২৮ বছর পর নির্বাচন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) নতুন করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন। বিষয়টি ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হয়েছে আনন্দঘন পরিবেশ। দীর্ঘ ২৮ বছর পর উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায় ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করলে এ উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।
শাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। এরপর ২৮ বছর ধরে অচল রয়েছে শিক্ষার্থীদের এই গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাবিপ্রবির অভ্যন্তরীণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপে ও ক্যাম্পাসে আড্ডা আলোচনায় এখন শুধুই শাকসু নির্বাচন। অনেকেই প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্যানেল গঠনে তোড়জোড়ের পাশাপাশি অনেকে ভাবছেন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর কথা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা পাচ্ছেন তাদের গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। এ জন্য তাদের উচ্ছ্বাসের যেন কোনো সীমা নেই। শিক্ষার্থীরা চান শাকসু হোক গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র এবং অধিকার আদায়ের কার্যকর মঞ্চ। তবে শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত প্রকাশ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমি চাই শাকসু হোক শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষার জায়গা। এখানে সব মত ও দলের শিক্ষার্থীরা সমানভাবে কথা বলবেন, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেবেন। শুধু নির্বাচন নয়, সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান, একাডেমিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও কল্যাণে কাজ করাই হোক শাকসুর মূল উদ্দেশ্য।’
নিরপেক্ষ ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কফিল আহমেদ বলেন, ‘শাকসু হবে আমাদের অধিকার আদায়ের প্রাণকেন্দ্র ও ক্ষমতাকে জবাবদিহির আওতায় আনার মাধ্যম। আমরা চাই কার্যকর, নিরপেক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব শাকসু। এটি যেন শিক্ষা, আবাসন, লাইব্রেরি, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায়।’
শাকসু প্রতিনিধি কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা রিমি বলেন, ‘ভর্তির পর থেকেই শাকসু নিয়ে নানা লেখালেখি দেখতাম। এবার আমরা আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছি। আমরা চাই, যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হোক, যারা আবাসন, খাবার, পরিবহনসহ শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেন। শাকসু যেন সত্যিকারের শিক্ষার্থীমুখী পরিষদ হিসেবে গড়ে ওঠে।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুজ্জামান খান আতিফ বলেন, ‘শাকসু নির্বাচন হোক শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এ নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরি।’
যোগ্য ও জবাবদিহিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে আবাসন, খাবার, পরিবহনসহ নিত্যদিনের সমস্যাগুলো সমাধান সহজ হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারা চান প্রার্থীরা নির্বাচনের আগে যেমনভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে যান, নির্বাচনের পরেও যেন সেই যোগাযোগ অব্যাহত থাকে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরওয়ার উদ্দিন শাকসু নির্বাচন নিয়ে গত মঙ্গলবার বলেন, শাকসুর ভোটের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। ৩-৪ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, আর ভোট নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অথবা ২০ তারিখের পর হবে।
পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর আমরা শাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করি, শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ ও নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।’