুইটি পৃথক মামলা আছে, যেগুলোতে স্থানীয় ও অভিভাষিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের নানা ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
চক্রের মূল টার্গেট ছিল “গ্রিসে উচ্চ বেতনযুক্ত চাকরি” পাওয়া যাবে বলে-বাংলাদেশে প্রলুব্ধ করা। প্রস্তাবিত চাকরির জন্য প্রতিটি প্রার্থী থেকে পাসপোর্টসহ লক্ষাধিক টাকা নেওয়া হতো। এরপর তারা ঢাকা থেকে বিমানে পাঠানো হতো, যেখানে ট্রানজিট হিসেবে দুবাই এবং মিশরের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছানো হতো।
কিন্তু সেখানে যুবকদের হাতে তুলে দেওয়া হতো নানা অপরাধগঠিত সুনামের চক্রের কাছে; তাদের কাছ থেকে ডলার ও ইউরো ছিনিয়ে নেওয়া হতো, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মুক্তিপণ দাবি করা হতো।
গ্রেপ্তার নজির হোসেন ও সহযোগীরা দেশে বসেও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থেকে মুক্তিপণ আদায় করছিলেন। মামলার তথ্য অনুযায়ী, দুই জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট প্রায় ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। লিবিয়ায় আটক থাকা অবস্থায় ভিকটিমদের সাহায্য করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা IOM, যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছে।
বিভিন্ন মামলার তদন্তে জানা যায়, এই চক্রের মাধ্যমে মোট ১৯ জন যুবককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে ৯ জন ভুক্তভোগী ইতোমধ্যেই দেশে ফিরে এসেছে। বাকি সদস্যদের অবস্থান, ইচ্ছেমতো মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা, এবং তাদের নির্যাতনের পরিস্থিতি যাচাই–পর্যালোচনা করে সিআইডি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, প্রেপ্তার নজির হোসেনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এবং বাংলাদেশ পেনাল কোড এরও বেশ কিছু ধারায় পৃথক মামলা আছে। তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিআইডি অপর সদস্যদের সন্ধান ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রেখেছে।